০৮:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নানা সংকটে রেলের পশ্চিমাঞ্চল

◉ বৈরি আবহাওয়া ও অব্যবস্থাপনায় বিলম্বিত ট্রেন চলাচল
◉ চলতি মাসেই তিন দুর্ঘটনা
◉ আস্থা হারাচ্ছেন যাত্রীরা, আর্থিক ক্ষতিতেও পড়ছে রেল

বৈরি আবহাওয়া, জনবল সংকটসহ নানান অব্যবস্থাপনা ও একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিডিউল বিপর্যয়ের ফাঁদে পড়েছে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল। কমলাপুর থেকে সময়ের অনেক পরে ছাড়ছে অধিকাংশ ট্রেন। সাধারণ সময়েও আধাঘন্টা থেকে কয়েকঘণ্টা বিলম্ব থাকছে। ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চলতি মাসেই তিন দুর্ঘটনার ফলে নতুন করে বেড়েছে শিডিউল জটিলতা অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতেও পড়ছে রেলওয়ে।

রেল সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে প্রতিদিন পশ্চিমাঞ্চলে ২৩টি ট্রেন চলে। এরমধ্যে ১৯টি আন্তঃনগর, তিনটি কমিউটার ও একটি মেইল ট্রেন। এরমধ্যে ঢাকা-জয়দেবপুর হয়ে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু হয়ে ঈশ্বরদী যায় ১৯টি ট্রেন ও ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যায় চারটি। পদ্মাসেতু দিয়ে যাওয়া ১৯টি ট্রেনই নিয়মিতভাবে সময় মতো ছাড়তে ও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।

গত ২ মে বগুড়ার সান্তাহার জংশনে যাত্রীদের সঙ্গে রেলকর্মীদের মারামারি হয়। এর পরদিন ৩ মে গাজীপুরের জয়দেবপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। যেটা উদ্ধার করতে লেগে যায় ২৯ ঘণ্টা। এরপর ৯ মে রাত ৩টার দিকে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের মুলাডুলি-চাটমোহর রেলস্টেশনের মধ্যে মুলাডুলি স্টেশন অতিক্রম করে আউটার সিগন্যালে দুর্ঘটনা ঘটে। এরমাঝে আরও দুইটি ট্রেন মুখোমুখি অবস্থানেও চলে আসার ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনা ছাড়াও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বৈরি আবহাওয়াকেও দায়ী করছেন রেল সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে শীতের সময়ে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় ঢেকে থাকে প্রকৃতি। ফলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেনগুলোর গতি কমানো হয়। এছাড়াও গত এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণেও রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে গতি প্রায় অর্ধেক রেখে চলাচল করে ট্রেনগুলো।

ঢাকা থেকে জয়দেবপুর হয়ে ঈশ্বরদী রুটে দৈনিক ১৯ জোড়া ট্রেন চললেও জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুট সিঙ্গেল লাইন। ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে শিডিউলের ন্যূনতম তারতম্য হলে তৈরি হয় দীর্ঘ জটের। জনবল সংকটে এ রুটের রেলস্টেশনগুলো চালু নেই ফলে ট্রেনগুলোকে পড়তে হয় দীর্ঘ ক্রসিংয়ে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪.৮ কিলোমিটার রেললাইন পার হতে ট্রেনগুলোর প্রায় ২০ মিনিট সময় লেগে যায় আর নতুন সেতুর ক্রসিং তৈরির জন্য প্রতিটি ট্রেনের আরও ২০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় এ সময়ে অন্য ট্রেনকে স্টেশনে ৪০-৫০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু ট্রেন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন করে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলসেতু নির্মাণের পর এখানে সময় বিলম্ব কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিডিউল জটিলতা ও দুর্ঘটনার কারণ আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার অভাব। কিছু স্টেশনে আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ স্টেশনে এখনও সাধারণ পদ্ধতিতে ট্রেন চলে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বলছে, যমুনায় বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এজন্য ট্রেন চলাচলে মাত্র দুটি লাইন সচল রয়েছে। সেখানে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) নেই। জয়দেবপুরেও নতুন রেললাইন নির্মাণ চলছে, নেই সিবিআইএস। এতে করে ট্রেন বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে। আবার প্রকল্প চলমান থাকায় অনেক জায়গায় সিবিআইএস চালু করা যাচ্ছে না।

এবিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম তালুকদার বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন দূরপাল্লায় যায়, সেখানে আমাদের অনেক স্টেশন বন্ধ আছে। স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেন ক্রসিংয়ে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। সময় কোনোভাবে এদিক-সেদিক একটি ট্রেন গেলে অন্যটির আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে লাইন তৈরি হচ্ছে। দুটি লাইন দিয়ে কষ্ট করে ট্রেন চালানো হচ্ছে। আগে যেখানে সময় লাগতো ২০ মিনিট, এখন লাগছে ৪০ মিনিট। আর দুর্ঘটনার কারণেওতো জটিলতা আরও বাড়ছে। আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা করতে ১ বছর লাগবে আরও। তখন শিডিউলে ট্রেন রাখা যাবে আশা করি।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর শোক

নানা সংকটে রেলের পশ্চিমাঞ্চল

আপডেট সময় : ০৭:০২:২৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

◉ বৈরি আবহাওয়া ও অব্যবস্থাপনায় বিলম্বিত ট্রেন চলাচল
◉ চলতি মাসেই তিন দুর্ঘটনা
◉ আস্থা হারাচ্ছেন যাত্রীরা, আর্থিক ক্ষতিতেও পড়ছে রেল

বৈরি আবহাওয়া, জনবল সংকটসহ নানান অব্যবস্থাপনা ও একের পর এক দুর্ঘটনার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে শিডিউল বিপর্যয়ের ফাঁদে পড়েছে রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল। কমলাপুর থেকে সময়ের অনেক পরে ছাড়ছে অধিকাংশ ট্রেন। সাধারণ সময়েও আধাঘন্টা থেকে কয়েকঘণ্টা বিলম্ব থাকছে। ফলে পশ্চিমাঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। চলতি মাসেই তিন দুর্ঘটনার ফলে নতুন করে বেড়েছে শিডিউল জটিলতা অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতেও পড়ছে রেলওয়ে।

রেল সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা থেকে প্রতিদিন পশ্চিমাঞ্চলে ২৩টি ট্রেন চলে। এরমধ্যে ১৯টি আন্তঃনগর, তিনটি কমিউটার ও একটি মেইল ট্রেন। এরমধ্যে ঢাকা-জয়দেবপুর হয়ে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু হয়ে ঈশ্বরদী যায় ১৯টি ট্রেন ও ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যায় চারটি। পদ্মাসেতু দিয়ে যাওয়া ১৯টি ট্রেনই নিয়মিতভাবে সময় মতো ছাড়তে ও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।

গত ২ মে বগুড়ার সান্তাহার জংশনে যাত্রীদের সঙ্গে রেলকর্মীদের মারামারি হয়। এর পরদিন ৩ মে গাজীপুরের জয়দেবপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। যেটা উদ্ধার করতে লেগে যায় ২৯ ঘণ্টা। এরপর ৯ মে রাত ৩টার দিকে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথের মুলাডুলি-চাটমোহর রেলস্টেশনের মধ্যে মুলাডুলি স্টেশন অতিক্রম করে আউটার সিগন্যালে দুর্ঘটনা ঘটে। এরমাঝে আরও দুইটি ট্রেন মুখোমুখি অবস্থানেও চলে আসার ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনা ছাড়াও শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে বৈরি আবহাওয়াকেও দায়ী করছেন রেল সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে শীতের সময়ে ঘন কুয়াশার কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সন্ধ্যার পর থেকে পরের দিন দুপুর পর্যন্ত ঘনকুয়াশায় ঢেকে থাকে প্রকৃতি। ফলে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ট্রেনগুলোর গতি কমানো হয়। এছাড়াও গত এপ্রিল মাসে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণেও রেললাইন বেঁকে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। ফলে গতি প্রায় অর্ধেক রেখে চলাচল করে ট্রেনগুলো।

ঢাকা থেকে জয়দেবপুর হয়ে ঈশ্বরদী রুটে দৈনিক ১৯ জোড়া ট্রেন চললেও জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রুট সিঙ্গেল লাইন। ফলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে শিডিউলের ন্যূনতম তারতম্য হলে তৈরি হয় দীর্ঘ জটের। জনবল সংকটে এ রুটের রেলস্টেশনগুলো চালু নেই ফলে ট্রেনগুলোকে পড়তে হয় দীর্ঘ ক্রসিংয়ে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪.৮ কিলোমিটার রেললাইন পার হতে ট্রেনগুলোর প্রায় ২০ মিনিট সময় লেগে যায় আর নতুন সেতুর ক্রসিং তৈরির জন্য প্রতিটি ট্রেনের আরও ২০ মিনিট লেগে যাচ্ছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু সিঙ্গেল লাইন হওয়ায় এ সময়ে অন্য ট্রেনকে স্টেশনে ৪০-৫০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু ট্রেন চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় নতুন করে বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। রেলসেতু নির্মাণের পর এখানে সময় বিলম্ব কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিডিউল জটিলতা ও দুর্ঘটনার কারণ আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার অভাব। কিছু স্টেশনে আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ স্টেশনে এখনও সাধারণ পদ্ধতিতে ট্রেন চলে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে বলছে, যমুনায় বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর নির্মাণকাজ চলছে। এজন্য ট্রেন চলাচলে মাত্র দুটি লাইন সচল রয়েছে। সেখানে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলিঙ্ক সিস্টেম (সিবিআইএস) নেই। জয়দেবপুরেও নতুন রেললাইন নির্মাণ চলছে, নেই সিবিআইএস। এতে করে ট্রেন বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকছে। আবার প্রকল্প চলমান থাকায় অনেক জায়গায় সিবিআইএস চালু করা যাচ্ছে না।

এবিষয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম তালুকদার বলেন, পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন দূরপাল্লায় যায়, সেখানে আমাদের অনেক স্টেশন বন্ধ আছে। স্টেশন বন্ধ থাকায় ট্রেন ক্রসিংয়ে আধা ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। সময় কোনোভাবে এদিক-সেদিক একটি ট্রেন গেলে অন্যটির আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুতে লাইন তৈরি হচ্ছে। দুটি লাইন দিয়ে কষ্ট করে ট্রেন চালানো হচ্ছে। আগে যেখানে সময় লাগতো ২০ মিনিট, এখন লাগছে ৪০ মিনিট। আর দুর্ঘটনার কারণেওতো জটিলতা আরও বাড়ছে। আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা করতে ১ বছর লাগবে আরও। তখন শিডিউলে ট্রেন রাখা যাবে আশা করি।