সুইস ক্লাইমেট গ্রুপ আইকিউএয়ারের পর্যবেক্ষণে ২০২৩ সালে ১৩৪ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বাতাস ছিল সবচেয়ে দূষিত। ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থাও ছিল কাছাকাছি। ওই প্রতিবেদনে বিশ্বে সবচেয়ে দূষিত বাতাস ছিল দক্ষিণ এশিয়ায়। গত বছর বিশ্বের ৭৮১২ শহরে গতানুগতিকভাবে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল পিএম ২.৫। পিএম ২.৫ বলতে বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণার পরিমাণ বোঝায়, যার ব্যাস ২.৫ মাইক্রোন। এটি মানব দেহের জন্য অনেক বিপজ্জনক। এ ধরনের কণা বিভিন্ন কারণে বাতাসে মিশতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে- ধূলিঝড় কিংবা দাবানল। এছাড়া মানব সৃষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে কয়লা পোড়ানো ও কৃষিকাজ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, বাতাসে পিএম ২ দশমিক ৫ এর মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি হওয়া উচিত নয়। মাত্র ১০টি দেশ এ প্রতিবেদন মেনে চলে। বিশ্বের সবচেয়ে পরিষ্কার বাতাস পাওয়া যায়- নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও এস্তানিয়াতে। বাংলাদেশে বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রামে দাঁড়িয়েছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত মাইক্রোগ্রামের চেয়ে ১৬ গুণ বেশি। অন্যদিকে পাকিস্তানে বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা রয়েছে ৭৩.৭ মাইক্রোগ্রাম এবং ভারতে ৫৪.৪ মাইক্রোগ্রাম।
বিভিন্ন দেশের বাতাসের মান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার বলছে, বাতাসের গুণগত মান এক শহর থেকে অন্য শহরে ব্যাপক তফাত হতে পারে। ভারতের বিহার রাজ্যের বেগুসরাই এলাকা। এটিকে ভারতের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক রাজধানী বলা হয়। ২০২৩ সালে এ শহরে বাতাসে পিএম ২.৫ এর মাত্রা ছিল ১১৮.৯ মাইক্রোগ্রাম, নয়া দিল্লিতে ছিল ৯২.৭, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে ছিল ৮০.২ এবং পাকিস্তানের লাহরে ছিল ৯৯.৫ মাইক্রোগ্রাম ভারতের ৮৩টি শহরের বাতাসে মাইক্রোগ্রামের পরিমাণ ১০ বার সীমা অতিক্রম করে।
দক্ষিণ এশিয়ায় বাতাসের মান খারাপ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলা উল্লেখ করা হয়েছে- ইট ভাটা পোড়ানো, কারখানার বর্জ্য, কৃষি বর্জ্য পোড়ানো, শ্মশানে মৃতদেহ দাহ করা। এছাড়া রয়েছে রান্নার কাজে জ্বালানি তেলে ব্যবহার। তবে এ অঞ্চলে শীতকালে দূষণের হার অনেক বেশি। বাংলাদেশে অন্তত আট হাজার ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো অবৈধ। এসব ইট ভাটার ধোঁয়া, প্লাস্টিক পোড়ানোর কালো ধোঁয়া এবং গাড়ির কালো ধোঁয়া বাতাস দূষিত করে। এছাড়া ফসল কাটার মৌসুমে ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালে ব্যাপক আকারে কৃষি বর্জ্য পোড়ানো হয়। এসব ধোঁয়াও বাংলাদেশে আসতে পারে।
বাতাসের মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা আইকিউএয়ার জানিয়েছে, বাতাসের মান উন্নয়নে সরকার পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে। মানসম্পন্ন গাড়ি ব্যবহারে প্রণোদনা প্রদানসহ কৃষি বর্জ্য পোড়ানো বাতিল করতে হবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বাতাসের মান উন্নয়নে সরকারি মনিটরিং সেলের যথাযথ উদ্যোগের অভাব রয়েছে।


























