০৩:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরান-ইসরায়েলের পরবর্তী লড়াই সাইবারে

◆ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে কতটা সক্ষম ইরান
◆পাল্টাপাল্টি হুমকিতে বড় সংঘাতের শঙ্কা
◆ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় পদে পদে ঝুঁকি
◆৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল

ইসরায়েলের নিজেদের ভূখণ্ডে গত শনিবার ইরান যে ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সমন্বয়ে হামলা চালাল, তা নানা দিক থেকে ছিল নজিরবিহীন। তবে এর সঙ্গে সাইবার হামলার যে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তা নজিরবিহীন ছিল না। ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি হ্যাকারদের গ্রুপ দাবি করেছিল যে, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আগে ইসরায়েলি রাডার সিস্টেম হ্যাক করে ফেলা হয়েছিল। তবে ইসরায়েলের শীর্ষ সাইবার সংস্থা বলেছে, তারা অনলাইনে অস্বাভাবিক কোনো কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেনি। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলে হামলা করার পর থেকে আঞ্চলিক সংঘাত ব্যাপক বেড়ে গেছে। এ সময় থেকেই ইসরায়েলে ব্যাপকভাবে সাইবার আক্রমণ বেড়ে যেতে দেখা গেছে। ইসরায়েল ন্যাশনাল সাইবার ডাইরেক্টটরেটের (আইএনসিডি) প্রধান গ্যাবি প্রটনয় বলেন, ইসরায়েল আগের চেয়ে তিনগুণ বেশি সাইবার আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে।

২০১০ সালে প্রথম এ অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এলে ইরান তাদের সাইবার কর্মসূচি শুরু করে। এখন রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইরানের এ ধরনের কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে মনে করছে ওয়াশিংটন। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাইবার জগতের এ ধরনের লড়াই অবশ্য এক দশকের বেশি সময় ধরেই চলছে। ২০০৬ সাল বা তার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সাইবার অস্ত্র তৈরি ও প্রয়োগ শুরু করে। তাদের এ ধরনের একটি অস্ত্র হচ্ছে স্টাক্সনেট। এ অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় কম্পিউটার সিস্টেম ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য, এ অস্ত্র তৈরির কথা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কখনো স্বীকার করেনি। ২০১০ সালে প্রথম এ অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এলে ইরান তাদের সাইবার কর্মসূচি শুরু করে। এখন রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইরানের এ ধরনের কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে মনে করছে ওয়াশিংটন।

ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে কতটা সক্ষম ইরান : ইরানের হামলার মূল্য চুকানোর অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার দেশটিতে নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। তেহরানের হামলার পর সংযম দেখাতে ইসরায়েলের ওপর শুরু হয় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ। এ অবস্থায় ওই হামলার সম্ভাব্য জবাবের ধরন নিয়ে বিতর্ক করতে কয়েকবার বৈঠক করেছে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি বলেছেন, সামরিকভাবে ইরানকে জবাব দেওয়াটা নিশ্চিত। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিও চুপ করে থাকেননি। যদি ইসরায়েল ইরানের মাটিতে সরাসরি সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাকে ‘ধ্বংসাত্মক ও কড়া জবাব’ দেওয়া হবে বলে বুধবার হুমকি দিয়েছেন তিনি। এখন ইসরায়েল যদি হামলা করেই বসে, তবে ইরান নিজেকে কতটা কার্যকরভাবে রক্ষা করতে পারবে, তা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।

পাল্টাপাল্টি হুমকিতে বড় সংঘাতের শঙ্কা : ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকার ও দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের হামলার অবশ্যই জবাব দেবে তারা। যদিও মিত্রদেশগুলো পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছে, ইরানের ওপর আবার কোনো হামলা হলে ইসরায়েলকে পস্তাতে হবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমনিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। তার ওপর ইরানে পাল্টা হামলা চালালে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। দেখা দিতে পারে বড় ধরনের সংঘাত। ইরানের হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে গত বুধবারও বৈঠক করেছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বৈঠকে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে ইসরায়েল সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে হামলা করবে, নাকি সিরিয়া, লেবানন, ইরাক বা ইয়েমেনে ইরানের মিত্রদের ওপর হামলা করবে- এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে ইরানের ওপর ইসরায়েলের নতুন করে যেকোনো হামলার আরো কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। গতকাল ইরানের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এক আয়োজনে তিনি বলেন, ইসরায়েল যদি আর ন্যূনতম কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় পদে পদে ঝুঁকি : ইরানের নজিরবিহীন হামলার জবাব কীভাবে সর্বোচ্চ উপায়ে দেওয়া যায় এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলগত ফলাফলের লক্ষ্যে তারা বেশ কিছু বিকল্প নিয়েও কথা বলেছেন। এর মধ্যে আছে ভবিষ্যতে একই ধরনের হামলার প্রসঙ্গ, ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও বৃহত্তর যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা। ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলে ইরানের হামলা ছিল ব্যাপক। কয়েকশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে এ হামলা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ গতি পরিবর্তন করেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যখন বৈঠক করছে, তখন অন্য দেশগুলো তেল আবিব ও তেহরানকে উস্কানি থেকে বিরত থাকতে বলেছে। ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, তা ইসরায়েল ও তার দুই প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সৃষ্টি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠেকিয়ে দিয়েছে।

৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল : পাসওভার উৎসব শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ, আগামী ৩০ এপ্রিলের ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল। এমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা। তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল পাসওভার উৎসবের আগে ইরানে হামলা চালাতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তিনি আরো বলেছেন, তবে বিষয়টি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরো বলেছেন, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীসহ দেশটির নেতৃত্ব এখনো উচ্চমাত্রায় সতর্ক অবস্থা আছে। তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো সেফ হাউস অবস্থা ভূগর্ভস্থ বাংকারে অবস্থান করছেন। এদিকে ইসরায়েলি একাধিক সূত্র এবিসি নিউজকে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত দুবার ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে দুবারই সেই মিশনগুলো বাতিল করা হয়েছে। ইসরায়েলি সমরবিদেরা দেশটির যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সামনে একাধিক বিকল্প হাজির করলেও তারা এখনো খতিয়ে দেখছে কোন উপায়ে হামলা চালালে তা সবচেয়ে ফলপ্রসূ হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পথে পথে মানুষের ঢল, লাখো কণ্ঠের উচ্ছ্বাসে তারেক রহমানকে স্বাগত

ইরান-ইসরায়েলের পরবর্তী লড়াই সাইবারে

আপডেট সময় : ০৭:৩০:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

◆ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে কতটা সক্ষম ইরান
◆পাল্টাপাল্টি হুমকিতে বড় সংঘাতের শঙ্কা
◆ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় পদে পদে ঝুঁকি
◆৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল

ইসরায়েলের নিজেদের ভূখণ্ডে গত শনিবার ইরান যে ৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন সমন্বয়ে হামলা চালাল, তা নানা দিক থেকে ছিল নজিরবিহীন। তবে এর সঙ্গে সাইবার হামলার যে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, তা নজিরবিহীন ছিল না। ইরানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি হ্যাকারদের গ্রুপ দাবি করেছিল যে, ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার আগে ইসরায়েলি রাডার সিস্টেম হ্যাক করে ফেলা হয়েছিল। তবে ইসরায়েলের শীর্ষ সাইবার সংস্থা বলেছে, তারা অনলাইনে অস্বাভাবিক কোনো কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেনি। গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যরা ইসরায়েলে হামলা করার পর থেকে আঞ্চলিক সংঘাত ব্যাপক বেড়ে গেছে। এ সময় থেকেই ইসরায়েলে ব্যাপকভাবে সাইবার আক্রমণ বেড়ে যেতে দেখা গেছে। ইসরায়েল ন্যাশনাল সাইবার ডাইরেক্টটরেটের (আইএনসিডি) প্রধান গ্যাবি প্রটনয় বলেন, ইসরায়েল আগের চেয়ে তিনগুণ বেশি সাইবার আক্রমণের মুখোমুখি হচ্ছে।

২০১০ সালে প্রথম এ অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এলে ইরান তাদের সাইবার কর্মসূচি শুরু করে। এখন রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইরানের এ ধরনের কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে মনে করছে ওয়াশিংটন। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাইবার জগতের এ ধরনের লড়াই অবশ্য এক দশকের বেশি সময় ধরেই চলছে। ২০০৬ সাল বা তার আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সাইবার অস্ত্র তৈরি ও প্রয়োগ শুরু করে। তাদের এ ধরনের একটি অস্ত্র হচ্ছে স্টাক্সনেট। এ অস্ত্র ব্যবহার করে ইরানের নাতাঞ্জ পারমাণবিক স্থাপনায় কম্পিউটার সিস্টেম ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য, এ অস্ত্র তৈরির কথা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল কখনো স্বীকার করেনি। ২০১০ সালে প্রথম এ অস্ত্র মোতায়েনের বিষয়টি সামনে এলে ইরান তাদের সাইবার কর্মসূচি শুরু করে। এখন রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়ার পাশাপাশি ইরানের এ ধরনের কর্মসূচিকে হুমকি হিসেবে মনে করছে ওয়াশিংটন।

ইসরায়েলি হামলা প্রতিরোধে কতটা সক্ষম ইরান : ইরানের হামলার মূল্য চুকানোর অঙ্গীকার করেছে ইসরায়েল। চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ায় ইরানি দূতাবাসে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার পর প্রতিশোধ হিসেবে গত শনিবার দেশটিতে নজিরবিহীন ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেহরান। তেহরানের হামলার পর সংযম দেখাতে ইসরায়েলের ওপর শুরু হয় আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ। এ অবস্থায় ওই হামলার সম্ভাব্য জবাবের ধরন নিয়ে বিতর্ক করতে কয়েকবার বৈঠক করেছে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। এরই মধ্যে ইসরায়েলি সেনাপ্রধান হারজি হালেভি বলেছেন, সামরিকভাবে ইরানকে জবাব দেওয়াটা নিশ্চিত। তবে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসিও চুপ করে থাকেননি। যদি ইসরায়েল ইরানের মাটিতে সরাসরি সামরিক হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাকে ‘ধ্বংসাত্মক ও কড়া জবাব’ দেওয়া হবে বলে বুধবার হুমকি দিয়েছেন তিনি। এখন ইসরায়েল যদি হামলা করেই বসে, তবে ইরান নিজেকে কতটা কার্যকরভাবে রক্ষা করতে পারবে, তা নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে।

পাল্টাপাল্টি হুমকিতে বড় সংঘাতের শঙ্কা : ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। ইসরায়েল সরকার ও দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, ইরানের হামলার অবশ্যই জবাব দেবে তারা। যদিও মিত্রদেশগুলো পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ইরানও পাল্টা হুমকি দিয়ে বলছে, ইরানের ওপর আবার কোনো হামলা হলে ইসরায়েলকে পস্তাতে হবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমনিতে ফিলিস্তিনের গাজায় ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েল নির্বিচার হামলা চালাচ্ছে। তার ওপর ইরানে পাল্টা হামলা চালালে পরিস্থিতি আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। দেখা দিতে পারে বড় ধরনের সংঘাত। ইরানের হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা করতে গত বুধবারও বৈঠক করেছে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। বৈঠকে ইরানের হামলার জবাব দেওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা একমত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে ইসরায়েল সরাসরি ইরানের ভূখণ্ডে হামলা করবে, নাকি সিরিয়া, লেবানন, ইরাক বা ইয়েমেনে ইরানের মিত্রদের ওপর হামলা করবে- এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে ইরানের ওপর ইসরায়েলের নতুন করে যেকোনো হামলার আরো কঠোর জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। গতকাল ইরানের জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী দিবসের এক আয়োজনে তিনি বলেন, ইসরায়েল যদি আর ন্যূনতম কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।

ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় পদে পদে ঝুঁকি : ইরানের নজিরবিহীন হামলার জবাব কীভাবে সর্বোচ্চ উপায়ে দেওয়া যায় এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন। ভিন্ন ভিন্ন কৌশলগত ফলাফলের লক্ষ্যে তারা বেশ কিছু বিকল্প নিয়েও কথা বলেছেন। এর মধ্যে আছে ভবিষ্যতে একই ধরনের হামলার প্রসঙ্গ, ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা ও বৃহত্তর যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা। ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলে ইরানের হামলা ছিল ব্যাপক। কয়েকশ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে এ হামলা হয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধ গতি পরিবর্তন করেছে। ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যখন বৈঠক করছে, তখন অন্য দেশগুলো তেল আবিব ও তেহরানকে উস্কানি থেকে বিরত থাকতে বলেছে। ইরান যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল, তা ইসরায়েল ও তার দুই প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সৃষ্টি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠেকিয়ে দিয়েছে।

৩০ এপ্রিলের আগে ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল : পাসওভার উৎসব শেষ হওয়ার আগে অর্থাৎ, আগামী ৩০ এপ্রিলের ইরানে হামলা চালাবে না ইসরায়েল। এমনটাই জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা। তবে তিনি এটাও জানিয়েছেন যে, এই সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। দেশটির সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ওই জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল পাসওভার উৎসবের আগে ইরানে হামলা চালাতে খুব একটা আগ্রহী নয়। তিনি আরো বলেছেন, তবে বিষয়টি যেকোনো সময় বদলে যেতে পারে। ওই মার্কিন কর্মকর্তা আরো বলেছেন, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীসহ দেশটির নেতৃত্ব এখনো উচ্চমাত্রায় সতর্ক অবস্থা আছে। তাদের অধিকাংশই কোনো না কোনো সেফ হাউস অবস্থা ভূগর্ভস্থ বাংকারে অবস্থান করছেন। এদিকে ইসরায়েলি একাধিক সূত্র এবিসি নিউজকে জানিয়েছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েল অন্তত দুবার ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে দুবারই সেই মিশনগুলো বাতিল করা হয়েছে। ইসরায়েলি সমরবিদেরা দেশটির যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সামনে একাধিক বিকল্প হাজির করলেও তারা এখনো খতিয়ে দেখছে কোন উপায়ে হামলা চালালে তা সবচেয়ে ফলপ্রসূ হবে।