০৮:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেটি স্মরণে কাঁদলেন শ্রমিকরা

 চাইলেন ক্ষতিপূরণ আর ন্যায়বিচার

ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো আর ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরার ১১ বছর পরও সেই স্মৃতি স্মরণ করে কাঁদলেন সাভারের রানা প্লাজার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

 

 

প্রখর রোদে ব্যানার ও প্লাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যখন রানা প্লাজা ধসের স্মৃতি আর স্বজন হারানোর কথা বলছিলেন, চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউ। স্বজন হারানোর বেদনা আর পঙ্গুত্ব নিয়ে হাহাকার জীবনের আর্তনাদই কেবল শোনা যাচ্ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করে চিকিৎসার ব্যয়ে যারা সর্বস্বান্ত, সেই পোশাক শ্রমিকরা গতকাল বুধবার প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েছিলেন মানববন্ধনে।

 

শ্রমিকরা বলছিলেন, রানা প্লাজা ধসের পর থেকে প্রতি বছরই তারা এমন মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করে আসছেন। কিন্তু এখনো তারা প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পাননি। সেই সঙ্গে ১১ বছরেও মামলার বিচার শেষ হয়নি। কিন্তু দীর্ঘ এই সময় ধরেই স্বজন হারিয়ে, পঙ্গুত্ব নিয়ে অর্থাভাবে অনাহারে তাদের দিন কাটছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আটতলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরো হাজারখানেক তৈরি পোশাক শ্রমিককে।

 

 

 

গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া সেই ঘটনার ভুক্তভোগী শ্রমিক আকলিমা গতকাল বুধবার মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
আকলিমা বলছিলেন, ভবন ধসের পর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ছিলাম। দুর্ঘটনার এত বছর পরও আমি কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। অথচ আমাদের ঘামে কত পোশাক বিদেশে যায়, অনেক বিদেশিরা আমাদের প্রশংসা করে। কিন্তু আমার পরিবার থাকে অনাহারে।

 

দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করার পাশাপাশি মামলার আসামি সোহেল রানাসহ ও অন্যদের দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি। রানা প্লাজা ধসে নিহতদের স্বজন ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের মানববন্ধনে হাজির হয়ে নিজেদের দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ‘রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার ১১ বছর’ লেখা ব্যানার নিয়ে হাজির হন। কারো কারো হাতে ছিল ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে রানাসহ সবার নজিরবিহীন শাস্তি চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রানা প্লাজা ভিকটিমস’, ‘এনসিওর রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড জব ফর রানা প্লাজা ভিকটিমস’ লেখা প্লাকার্ড।

 

সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আপনারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কান্নার কথা, বেদনার কথা শুনেছেন। আমরা আর কত শ্রমিকদের লাশ হতে দেখব শুধু মালিক ও সরকারের অবহেলা আর অতি মুনাফার কারণে। শ্রমিকদের আর মুনাফা তৈরির যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক ফায়দা লোটা যাবে না। শ্রমিকদের তার যোগ্য মর্যাদা না দিলে আর এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

 

 

মানববন্ধন থেকে কয়েকটি দফা দাবি তুলে ধরেন গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।

জনপ্রিয় সংবাদ

রানা প্লাজা ট্র্যাজেটি স্মরণে কাঁদলেন শ্রমিকরা

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভয়াবহ এক দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো আর ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে ফেরার ১১ বছর পরও সেই স্মৃতি স্মরণ করে কাঁদলেন সাভারের রানা প্লাজার বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

 

 

প্রখর রোদে ব্যানার ও প্লাকার্ড হাতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যখন রানা প্লাজা ধসের স্মৃতি আর স্বজন হারানোর কথা বলছিলেন, চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউ। স্বজন হারানোর বেদনা আর পঙ্গুত্ব নিয়ে হাহাকার জীবনের আর্তনাদই কেবল শোনা যাচ্ছিল জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে। মর্মান্তিক সেই দুর্ঘটনায় যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করে চিকিৎসার ব্যয়ে যারা সর্বস্বান্ত, সেই পোশাক শ্রমিকরা গতকাল বুধবার প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়েছিলেন মানববন্ধনে।

 

শ্রমিকরা বলছিলেন, রানা প্লাজা ধসের পর থেকে প্রতি বছরই তারা এমন মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করে আসছেন। কিন্তু এখনো তারা প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণ পাননি। সেই সঙ্গে ১১ বছরেও মামলার বিচার শেষ হয়নি। কিন্তু দীর্ঘ এই সময় ধরেই স্বজন হারিয়ে, পঙ্গুত্ব নিয়ে অর্থাভাবে অনাহারে তাদের দিন কাটছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন আটতলা রানা প্লাজা ধসে নিহত হন ১ হাজার ১৩৫ জন; প্রাণে বেঁচে গেলেও পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় আরো হাজারখানেক তৈরি পোশাক শ্রমিককে।

 

 

 

গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া সেই ঘটনার ভুক্তভোগী শ্রমিক আকলিমা গতকাল বুধবার মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন।
আকলিমা বলছিলেন, ভবন ধসের পর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ছিলাম। দুর্ঘটনার এত বছর পরও আমি কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। অথচ আমাদের ঘামে কত পোশাক বিদেশে যায়, অনেক বিদেশিরা আমাদের প্রশংসা করে। কিন্তু আমার পরিবার থাকে অনাহারে।

 

দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ দাবি করার পাশাপাশি মামলার আসামি সোহেল রানাসহ ও অন্যদের দ্রুত বিচার দাবি করেন তিনি। রানা প্লাজা ধসে নিহতদের স্বজন ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকরা সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের মানববন্ধনে হাজির হয়ে নিজেদের দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ‘রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার ১১ বছর’ লেখা ব্যানার নিয়ে হাজির হন। কারো কারো হাতে ছিল ‘রানা প্লাজা হত্যাকাণ্ডে রানাসহ সবার নজিরবিহীন শাস্তি চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস ফর রানা প্লাজা ভিকটিমস’, ‘এনসিওর রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড জব ফর রানা প্লাজা ভিকটিমস’ লেখা প্লাকার্ড।

 

সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, আপনারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের কান্নার কথা, বেদনার কথা শুনেছেন। আমরা আর কত শ্রমিকদের লাশ হতে দেখব শুধু মালিক ও সরকারের অবহেলা আর অতি মুনাফার কারণে। শ্রমিকদের আর মুনাফা তৈরির যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না। রাজনৈতিক ফায়দা লোটা যাবে না। শ্রমিকদের তার যোগ্য মর্যাদা না দিলে আর এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমাদের এই শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।

 

 

মানববন্ধন থেকে কয়েকটি দফা দাবি তুলে ধরেন গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা।