০৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশ বাহিনীতে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা  দুটোই বেড়েছে

 

 

 

➢বিভিন্ন পদবির ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ সংযোজন
➢তিন পদে এক লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে নিয়োগ
➢এন্টি টেররিজম ইউনিট, শিল্পাঞ্চল ও ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন

 

 

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জনগণের পুলিশ’ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের অন্যতম অনুষঙ্গ জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনে কাজ করছে বর্তমান সরকার। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার পূর্বশর্ত স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যাপক উন্নয়নমূলক ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নতুন পদ সংযোজন ও নিয়োগ, একাধিক বিশেষ ইউনিট গঠনসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে এ সময়ে।
১৫ বছরের সাফল্য নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন পুলিশের উন্নয়নের বিষয়টি শুধুমাত্র পুলিশের জনবল বৃদ্ধির ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম পুলিশকে আধুনিক ও ভিশন ২০৪১ এর উপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গতানুগতিক বিভিন্ন ইউনিট গঠনের পরিবর্তে বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের নির্দেশনা প্রদান করেন। স্বল্প জনবল নিয়ে অধিক সেবা প্রদানের যে দূরদর্শী ধারণা তিনি দিয়েছেন, তা বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার দ্বার উন্মোচন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ সপ্তাহ-২০১১ এ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির রূপরেখার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। আর সেই নির্দেশনার আলোকেই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি ব্যাপক সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

প্রতিবেদন সূত্রমতে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন পদবির ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ (আউটসোর্সিংসহ) সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কনস্টেবল পদে এক লাখ ৫ হাজার ৯২৫ জন, এসআই (নি.) পদে ১১ হাজার ৫১০ জন ও পুলিশ সার্জেন্ট পদে দুই হাজার ৪৮৪ জনসহ মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০১৭ সালে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়। বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ১০১০ সালে শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠিত হয়।

 

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট : গত ১৫ বছরে রংপুর রেঞ্জ ও রংপুর আরআরএফ (২০১১), ময়মনসিংহ রেঞ্জ (২০১৬), রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট (২০১৭), ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার (২০১২) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (২০১২), ট্যুরিস্ট পুলিশ (২০১৩), নৌ-পুলিশ (২০১৩), গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (২০১৭) গঠিত হওয়ায় অপরাধ সংঘটনে অপরাধীদের বিভিন্নমুখী তৎপরতা রোধ সহজ হয়েছে। পাশাপাশি অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন, দ্রুত, আধুনিক ও মানসম্পন্ন তদন্ত কর্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে।

সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার এবং বর্ধিতকরণ : বাংলাদেশ পুলিশে বিদ্যমান সকল জেলা/ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামোর জনবল বৃদ্ধিপূর্বক সক্ষমতা/অধিক্ষেত্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও সিআইডি, এপিবিএন এবং র‌্যাবের সাংগঠনিক কাঠামোতে কয়েকটি নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ এপিবিএন-এর কাঠামোতে ৪টি নতুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ১২ এপিবিএন-(২০১৬ সাল), ১৩ এপিবিএন (এয়ারপোর্ট)-(২০১৮ সাল), ১৪ এপিএবন-(২০১৮ সাল) এবং ১৬ এপিবএন- (২০১৯ সাল) সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও ২টি সিকিউরিটি ও প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ২০১১ সালে সংযোজিত হয়েছে। সিআইডি’র কাঠামোতে সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন- (২০১৮ সাল)। র‌্যাবের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩টি নতুন র‌্যাব ব্যাটালিয়ন সংযোজন (র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাব-১৪ ব্যাটালিয়ন-২০১৩ সাল এবং র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ন-২০২১ সাল)।

 

 

 

থানা, তদন্তকেন্দ্র ও ফাঁড়ি স্থাপন : দেশে ৬৪টি নতুন থানা (১টি হাইওয়ে থানাসহ), ৯৭টি তদন্তকেন্দ্র এবং ১টি ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। মেট্রোরেল নিরাপত্তার জন্য পৃথক ২৩১টি পদ সৃজন করা হয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহের জন্য ১৮ এপিবিএন, রাঙ্গামাটি গঠন করা হয়েছে এবং ৫২৯টি পদ সৃজন করা হয়েছে।

 

 

অন্যান্য কার্যক্রম : এসআই/সার্জেন্ট পদকে ৩য় শ্রেণির পদ হতে ২য় শ্রেণিতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে ২য় শ্রেণির পদ হতে ১ম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ২টি অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) পদকে অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) পদে উন্নীত করা হয়েছে (২০১৩ সাল)। ২৫৩টি সিনিয়র এএসপি’র পদ বিলুপ্ত করে ২৫৩টি অতিরিক্ত এসপি’র পদ সৃজন করা হয়েছে (২০১৮ সাল)। ২১৫টি অতিরিক্ত এসপি’র পদ বিলুপ্ত করে ২১৫টি এসপি পদ সৃজন করা হয়েছে (২০২০ সাল)। ২০টি এসপি এবং ১৫৮টি এএসপি’র পদ বিলুপ্ত করে ৪টি অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২), ১৮টি ডিআইজি, ৮৮টি অতিরিক্ত ডিআইজি, ২০টি এসপি এবং ৮৬টি অতিরিক্ত এসপিসহ মোট ১৭৮টি পদ সৃজন করা হয়েছে (২০২১ সাল)। আইজিপি র‌্যাংকব্যাজ উন্নীত করণ এবং ২০১২ সালে আইজিপি’র র‌্যাংক ব্যাজকে উন্নীত করে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত সম্মানকে আবারো ফিরিয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকার।

 

পুলিশ সদস্যদের বীরত্ব, সাহসিকতা, সৃজনশীল ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতি প্রদান : বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বীরত্ব, সাহসিকতা, সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর পুলিশ পদক (বিপিএম/পিপিএম/ বিপিএম-সেবা/ পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হয়ে থাকে। পূর্বে পদকের সংখ্যা ছিল ৯০টি। পরবর্তীতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে সরকারি আদেশ জারিকরণের মাধ্যমে পদক সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১১৫ তে উন্নীত করা হয়েছে।

 

 

লজিস্টিকস : বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের পোশাক সামগ্রী প্রাপ্যতা বর্ধিত করে আনুমানিক ৭১ (একাত্তর)টি আইটেম সংশোধন/সংযোজন করা হয়েছে। শীতকালে অতিরিক্ত একটি ফুলহাতা শার্ট প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অধীন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিগত বছরে ২টি হেলিকপটার ক্রয় করা হয়েছে; যা বর্তমানে জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ অন্যান্য অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনায় রাশিয়ার জেএইচসি হেলিকপ্টারস হতে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ক্রয়তব্য দুটি এম১১৭১এ২ হেলিকপটার ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশ পুলিশে সংযুক্ত হবে। বাংলাদেশ পুলিশে এভিয়েশন হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে।

 

 

সক্ষমতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক ২০০৯ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২,৭৬০টি পিকআপ, ৫২৪টি জিপ, ৩৫৪টি ট্রাক, ১৩টি এপিসি ও ১৭৮টি জলযানসহ অন্যান্য আধুনিক, যুগোপযোগী উন্নতমানের সর্বমোট ৪৭০০টি বিভিন্ন প্রকার যানবাহন এবং জলযান ক্রয় করে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৭৬৩৪টি মোটরসাইকেল ক্রয়পূর্বক পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

 

২০০৯ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের নতুন নতুন ইউনিট গঠন, জনবল বৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহতকরণসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন জননিরাপত্তা সামগ্রীসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে।

 

আর্মস অ্যান্ড অ্যামুনিশন : পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র যুগোপযোগী করার জন্য মান প্রমিতকরণ করা হয়েছে। পূর্বে ব্যবহৃত .৩০৩ রাইফেলের পরিবর্তে বর্তমানে ৭.৬২ এমএম রাইফেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনী সদস্যদের ব্যবহারের জন্য আধুনিক মানের ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যক্তি নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ব্যক্তি নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের জন্য আধুনিক মানের ব্যক্তি নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয়পূর্বক সরবরাহ করা হচ্ছে, যার ফলে পুলিশ বাহিনীর দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজে দক্ষতা ও সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ডিজিটালাইজেশন : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নয়নের সহায়ক বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটের নতুন সংস্করণ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ১৩৫০টি অফিসে নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি ব্যাকবোন স্থাপন ও বিপিএন কনফিগারেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে স্থাপিত, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য টায়ার-৩ মানসম্পন্ন ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল

 

পুলিশিং নিশ্চিতকল্পে উক্ত ডাটা সেন্টারে ১০৫ টি এ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং করা হয়েছে।
পুলিশ কর্তৃক অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সিস্টেম সেবা চালু করা হয়। যে কোন নাগরিক অনলাইনে এজন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনকৃত তথ্য যাচাই বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

 

ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন অ্যান্ড ফাইন পেমেন্ট সেবাটি চালু করা হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জরিমানা পরিশোধ করার ফলে ট্রাফিক পুলিশের কাজে দক্ষতা, গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেবার মান উন্নত হয়েছে। সেবাটি পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সকল জেলা/মেট্রোপলিটন এলাকায় চালু করা হচ্ছে। বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য সিআইএমএস সফটওয়ার চালু করা হয়েছে। অপরাধ দমন ও উদঘাটন বিষয়ক পুলিশি কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটসমূহে ওয়েববেইজড ভার্সন সিডিএমএস নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ক্রাইম অ্যানালাইসিস শাখা হতে পরিচালনা করা হয়। সিডিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে মামলার এফআইআর হতে শুরু করে তদন্তের ফলাফল পর্যন্ত সকল কার্যক্রম ডিজিটালভাবে সম্পাদন করা হয়। সিডিএমএস সফটওয়্যারের ২০০৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৬,২৬,৬৬৮টি মামলা এবং ১৯,২৩,৮০১ জনের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তথ্য সিডিএমএস সফটওয়্যারে সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে সিডিএমএস সফটওয়্যারের ইউজার সংখ্যা ৩২,৪৬৭ জন। পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গত ২১ জুন ২০২২ তারিখ হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মোট ১৪,৫৯,৪৮৩ টি অনলাইন জিডির আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ পুলিশে বিদ্যমান পিআইএমএস-এর আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পিআইএমএসের ১৯টি মউিউল ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুলিশের সকল সদস্যের সকল প্রকার তথ্য চাকরিজীবীগণের শুরু থেকে অবসরের পরেও হালনাগাদ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ পুলিশ ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর ডেভেলপমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সিস্টেম টিকে পাইলটিংয়ের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহে ও নির্বাচিত কয়েকটি ইউনিটে সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণভাবে চালু হলে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি কার্যকর ওআরপি সিস্টেম গড়ে উঠবে।
নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক : বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সারা দেশে ১৪৯টি থানায় ৩.৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল ২০২২ প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশে একযোগে অনলাইনে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক উদ্বোধন করেন। এ ডেস্ক থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি : গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার ফলে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট আনুমানিক ৪৩৩.২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন ও গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৬৪টি নতুন অর্থনৈতিক কোড সৃজন করা হয়েছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছর বাজেট ৩৩,৩১২,৯২১ টাকা। যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ হয়েছে ১৭৭,৬৫২,০৫৫ টাকা।
সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন : নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার ওয়ার্ল্ড গড়ে তুলতে পুলিশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যাপস চালু করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, জনগণকে সহজে পুলিশি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

 

অবকাঠামো উন্নয়ন : ডেভেলপমেন্ট ও বাস্তবায়ন-উন্নয়ন শাখা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশাল কর্মযজ্ঞপূর্ণ একটি শাখা। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অত্র শাখার প্রধান কাজ। পুলিশ সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা এবং দাপ্তরিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য থানা, তদন্ত কেন্দ্র, আউট পোস্ট, অস্ত্রাগার, ট্রেনিং স্কুল, পুলিশ লাইন্স ইত্যাদি নির্মাণ, যানবাহন ক্রয়, হাসপাতাল নির্মাণ ও আধুনিকায়নসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড এ শাখা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’র অর্থায়নে পুলিশ বিভাগের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পসমূহ সাধারণত নিম্নোক্ত ক্যাটাগরির যেমন-১) দাপ্তরিক অবকাঠামো ২) প্রশিক্ষণ অবকাঠামো ৩) আবাসন অবকাঠামো ৪) আভিযানিক সক্ষমতা ৫) চিকিৎসা সুবিধা ৬) ক্রীড়া সংক্রান্ত অবকাঠামো ও ৭) বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প।

 

২০০৯ সাল হতে ২০২৩ পর্যন্ত সমাপ্ত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন ভবন ও অবকাঠামো এবং ক্রয়কৃত যানবাহনের পরিসংখ্যান : থানা ভবন ২১১টি, ব্যারাক ২২টি, তদন্ত কেন্দ্র ৬০টি, অস্ত্রাগার ভবন ১৯টি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ৯টি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় সম্প্রসারণ ৪৫টি, সার্কেল এসপি অফিস-কাম বাসভবন ২৪টি, হাইওয়ে আউটপোস্ট ৫০টি, নৌপুলিশ ফাঁড়ি ১৯টি, ডরমিটরি ১৩টি, মসজিদ ভবন নির্মাণাধীন ৬টি, আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান ৩৭টি, যানবাহন ক্রয় ২৯১৪টি, প্রশাসনিক ভবন ৫টি, র‌্যাব কমপ্লেক্স ৭টি, ট্রেনিং সেন্টারের আধুনিকায়ন/উন্নয়ন ৬টি, আইটি সেন্টার স্থাপন ১টি, সাইবার ক্রাইম সেন্টার স্থাপন ১টি, ট্রেনিং স্কুল ১টি, পুলিশ লাইনস নির্মাণ কাজ চলমান ৬টি, মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণাধীন ৬টি এবং মডেল থানা ভবন ৯৫টি।

 

 

আধুনিকায়ন : ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের ৫০টি থানার হাজতখানা আধুনিকায়ন করা হয়েছে এবং এই ধারা চলমান রয়েছে। ২০১৮ সাল হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন থানার প্রায় ২০০টি ক্যাম্প আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন বহুতল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনায় প্রায় ৭ হাজারটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্থাপন/ রিফিল করে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ পুলিশের হাসপাতালসমূহ মেরামত ও সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় হাসপাতালসহ সকল বিভাগীয় হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।

 

 

রেশন সুবিধা বৃদ্ধি : আগের ৬০% রেশন সুবিধার পরিবর্তে ২০০৯ সাল হতে রেশন নীতিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত সকল সদস্যের সমহারে ১০০% রেশন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
পেনশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সংক্রান্ত : বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ এবং গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতাজনিত আর্থিক অনুদান প্রদান নীতিমালা ২০২০ (সংশোধিত) অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের সদস্য ৮ টাকা ও গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতাজনিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ৪ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রাপ্য হবেন।

 

বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সাফল্য : এন্টি টেররিজম ইউনিট : ২০১৭ সালে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠনের ফলে বৈশ্বিক সমস্যা জঙ্গিবাদকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এন্টি টেররিজম ইউনিট ও সিটিটিসির সাহসী কার্যক্রমের ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা, অপরাধ, জঙ্গি ও উগ্রপন্থা নিয়ন্ত্রণে এন্টি টেররিজম ইউনিটের ইন্টেলিজেন্স উইং এ পর্যন্ত ৭৪টি অভিযান, ৩১ টি মামলা রুজু, ১০০ জন জঙ্গি আসামি এবং ১৫ জন্য অন্যান্য আসামিসহ সর্বমোট ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠন : ২০১০ সালে শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠনের ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে শৃঙ্খলা নিশ্চিতসহ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফল হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন : ‘পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যমন্ডিত পরিবেশ’ এই ভিশন নিয়ে ২০১৩ সালে ট্যুরিস্ট পুলিশ নামে বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠিত হয়।
সিআইডি : আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) মাধ্যমে বিভিন্ন মামলা অনুসন্ধান ও নিষ্পত্তিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

 

সক্ষমতা বৃদ্ধি : সাইবার পুলিশ সেন্টার (ঈচঈ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন (ঈওঈ) ও সাইবার ট্রেনিং সেন্টার (ঈঞঈ)-এর কার্যক্রম চালু করা হয়েছেন ও ‘ভিফ্যান’ সফটওয়ার নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডাটাবেজের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপের সাহায্যে ডাটাবেজ হতে নির্ভুলভাবে ব্যক্তি শনাক্ত কার্যক্রম চালু হয়েছে।
জাতিসংঘে পুলিশ : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একযুগে প্রেরিত সদস্য সংখ্যা-১৫,৯০৮ জন; মিশনে অংশগ্রহণকারী নারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা-১৮০০ জন। মিশনে ল্যাংগুয়েজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা-১৯১৬ জন।

 

ফর্মড পুলিশ ইউনিটের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ-৩ হাজার ৫৯ কোটি ৫ লাখ ৩৫হাজার ৬০৬ টাকা।
রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার : মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রদান করা হয়েছে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১১, পলওয়েলকে জাতীয় সমবায় পদক ২০১৯, মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নৌ পুলিশকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২১ প্রদান করা হয়েছে।

 

জাতিসংঘের অধীনে ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি-২০১৮তে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক উন্নয়নমূলক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সেবাটি ডিজিটাল সেবা ক্যাটাগরিতে ডঝওঝ চৎরুব-২০১৮ অর্জন করে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে ডিজিটাল সিগনেচার সংযুক্ত করার মাধ্যমে পেপারলেস সার্টিফিকেট প্রদানের মতো ইনোভেটিভ আইডিয়া চালু করায় পুলিশকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩’ পুরস্কার প্রদান।

 

 

বিশেষ ভাতা প্রদান : পুলিশ বিভাগে কর্মরত ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণের জন্য বাৎসরিক বিশেষ ভাতা চালু করা হয়। ২০১৮ হতে এক মাসের সমপরিমাণ অর্থ প্রতি অর্থবছরের শেষ মাসে বিশেষ ভাতা হিসেবে প্রাপ্য হবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাসিক মূল বেতনের ৭০% হারে ঝুঁকি ভাতা প্রদান (২০১১ সাল) করা হয়। বীরত্বপূর্ণ/সাহসিকতার জন্য পদকপ্রাপ্তদের আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে (২০১২ সাল)। বাংলাদেশ পুলিশের সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মৌলিক প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পরীক্ষার, বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষার, মাঠ বিষয়ক পরীক্ষার ও পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষকগণের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে (২০১৯ সাল)। বহিরাগত ক্যাডেট এসআই ও টিআরসিদের মাসিক খোরাকী/রেশন ভাতা এবং ইন্টানি/শিক্ষানবিস ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের পথ্যের হার ১৫০ টাকা হতে ১৭৫ টাকায় উন্নীত করা হয়।

 

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ : মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে যা গত ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি।

 

 

উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন : বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শুধুমাত্র নারী পুলিশদের নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০০৯ সালে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে স্বতন্ত্র ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কাজের পরিধি আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নারীদের ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার নারী ও শিশু ভিকটিমদের সাময়িক আশ্রয় প্রদান করে থাকে।

 

পৃথক গাড়ী এবং জনবল বরাদ্দের মাধ্যমে ২০২০ সালে উদ্বোধনের পর থেকে কুইক রেসপন্স টিম ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের উদ্ধারসহ সকল সেবা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টায়ই প্রস্তুত। কুইক রেসপন্স টিম উদ্ধারকৃত নারী ও শিশুদের উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে পৌঁছে দেয়াসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা যেমন- চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এবং আইনী পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
ছাদবাগান : অফিসের ছাদে একটি মনোরম ছাদবাগান গড়ে তোলা হয়েছে। যা জাতীয় স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১’ অর্জন করে। বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটের মধ্যে ডিএমপি প্রথম এ পুরস্কার অর্জন করেছে।

 

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ : জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ও কারিগরি সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিগত ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে ৩০টি লাইনে ১০০ জনবলের মাধ্যমে জাতীয় জরুরি সেবার কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত সেন্টারটি শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পরবর্তীতে সার্ভিস সেন্টারটি সম্প্রসারণ করে ১০০টি লাইনে প্রায় ৪৫০ জন বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের জনগণের জরুরি সেবা সফলতার সাথে প্রদান করে যাচ্ছে।

 

সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে ৮ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে ৯৯৯কে পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ পুলিশকে হস্তান্তর করে। এই আলোকে বিটিআরসি বাংলাদেশ পুলিশকে তাদের ব্যবহৃত ১০০ শর্টকোড এর পরিবর্তে ৯৯৯ শর্টকোড বরাদ্দ দেয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

পুলিশ বাহিনীতে আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা  দুটোই বেড়েছে

আপডেট সময় : ০১:৪০:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ এপ্রিল ২০২৪

 

 

 

➢বিভিন্ন পদবির ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ সংযোজন
➢তিন পদে এক লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে নিয়োগ
➢এন্টি টেররিজম ইউনিট, শিল্পাঞ্চল ও ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন

 

 

 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জনগণের পুলিশ’ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন দর্শনের অন্যতম অনুষঙ্গ জনবান্ধব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গঠনে কাজ করছে বর্তমান সরকার। একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবন-জীবিকা সুরক্ষার পূর্বশর্ত স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এ ধারাবাহিকতায় গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের ব্যাপক উন্নয়নমূলক ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন নতুন পদ সংযোজন ও নিয়োগ, একাধিক বিশেষ ইউনিট গঠনসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়েছে এ সময়ে।
১৫ বছরের সাফল্য নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন পুলিশের উন্নয়নের বিষয়টি শুধুমাত্র পুলিশের জনবল বৃদ্ধির ধারণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম পুলিশকে আধুনিক ও ভিশন ২০৪১ এর উপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গতানুগতিক বিভিন্ন ইউনিট গঠনের পরিবর্তে বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের নির্দেশনা প্রদান করেন। স্বল্প জনবল নিয়ে অধিক সেবা প্রদানের যে দূরদর্শী ধারণা তিনি দিয়েছেন, তা বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার দ্বার উন্মোচন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ সপ্তাহ-২০১১ এ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির রূপরেখার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা ঘোষণা ও বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। আর সেই নির্দেশনার আলোকেই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়নের পাশাপাশি ব্যাপক সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

 

প্রতিবেদন সূত্রমতে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন পদবির ৮৩ হাজার ৭০টি নতুন পদ (আউটসোর্সিংসহ) সংযোজন করা হয়েছে। যার ফলে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অপারেশনাল কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে।
২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কনস্টেবল পদে এক লাখ ৫ হাজার ৯২৫ জন, এসআই (নি.) পদে ১১ হাজার ৫১০ জন ও পুলিশ সার্জেন্ট পদে দুই হাজার ৪৮৪ জনসহ মোট এক লাখ ১৯ হাজার ৯১৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে পদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০১৭ সালে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠন করা হয়। বর্তমান সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ১০১০ সালে শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠিত হয়।

 

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট : গত ১৫ বছরে রংপুর রেঞ্জ ও রংপুর আরআরএফ (২০১১), ময়মনসিংহ রেঞ্জ (২০১৬), রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট (২০১৭), ৩০টি ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার (২০১২) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (২০১২), ট্যুরিস্ট পুলিশ (২০১৩), নৌ-পুলিশ (২০১৩), গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (২০১৭) গঠিত হওয়ায় অপরাধ সংঘটনে অপরাধীদের বিভিন্নমুখী তৎপরতা রোধ সহজ হয়েছে। পাশাপাশি অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য উদঘাটন, দ্রুত, আধুনিক ও মানসম্পন্ন তদন্ত কর্যক্রম সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বেড়েছে।

সাংগঠনিক কাঠামো সংস্কার এবং বর্ধিতকরণ : বাংলাদেশ পুলিশে বিদ্যমান সকল জেলা/ইউনিটের সাংগঠনিক কাঠামোর জনবল বৃদ্ধিপূর্বক সক্ষমতা/অধিক্ষেত্র বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও সিআইডি, এপিবিএন এবং র‌্যাবের সাংগঠনিক কাঠামোতে কয়েকটি নতুন ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ এপিবিএন-এর কাঠামোতে ৪টি নতুন আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ১২ এপিবিএন-(২০১৬ সাল), ১৩ এপিবিএন (এয়ারপোর্ট)-(২০১৮ সাল), ১৪ এপিএবন-(২০১৮ সাল) এবং ১৬ এপিবএন- (২০১৯ সাল) সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও ২টি সিকিউরিটি ও প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন ২০১১ সালে সংযোজিত হয়েছে। সিআইডি’র কাঠামোতে সাইবার পুলিশ সেন্টার স্থাপন- (২০১৮ সাল)। র‌্যাবের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৩টি নতুন র‌্যাব ব্যাটালিয়ন সংযোজন (র‌্যাব-১৩ ব্যাটালিয়ন ও র‌্যাব-১৪ ব্যাটালিয়ন-২০১৩ সাল এবং র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়ন-২০২১ সাল)।

 

 

 

থানা, তদন্তকেন্দ্র ও ফাঁড়ি স্থাপন : দেশে ৬৪টি নতুন থানা (১টি হাইওয়ে থানাসহ), ৯৭টি তদন্তকেন্দ্র এবং ১টি ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। মেট্রোরেল নিরাপত্তার জন্য পৃথক ২৩১টি পদ সৃজন করা হয়েছে। পার্বত্য জেলাসমূহের জন্য ১৮ এপিবিএন, রাঙ্গামাটি গঠন করা হয়েছে এবং ৫২৯টি পদ সৃজন করা হয়েছে।

 

 

অন্যান্য কার্যক্রম : এসআই/সার্জেন্ট পদকে ৩য় শ্রেণির পদ হতে ২য় শ্রেণিতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে ২য় শ্রেণির পদ হতে ১ম শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। ২টি অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২) পদকে অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-১) পদে উন্নীত করা হয়েছে (২০১৩ সাল)। ২৫৩টি সিনিয়র এএসপি’র পদ বিলুপ্ত করে ২৫৩টি অতিরিক্ত এসপি’র পদ সৃজন করা হয়েছে (২০১৮ সাল)। ২১৫টি অতিরিক্ত এসপি’র পদ বিলুপ্ত করে ২১৫টি এসপি পদ সৃজন করা হয়েছে (২০২০ সাল)। ২০টি এসপি এবং ১৫৮টি এএসপি’র পদ বিলুপ্ত করে ৪টি অতিরিক্ত আইজি (গ্রেড-২), ১৮টি ডিআইজি, ৮৮টি অতিরিক্ত ডিআইজি, ২০টি এসপি এবং ৮৬টি অতিরিক্ত এসপিসহ মোট ১৭৮টি পদ সৃজন করা হয়েছে (২০২১ সাল)। আইজিপি র‌্যাংকব্যাজ উন্নীত করণ এবং ২০১২ সালে আইজিপি’র র‌্যাংক ব্যাজকে উন্নীত করে বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত সম্মানকে আবারো ফিরিয়ে দিয়েছে বর্তমান সরকার।

 

পুলিশ সদস্যদের বীরত্ব, সাহসিকতা, সৃজনশীল ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতি প্রদান : বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের বীরত্ব, সাহসিকতা, সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক ও প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর পুলিশ পদক (বিপিএম/পিপিএম/ বিপিএম-সেবা/ পিপিএম-সেবা) প্রদান করা হয়ে থাকে। পূর্বে পদকের সংখ্যা ছিল ৯০টি। পরবর্তীতে গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে সরকারি আদেশ জারিকরণের মাধ্যমে পদক সংখ্যা বৃদ্ধি করে ১১৫ তে উন্নীত করা হয়েছে।

 

 

লজিস্টিকস : বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের পোশাক সামগ্রী প্রাপ্যতা বর্ধিত করে আনুমানিক ৭১ (একাত্তর)টি আইটেম সংশোধন/সংযোজন করা হয়েছে। শীতকালে অতিরিক্ত একটি ফুলহাতা শার্ট প্রদান করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের অধীন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের কার্যক্রমের গতিশীলতা আনয়নের লক্ষ্যে বিগত বছরে ২টি হেলিকপটার ক্রয় করা হয়েছে; যা বর্তমানে জঙ্গিবাদ নির্মূলসহ অন্যান্য অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহ নির্দেশনায় রাশিয়ার জেএইচসি হেলিকপ্টারস হতে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ক্রয়তব্য দুটি এম১১৭১এ২ হেলিকপটার ২০২৩ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বাংলাদেশ পুলিশে সংযুক্ত হবে। বাংলাদেশ পুলিশে এভিয়েশন হেলিকপ্টার সংযোজন করা হয়েছে।

 

 

সক্ষমতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কর্তৃক ২০০৯ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২,৭৬০টি পিকআপ, ৫২৪টি জিপ, ৩৫৪টি ট্রাক, ১৩টি এপিসি ও ১৭৮টি জলযানসহ অন্যান্য আধুনিক, যুগোপযোগী উন্নতমানের সর্বমোট ৪৭০০টি বিভিন্ন প্রকার যানবাহন এবং জলযান ক্রয় করে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৭৬৩৪টি মোটরসাইকেল ক্রয়পূর্বক পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।

 

২০০৯ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের নতুন নতুন ইউনিট গঠন, জনবল বৃদ্ধি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহতকরণসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন জননিরাপত্তা সামগ্রীসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয় করা হয়েছে।

 

আর্মস অ্যান্ড অ্যামুনিশন : পুলিশ বাহিনীকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র যুগোপযোগী করার জন্য মান প্রমিতকরণ করা হয়েছে। পূর্বে ব্যবহৃত .৩০৩ রাইফেলের পরিবর্তে বর্তমানে ৭.৬২ এমএম রাইফেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনী সদস্যদের ব্যবহারের জন্য আধুনিক মানের ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যক্তি নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয় কার্যক্রম গ্রহণ এবং সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ব্যক্তি নিরাপত্তার কাজে ব্যবহারের জন্য আধুনিক মানের ব্যক্তি নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয়পূর্বক সরবরাহ করা হচ্ছে, যার ফলে পুলিশ বাহিনীর দৈনন্দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন অপারেশনাল কাজে দক্ষতা ও সক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

ডিজিটালাইজেশন : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নয়নের সহায়ক বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটের নতুন সংস্করণ চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের ১৩৫০টি অফিসে নিজস্ব ফাইবার নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি ব্যাকবোন স্থাপন ও বিপিএন কনফিগারেশনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের জন্য উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেন্দ্রীয়ভাবে স্থাপিত, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য টায়ার-৩ মানসম্পন্ন ডাটা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল

 

পুলিশিং নিশ্চিতকল্পে উক্ত ডাটা সেন্টারে ১০৫ টি এ্যাপ্লিকেশন হোস্টিং করা হয়েছে।
পুলিশ কর্তৃক অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সিস্টেম সেবা চালু করা হয়। যে কোন নাগরিক অনলাইনে এজন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনকৃত তথ্য যাচাই বাছাই শেষে দ্রুততম সময়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

 

ই-ট্রাফিক প্রসিকিউশন অ্যান্ড ফাইন পেমেন্ট সেবাটি চালু করা হয়েছে। অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জরিমানা পরিশোধ করার ফলে ট্রাফিক পুলিশের কাজে দক্ষতা, গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেবার মান উন্নত হয়েছে। সেবাটি পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের সকল জেলা/মেট্রোপলিটন এলাকায় চালু করা হচ্ছে। বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়াদের তথ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণের জন্য সিআইএমএস সফটওয়ার চালু করা হয়েছে। অপরাধ দমন ও উদঘাটন বিষয়ক পুলিশি কার্যক্রমকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশের আওতাধীন বিভিন্ন ইউনিটসমূহে ওয়েববেইজড ভার্সন সিডিএমএস নামে একটি সফটওয়্যার ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ক্রাইম অ্যানালাইসিস শাখা হতে পরিচালনা করা হয়। সিডিএমএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে মামলার এফআইআর হতে শুরু করে তদন্তের ফলাফল পর্যন্ত সকল কার্যক্রম ডিজিটালভাবে সম্পাদন করা হয়। সিডিএমএস সফটওয়্যারের ২০০৯ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২৬,২৬,৬৬৮টি মামলা এবং ১৯,২৩,৮০১ জনের গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তথ্য সিডিএমএস সফটওয়্যারে সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে সিডিএমএস সফটওয়্যারের ইউজার সংখ্যা ৩২,৪৬৭ জন। পুলিশি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে সারা দেশে অনলাইন জিডি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। গত ২১ জুন ২০২২ তারিখ হতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মোট ১৪,৫৯,৪৮৩ টি অনলাইন জিডির আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে।

 

বাংলাদেশ পুলিশে বিদ্যমান পিআইএমএস-এর আধুনিকায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী পিআইএমএসের ১৯টি মউিউল ডেভেলপ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুলিশের সকল সদস্যের সকল প্রকার তথ্য চাকরিজীবীগণের শুরু থেকে অবসরের পরেও হালনাগাদ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। পুলিশের সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকল্পে বাংলাদেশ পুলিশ ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর ডেভেলপমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে সিস্টেম টিকে পাইলটিংয়ের জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর সংশ্লিষ্ট শাখাসমূহে ও নির্বাচিত কয়েকটি ইউনিটে সফলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সম্পূর্ণভাবে চালু হলে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য একটি কার্যকর ওআরপি সিস্টেম গড়ে উঠবে।
নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক : বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সারা দেশে ১৪৯টি থানায় ৩.৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল ২০২২ প্রধানমন্ত্রী সারা বাংলাদেশে একযোগে অনলাইনে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক উদ্বোধন করেন। এ ডেস্ক থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

 

বাংলাদেশ পুলিশের বাজেট বৃদ্ধি : গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টা ও আন্তরিকতার ফলে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট আনুমানিক ৪৩৩.২৮% বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনয়ন ও গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রায় ৬৪টি নতুন অর্থনৈতিক কোড সৃজন করা হয়েছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছর বাজেট ৩৩,৩১২,৯২১ টাকা। যা ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ হয়েছে ১৭৭,৬৫২,০৫৫ টাকা।
সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন : নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার ওয়ার্ল্ড গড়ে তুলতে পুলিশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন অ্যাপস চালু করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, জনগণকে সহজে পুলিশি সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

 

অবকাঠামো উন্নয়ন : ডেভেলপমেন্ট ও বাস্তবায়ন-উন্নয়ন শাখা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বিশাল কর্মযজ্ঞপূর্ণ একটি শাখা। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বল্প মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন অত্র শাখার প্রধান কাজ। পুলিশ সদস্যদের আবাসন ব্যবস্থা এবং দাপ্তরিক ও অন্যান্য কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য থানা, তদন্ত কেন্দ্র, আউট পোস্ট, অস্ত্রাগার, ট্রেনিং স্কুল, পুলিশ লাইন্স ইত্যাদি নির্মাণ, যানবাহন ক্রয়, হাসপাতাল নির্মাণ ও আধুনিকায়নসহ নানাবিধ কর্মকাণ্ড এ শাখা কর্তৃক পরিচালিত হয়ে থাকে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’র অর্থায়নে পুলিশ বিভাগের প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করা হয়। প্রকল্পসমূহ সাধারণত নিম্নোক্ত ক্যাটাগরির যেমন-১) দাপ্তরিক অবকাঠামো ২) প্রশিক্ষণ অবকাঠামো ৩) আবাসন অবকাঠামো ৪) আভিযানিক সক্ষমতা ৫) চিকিৎসা সুবিধা ৬) ক্রীড়া সংক্রান্ত অবকাঠামো ও ৭) বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রকল্প।

 

২০০৯ সাল হতে ২০২৩ পর্যন্ত সমাপ্ত ও চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন ভবন ও অবকাঠামো এবং ক্রয়কৃত যানবাহনের পরিসংখ্যান : থানা ভবন ২১১টি, ব্যারাক ২২টি, তদন্ত কেন্দ্র ৬০টি, অস্ত্রাগার ভবন ১৯টি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় ৯টি, পুলিশ সুপারের কার্যালয় সম্প্রসারণ ৪৫টি, সার্কেল এসপি অফিস-কাম বাসভবন ২৪টি, হাইওয়ে আউটপোস্ট ৫০টি, নৌপুলিশ ফাঁড়ি ১৯টি, ডরমিটরি ১৩টি, মসজিদ ভবন নির্মাণাধীন ৬টি, আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান ৩৭টি, যানবাহন ক্রয় ২৯১৪টি, প্রশাসনিক ভবন ৫টি, র‌্যাব কমপ্লেক্স ৭টি, ট্রেনিং সেন্টারের আধুনিকায়ন/উন্নয়ন ৬টি, আইটি সেন্টার স্থাপন ১টি, সাইবার ক্রাইম সেন্টার স্থাপন ১টি, ট্রেনিং স্কুল ১টি, পুলিশ লাইনস নির্মাণ কাজ চলমান ৬টি, মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণাধীন ৬টি এবং মডেল থানা ভবন ৯৫টি।

 

 

আধুনিকায়ন : ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের ৫০টি থানার হাজতখানা আধুনিকায়ন করা হয়েছে এবং এই ধারা চলমান রয়েছে। ২০১৮ সাল হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন থানার প্রায় ২০০টি ক্যাম্প আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন বহুতল ভবনসহ অন্যান্য স্থাপনায় প্রায় ৭ হাজারটি ফায়ার এক্সটিংগুইশার স্থাপন/ রিফিল করে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ পুলিশের হাসপাতালসমূহ মেরামত ও সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ পুলিশের কেন্দ্রীয় হাসপাতালসহ সকল বিভাগীয় হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়েছে।

 

 

রেশন সুবিধা বৃদ্ধি : আগের ৬০% রেশন সুবিধার পরিবর্তে ২০০৯ সাল হতে রেশন নীতিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী বাংলাদেশ পুলিশে কর্মরত সকল সদস্যের সমহারে ১০০% রেশন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
পেনশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সংক্রান্ত : বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ এবং গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতাজনিত আর্থিক অনুদান প্রদান নীতিমালা ২০২০ (সংশোধিত) অনুযায়ী বেসামরিক প্রশাসনে চাকরিরত অবস্থায় কোনো সরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের সদস্য ৮ টাকা ও গুরুতর আহত হয়ে স্থায়ী অক্ষমতাজনিত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী ৪ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রাপ্য হবেন।

 

বিশেষায়িত ইউনিটসমূহের সাফল্য : এন্টি টেররিজম ইউনিট : ২০১৭ সালে এন্টি টেররিজম ইউনিট গঠনের ফলে বৈশ্বিক সমস্যা জঙ্গিবাদকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে বাংলাদেশ পুলিশ। এন্টি টেররিজম ইউনিট ও সিটিটিসির সাহসী কার্যক্রমের ফলে দেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা, অপরাধ, জঙ্গি ও উগ্রপন্থা নিয়ন্ত্রণে এন্টি টেররিজম ইউনিটের ইন্টেলিজেন্স উইং এ পর্যন্ত ৭৪টি অভিযান, ৩১ টি মামলা রুজু, ১০০ জন জঙ্গি আসামি এবং ১৫ জন্য অন্যান্য আসামিসহ সর্বমোট ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠন : ২০১০ সালে শিল্পাঞ্চল পুলিশ গঠনের ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টরে শৃঙ্খলা নিশ্চিতসহ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে সরাসরি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফল হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ গঠন : ‘পর্যটকদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত বাংলাদেশের মনোরম প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যমন্ডিত পরিবেশ’ এই ভিশন নিয়ে ২০১৩ সালে ট্যুরিস্ট পুলিশ নামে বাংলাদেশ পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠিত হয়।
সিআইডি : আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) মাধ্যমে বিভিন্ন মামলা অনুসন্ধান ও নিষ্পত্তিতে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

 

সক্ষমতা বৃদ্ধি : সাইবার পুলিশ সেন্টার (ঈচঈ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন (ঈওঈ) ও সাইবার ট্রেনিং সেন্টার (ঈঞঈ)-এর কার্যক্রম চালু করা হয়েছেন ও ‘ভিফ্যান’ সফটওয়ার নির্বাচন কমিশনের এনআইডি ডাটাবেজের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে আঙ্গুলের ছাপের সাহায্যে ডাটাবেজ হতে নির্ভুলভাবে ব্যক্তি শনাক্ত কার্যক্রম চালু হয়েছে।
জাতিসংঘে পুলিশ : জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একযুগে প্রেরিত সদস্য সংখ্যা-১৫,৯০৮ জন; মিশনে অংশগ্রহণকারী নারী পুলিশ সদস্য সংখ্যা-১৮০০ জন। মিশনে ল্যাংগুয়েজ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্য সংখ্যা-১৯১৬ জন।

 

ফর্মড পুলিশ ইউনিটের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ-৩ হাজার ৫৯ কোটি ৫ লাখ ৩৫হাজার ৬০৬ টাকা।
রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার : মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে প্রদান করা হয়েছে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০১১, পলওয়েলকে জাতীয় সমবায় পদক ২০১৯, মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নৌ পুলিশকে জাতীয় মৎস্য পদক ২০২১ প্রদান করা হয়েছে।

 

জাতিসংঘের অধীনে ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি-২০১৮তে বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক উন্নয়নমূলক পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সেবাটি ডিজিটাল সেবা ক্যাটাগরিতে ডঝওঝ চৎরুব-২০১৮ অর্জন করে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটে ডিজিটাল সিগনেচার সংযুক্ত করার মাধ্যমে পেপারলেস সার্টিফিকেট প্রদানের মতো ইনোভেটিভ আইডিয়া চালু করায় পুলিশকে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ক্যাটাগরিতে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ পুরস্কার ২০২৩’ পুরস্কার প্রদান।

 

 

বিশেষ ভাতা প্রদান : পুলিশ বিভাগে কর্মরত ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তাগণের জন্য বাৎসরিক বিশেষ ভাতা চালু করা হয়। ২০১৮ হতে এক মাসের সমপরিমাণ অর্থ প্রতি অর্থবছরের শেষ মাসে বিশেষ ভাতা হিসেবে প্রাপ্য হবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কর্মরত পুলিশ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের মাসিক মূল বেতনের ৭০% হারে ঝুঁকি ভাতা প্রদান (২০১১ সাল) করা হয়। বীরত্বপূর্ণ/সাহসিকতার জন্য পদকপ্রাপ্তদের আর্থিক অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে (২০১২ সাল)। বাংলাদেশ পুলিশের সকল প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের মৌলিক প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পরীক্ষার, বিভাগীয় পদোন্নতি পরীক্ষার, মাঠ বিষয়ক পরীক্ষার ও পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত নিয়োগ পরীক্ষার পরীক্ষকগণের ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে (২০১৯ সাল)। বহিরাগত ক্যাডেট এসআই ও টিআরসিদের মাসিক খোরাকী/রেশন ভাতা এবং ইন্টানি/শিক্ষানবিস ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের পথ্যের হার ১৫০ টাকা হতে ১৭৫ টাকায় উন্নীত করা হয়।

 

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ : মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন ‘বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ নির্মাণ করা হয়েছে যা গত ২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমপি।

 

 

উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন : বর্তমান সরকার ২০০৮ সালে সরকার গঠনের পরে নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে শুধুমাত্র নারী পুলিশদের নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ২০০৯ সালে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে স্বতন্ত্র ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের কাজের পরিধি আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন। নারী পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের সমন্বয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য উদ্দেশ্য ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নারীদের ক্ষমতায়ন, নিরাপত্তা ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার নারী ও শিশু ভিকটিমদের সাময়িক আশ্রয় প্রদান করে থাকে।

 

পৃথক গাড়ী এবং জনবল বরাদ্দের মাধ্যমে ২০২০ সালে উদ্বোধনের পর থেকে কুইক রেসপন্স টিম ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের উদ্ধারসহ সকল সেবা নিশ্চিত করতে ২৪ ঘন্টায়ই প্রস্তুত। কুইক রেসপন্স টিম উদ্ধারকৃত নারী ও শিশুদের উদ্ধার করে নিরাপদ হেফাজতে পৌঁছে দেয়াসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা যেমন- চিকিৎসা, কাউন্সেলিং এবং আইনী পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
ছাদবাগান : অফিসের ছাদে একটি মনোরম ছাদবাগান গড়ে তোলা হয়েছে। যা জাতীয় স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২১’ অর্জন করে। বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটের মধ্যে ডিএমপি প্রথম এ পুরস্কার অর্জন করেছে।

 

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ : জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত। আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তি ও কারিগরি সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিগত ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে ৩০টি লাইনে ১০০ জনবলের মাধ্যমে জাতীয় জরুরি সেবার কার্যক্রম শুরু করে। উক্ত সেন্টারটি শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। পরবর্তীতে সার্ভিস সেন্টারটি সম্প্রসারণ করে ১০০টি লাইনে প্রায় ৪৫০ জন বাংলাদেশ পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের জনগণের জরুরি সেবা সফলতার সাথে প্রদান করে যাচ্ছে।

 

সজীব ওয়াজেদ জয়ের নির্দেশে ৮ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে ৯৯৯কে পূর্ণাঙ্গভাবে পরিচালিত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ পুলিশকে হস্তান্তর করে। এই আলোকে বিটিআরসি বাংলাদেশ পুলিশকে তাদের ব্যবহৃত ১০০ শর্টকোড এর পরিবর্তে ৯৯৯ শর্টকোড বরাদ্দ দেয়।