► ত্রাণকর্মীকে হত্যার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি
►২ সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ইসরায়েলের
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দখলদার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গাজা উপত্যকায় এ পর্যন্ত ১৯৬ জন ত্রাণকর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
গত শুক্রবার হওয়া এ প্রস্তাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশ। প্রস্তাবটির বিষয় ছিল- ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় করা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতা বিরোধী অপরাধে ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। এছাড়া এই প্রস্তাবে ইসরায়েলে সব ধরনের অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। কারণ গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। সবসময় ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকা বাংলাদেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে এ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে এবং ইসরায়েলের পক্ষে ভোট দিয়েছে ৬টি দেশ এবং ভোটদানে বিরত ছিল ১৩টি দেশ। প্রস্তাবের পক্ষে এবং ইসরায়েলের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশ- বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, চিলি, চীন, আইভরি কোস্ট, কিউবা, ইরিত্রিয়া, ফিনল্যান্ড, গাম্বিয়া, ঘানা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিজস্তান, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, কাতার, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ভিয়েতনাম। প্রস্তাবের বিপক্ষে ও ইসরায়েলের পক্ষে ভোটদানকারী দেশ- আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, জার্মানি, মালাউই, প্যারাগুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্র। ভোটদানে বিরত ছিল যেসব দেশ- আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, ক্যামেরুন, কোস্টারিকা, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ফ্রান্স, জর্জিয়া, ভারত, জাপান, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নেদারল্যান্ডস ও রোমানিয়া।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং তাদের অস্ত্র না দেওয়ার প্রস্তাবে ইউরোপের অনেক দেশ সমর্থন জানিয়েছে। অথচ যুদ্ধের শুরুতে বেশিরভাগ ইউরোপীয়ান দেশ ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। যারমধ্যে ফিনল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ এবং বেলজিয়াম সরাসরি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে এবং ফ্রান্স ভোটদানে বিরত ছিল। অর্থাৎ প্যারিসও এতে সমর্থন জানিয়েছে। যেহেতু মানবাধিকার কাউন্সিলের মাত্র ছয়টি দেশ ইসরায়েলের পক্ষে ভোট দিয়েছে। সে কারণে গাজার যুদ্ধে ইসরায়েল যে কৌশল অবলম্বন করছে। সেটি পরিবর্তন করতে তাদের ওপর চাপ তৈরি হবে।
এদিকে ইসরায়েল প্রথমে ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনার দায় এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়, আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় এবং দুই জন সেনা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে। শুক্রবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এ সংক্রান্ত বিবৃতি জারির কয়েক ঘণ্টা পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, ‘ইসরায়েলের সরকার তাদের ভুল স্বীকার করেছে। এটা ইতিবাচক, তবে কে ভুল করেছে তা মূল ব্যাপার নয়। মূল ব্যাপারটি হলো- রণকৌশল এবং পদ্ধতি- যে কারণে এ ধরনের ঘটনা গাজায় প্রতিদিন বার বার ঘটছে। গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ১৯৬ জন ত্রাণকর্মী। আমরা প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। আমরা জানতে চাই কেন তাদের হত্যা করা হয়েছে।
গাজা উপত্যকায় অভিযান চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানে ত্রাণ সরবরাহেও বাধা দিচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে উপত্যকায় বসবাসরত ২২ লাখ ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়েছেন। খাবারের অভাবে মানুষের মৃত্যুও শুরু হয়েছে সেখানে। ইসরায়েলকে এ ইস্যুতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘যখন সহায়তার দরজা বন্ধ হয়, তখন ক্ষুধার দরজা খুলে যায়। গাজার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি বর্তমানে ভয়াবহ ক্ষুধার মধ্যে রয়েছে। শিশুরা খাদ্য-পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। এটা একটি দুঃসহ পরিস্থিতি এবং চাইলেই এটি এড়ানো সম্ভব।
অন্যদিকে গাজায় আন্তর্জাতিক ত্রাণ বহরে হামলা ও ৭ ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত এবং তিন জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইডিএফ। বরখাস্ত হওয়া দুই কর্মকর্তার মধ্যে একজন ব্রিগেডিয়ার এবং অপরজন মেজর পদমর্যাদার বলে জানা গেছে। তবে তাদের দু’জনের নাম প্রকাশ করেনি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী। পরে তেল আবিবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইডিএফের মুখপাত্র অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেন, ‘এটি খুবই গুরুতর একটি ঘটনা এবং এজন্য আমরা দায়ী। এটি ঘটা একেবারেই উচিত হয়নি এবং আমরা কথা দিচ্ছি, ভবিষ্যতে আর এমন ঘটবে না।’


























