০৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বজন নিয়ে নরম আওয়ামী লীগ

◆ সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরক্তি প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
◆ অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গুরুত্বারোপ

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী করা নিয়ে হার্ডলাইনে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ। মূলত উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার পক্ষে দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম। সে লক্ষ্যে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার পক্ষেই তারা। তবে তৃণমূলের রাজনীতি পরিবার কেন্দ্রিক করার বিষয়টিও ভালোভাবে নিচ্ছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম সদস্যরা।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী করা নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে। অভিযুক্ত এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার কড়া বার্তা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। এতকিছুর পরও অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রী স্বজন নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেননি। এমপি-মন্ত্রীরাও বিভিন্ন ছাপাই গেয়েছেন তাদের নির্বাচনে থাকা নিয়ে। যা দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সদস্যদের বিব্রত ও ক্ষুব্ধ করে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ মে দলের কার্যনির্বাহী সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সবশেষ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি কথা বলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে সেদিনই থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনেও নিরুৎসাহ প্রকাশ করেন তিনি।
সংসদীয় দলের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী করার বিষয়টি যে পছন্দ নয়, সেটিও জানিয়ে দেন তিনি। যারা এমন প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ভবিষ্যতে পরিবার নিয়েই থাকতে বলেও সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

একাধিক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোটে থাকা খারাপ হিসেবে দেখছেন, এটাই প্রকাশ পেয়েছে। নিজে সংসদ সদস্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের কেন প্রার্থী করতে হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এটা করা ঠিক হয়নি। এমনটা হলে অন্য নেতা-কর্মীরা কী করবেন? অন্য নেতা-কর্মীদের জায়গা প্রয়োজন, সম্মানের প্রয়োজন। এ সময় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।

দলীয় সূত্র বলছে, মূলত দলের সভাপতি স্বজনদের নির্বাচনের বিপক্ষে নন। তবে তৃণমূলে রাজনীতি পরিবার কেন্দ্রিক না হয়ে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন চান তিনি।
এর এগে গত বৃহস্পতিবার থাইল্যন্ড সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তারা আগে নির্বাচন করেছেন। কেউ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের তো রাজনৈতিক জীবনী আছে। তাদেরকে মানা করি কী করে। তবে এটা ঠিক, এক জায়গায় বউকে দিল, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিল, এগুলো ঠিক না। কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই নেতাকর্মীদের বলতে চেয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে মেয়ে স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাহিরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, আমাদের লক্ষ্য। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটা হয় না। সেই কথাটা আমি বলতে চেয়েছি। সবাই দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন করছে, সেটার লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে অর্থবহ করা।

সবশেষ গতকাল বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে ভাই হোক, স্বজন হোক আমি তাকে দাঁড় করিয়েছি কি না, আমি তার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছি কি না, আমার দল সমর্থন দিচ্ছে কি না, সেটা হচ্ছে বড় কথা। আমি বা আমার দল যদি পক্ষে না থাকি তাহলে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়ে জড়িত থাকলে কিছু করার নেই।
প্রধানমন্ত্রীর বলা পরিবারের মধ্যে যেন সব কিছু কেন্দ্রীভূত না করে, এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বজনদের সব কিছু দেওয়ার জন্য যদি সব কিছু কেন্দ্রীভূত করা হয়, তাহলে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা যাবে কোথায়? একথা আমাদের সভাপতি বলেছেন। আমাদের সবার বক্তব্য সেটাই।

সভ্য ও মার্জিত সমাজ গঠনে সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে হবে- মোতাহার হোসেন পাটওয়ারী

স্বজন নিয়ে নরম আওয়ামী লীগ

আপডেট সময় : ০৬:৪৫:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ মে ২০২৪

◆ সংসদীয় দলের বৈঠকে বিরক্তি প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর
◆ অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গুরুত্বারোপ

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী করা নিয়ে হার্ডলাইনে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ। মূলত উপজেলা নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার পক্ষে দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম। সে লক্ষ্যে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার পক্ষেই তারা। তবে তৃণমূলের রাজনীতি পরিবার কেন্দ্রিক করার বিষয়টিও ভালোভাবে নিচ্ছেন দলটির নীতি নির্ধারণী ফোরাম সদস্যরা।

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রার্থী করা নিয়ে কঠোর অবস্থানের কথা জানানো হয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে। অভিযুক্ত এমপি-মন্ত্রীদের নির্দেশনা দেওয়া হয় স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার কড়া বার্তা দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। এতকিছুর পরও অধিকাংশ এমপি-মন্ত্রী স্বজন নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করেননি। এমপি-মন্ত্রীরাও বিভিন্ন ছাপাই গেয়েছেন তাদের নির্বাচনে থাকা নিয়ে। যা দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম সদস্যদের বিব্রত ও ক্ষুব্ধ করে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ মে দলের কার্যনির্বাহী সভায় উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সবশেষ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে বিষয়টি কথা বলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে সেদিনই থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনেও নিরুৎসাহ প্রকাশ করেন তিনি।
সংসদীয় দলের বৈঠক সূত্রে জানা যায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের প্রার্থী করার বিষয়টি যে পছন্দ নয়, সেটিও জানিয়ে দেন তিনি। যারা এমন প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ভবিষ্যতে পরিবার নিয়েই থাকতে বলেও সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

একাধিক সংসদ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের স্বজনদের ভোটে থাকা খারাপ হিসেবে দেখছেন, এটাই প্রকাশ পেয়েছে। নিজে সংসদ সদস্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের কেন প্রার্থী করতে হবে, সেই প্রশ্নও তুলেছেন। তিনি বলেছেন, এটা করা ঠিক হয়নি। এমনটা হলে অন্য নেতা-কর্মীরা কী করবেন? অন্য নেতা-কর্মীদের জায়গা প্রয়োজন, সম্মানের প্রয়োজন। এ সময় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী।

দলীয় সূত্র বলছে, মূলত দলের সভাপতি স্বজনদের নির্বাচনের বিপক্ষে নন। তবে তৃণমূলে রাজনীতি পরিবার কেন্দ্রিক না হয়ে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন চান তিনি।
এর এগে গত বৃহস্পতিবার থাইল্যন্ড সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর পরিবার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। তারা আগে নির্বাচন করেছেন। কেউ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, কেউ উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের তো রাজনৈতিক জীবনী আছে। তাদেরকে মানা করি কী করে। তবে এটা ঠিক, এক জায়গায় বউকে দিল, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিল, এগুলো ঠিক না। কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই নেতাকর্মীদের বলতে চেয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পারিবারিক ফর্মুলা কী? নিজের ছেলে মেয়ে স্ত্রী, এই তো। তারপর হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলেমেয়ে, কয়জন স্ত্রী দাঁড়িয়েছে। এর বাহিরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, আমাদের লক্ষ্য। সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখব না, এটা হয় না। সেই কথাটা আমি বলতে চেয়েছি। সবাই দাঁড়িয়েছে, নির্বাচন করছে, সেটার লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে অর্থবহ করা।

সবশেষ গতকাল বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, আমার কথা হচ্ছে ভাই হোক, স্বজন হোক আমি তাকে দাঁড় করিয়েছি কি না, আমি তার পক্ষে সমর্থন দিচ্ছি কি না, আমার দল সমর্থন দিচ্ছে কি না, সেটা হচ্ছে বড় কথা। আমি বা আমার দল যদি পক্ষে না থাকি তাহলে কেউ বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার বিষয়ে জড়িত থাকলে কিছু করার নেই।
প্রধানমন্ত্রীর বলা পরিবারের মধ্যে যেন সব কিছু কেন্দ্রীভূত না করে, এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বজনদের সব কিছু দেওয়ার জন্য যদি সব কিছু কেন্দ্রীভূত করা হয়, তাহলে দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতারা যাবে কোথায়? একথা আমাদের সভাপতি বলেছেন। আমাদের সবার বক্তব্য সেটাই।