১০:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নওগাঁ রাণীনগরে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চতুর্মুখী লড়াই

৩য় ধাপে আগামী ২৯মে অনুষ্ঠিত হবে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দিচ্ছেন স্মার্ট উপজেলা বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি। পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে উপজেলার প্রতিটি অলিগলি। দিনের অর্ধেক সময় নির্বাচনী প্রচার মাইকের শব্দে মুখর থাকছে চারদিক। তবে চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখের তরুন ও পুরাতনের মাঝে চতুর্মুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন উপজেলার ভোটাররা।
অপরদিকে প্রতিদিনই প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে নানা অভিযোগ। কোন প্রার্থী বলছেন উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন অমক প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে আবার কোন প্রার্থী বলছেন নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রশাসনের কাছে দিলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাই প্রশাসনের এমন পক্ষপাত মূলক ভূমিকার কারণে উপজেলায় একটি সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নিরপেক্ষ ভাবে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল প্রকাশ করা নিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীদের মাঝে চরম শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি চেয়ারম্যান পদের শালিক পাখি প্রতিকের প্রার্থী মো: মীর মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীকারী নয়জন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আটজন প্রার্থী। তাই এই আটজন প্রার্থীর মধ্যে মূলত তীব্র লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। লড়াই হবে মূলত গত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বিএ (আনারস প্রতিক), তিনবারের সাংসদ মরহুম ইসরাফিল আলমের ভাতিজা ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা নতুন মুখের মো. আসাদুজ্জামান আসাদ (কৈ মাছ প্রতিক), সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলালের ছেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নতুন মুখের মো. রাহিদ সরদার (কাপ পিরিচ প্রতিক) ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুজিত চন্দ্র সাহার (ঘোড়া প্রতিক) মধ্যে।
এছাড়াও নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে আছেন মোটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মো. গোলাম রাব্বানী ও হেলিকপ্টার প্রতিক নিয়ে ইয়াকুব আলী প্রামাণিক। আবার নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপিপন্থী প্রার্থী সরদার মো: আব্দুল মালেক (দোয়াত কলম প্রতিক) কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নতুন মুখের দুই তরুন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র লড়াই হওয়ার আলোচনা-সমালোচনা এখন সর্বত্র।
উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদরা মনে করছেন বিগত সময়ে যেহেতু প্রতিটি নির্বাচনেই সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন হেলালের পরিবার থেকে কেউ না কেউ অংশগ্রহণ করতো এবং বিজয়ের মালা পড়তো সেহেতু উপজেলায় হেলালের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রিজার্ভ ভোটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমের পক্ষেও উপজেলায় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটার রয়েছে। ইসরাফিল আলমের অকাল প্রয়াণ নতুন মুখের প্রার্থী আসাদের পক্ষে অনেকটাই পজেটিভ হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া একবার নির্বাচন করার কারণে আনোয়ার হোসেনেরও একটি পরিচিতি রয়েছে উপজেলাজুড়ে। অপরদিকে সুজিত চন্দ্র সাহাও ভোটের মাঠে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে একটি প্রভাব বিস্তার করবেন।
রাজনীতিবিদরা আরো মনে করছেন যেহেতু নির্বাচনে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করছে এবং গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে আনার লক্ষ্যে বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না তাই ভোট কেন্দ্রে যাবে না এই দলের কর্মী, সমর্থক ও অনুসারী সিংহভাগ ভোটাররা। তাই খুব কম সংখ্যক ভোটে প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। অর্থাৎ যে প্রার্থী ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে নিজের জন্য ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভোট প্রদানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পারবেন সেই প্রার্থীই বিজয়ের মালা পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন সবকিছুতেই আসছে পরিবর্তন। তাই নেতৃত্বের ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হলে শিক্ষিত ও স্মার্ট নতুন মুখের তরুনের আগমনের কোন বিকল্প নেই। যদিও বা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী দুই নতুন মুখের তরুন প্রার্থীর বয়সের একটু পার্থক্য থাকলেও তরুনদের হাতেই যেহেতু নতুন ইতিহাসের অধ্যায় রচিত হয় এবং তরুনদের হাতেই বিজয়ের নিশান ওড়ে তাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে তরুনদের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসা খুব প্রয়োজন বলে মনে করছেন উপজেলার রাজনীতিবিদরা।
এছাড়া নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ৭০টি আর মোট ভোটার ১৬২০০৫ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ২জন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন ইতিমধ্যেই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলায় একটি নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে এবং শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখি করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। তাই সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন উপজেলাবাসীকে উপহার দিতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জনপ্রিয় সংবাদ

নায়ক রিয়াজের মৃত্যুসংবাদ ফেসবুকে, যা জানাল পরিবার

নওগাঁ রাণীনগরে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চতুর্মুখী লড়াই

আপডেট সময় : ০৫:০১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪
৩য় ধাপে আগামী ২৯মে অনুষ্ঠিত হবে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকেই প্রার্থীরা দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দিচ্ছেন স্মার্ট উপজেলা বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি। পোস্টারে পোস্টারে ছেঁয়ে গেছে উপজেলার প্রতিটি অলিগলি। দিনের অর্ধেক সময় নির্বাচনী প্রচার মাইকের শব্দে মুখর থাকছে চারদিক। তবে চেয়ারম্যান পদে নতুন মুখের তরুন ও পুরাতনের মাঝে চতুর্মুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন উপজেলার ভোটাররা।
অপরদিকে প্রতিদিনই প্রার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে নানা অভিযোগ। কোন প্রার্থী বলছেন উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন অমক প্রার্থীর হয়ে কাজ করছে আবার কোন প্রার্থী বলছেন নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রশাসনের কাছে দিলেও দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। তাই প্রশাসনের এমন পক্ষপাত মূলক ভূমিকার কারণে উপজেলায় একটি সুষ্ঠ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নিরপেক্ষ ভাবে ভোট গ্রহণ শেষে ফলাফল প্রকাশ করা নিয়ে বিভিন্ন প্রার্থীদের মাঝে চরম শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি চেয়ারম্যান পদের শালিক পাখি প্রতিকের প্রার্থী মো: মীর মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীকারী নয়জন প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন আটজন প্রার্থী। তাই এই আটজন প্রার্থীর মধ্যে মূলত তীব্র লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে। লড়াই হবে মূলত গত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিক পাওয়া প্রতিদ্বন্দ্বীকারী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন বিএ (আনারস প্রতিক), তিনবারের সাংসদ মরহুম ইসরাফিল আলমের ভাতিজা ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা নতুন মুখের মো. আসাদুজ্জামান আসাদ (কৈ মাছ প্রতিক), সাবেক এমপি আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলালের ছেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য নতুন মুখের মো. রাহিদ সরদার (কাপ পিরিচ প্রতিক) ও সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুজিত চন্দ্র সাহার (ঘোড়া প্রতিক) মধ্যে।
এছাড়াও নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে আছেন মোটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান মো. গোলাম রাব্বানী ও হেলিকপ্টার প্রতিক নিয়ে ইয়াকুব আলী প্রামাণিক। আবার নির্বাচনের ফলাফলে বিএনপিপন্থী প্রার্থী সরদার মো: আব্দুল মালেক (দোয়াত কলম প্রতিক) কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নতুন মুখের দুই তরুন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র লড়াই হওয়ার আলোচনা-সমালোচনা এখন সর্বত্র।
উপজেলার প্রবীণ রাজনীতিবিদরা মনে করছেন বিগত সময়ে যেহেতু প্রতিটি নির্বাচনেই সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন হেলালের পরিবার থেকে কেউ না কেউ অংশগ্রহণ করতো এবং বিজয়ের মালা পড়তো সেহেতু উপজেলায় হেলালের পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক রিজার্ভ ভোটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সাবেক এমপি ইসরাফিল আলমের পক্ষেও উপজেলায় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোটার রয়েছে। ইসরাফিল আলমের অকাল প্রয়াণ নতুন মুখের প্রার্থী আসাদের পক্ষে অনেকটাই পজেটিভ হিসেবে কাজ করতে পারে। এছাড়া একবার নির্বাচন করার কারণে আনোয়ার হোসেনেরও একটি পরিচিতি রয়েছে উপজেলাজুড়ে। অপরদিকে সুজিত চন্দ্র সাহাও ভোটের মাঠে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে একটি প্রভাব বিস্তার করবেন।
রাজনীতিবিদরা আরো মনে করছেন যেহেতু নির্বাচনে শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করছে এবং গণতন্ত্রের অধিকার ফিরে আনার লক্ষ্যে বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না তাই ভোট কেন্দ্রে যাবে না এই দলের কর্মী, সমর্থক ও অনুসারী সিংহভাগ ভোটাররা। তাই খুব কম সংখ্যক ভোটে প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। অর্থাৎ যে প্রার্থী ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে নিজের জন্য ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে ভোট প্রদানের বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে পারবেন সেই প্রার্থীই বিজয়ের মালা পড়বেন বলে মনে করা হচ্ছে।
উপজেলার সচেতন মহল মনে করছেন সবকিছুতেই আসছে পরিবর্তন। তাই নেতৃত্বের ধারায় পরিবর্তন নিয়ে আসতে হলে শিক্ষিত ও স্মার্ট নতুন মুখের তরুনের আগমনের কোন বিকল্প নেই। যদিও বা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী দুই নতুন মুখের তরুন প্রার্থীর বয়সের একটু পার্থক্য থাকলেও তরুনদের হাতেই যেহেতু নতুন ইতিহাসের অধ্যায় রচিত হয় এবং তরুনদের হাতেই বিজয়ের নিশান ওড়ে তাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হলে তরুনদের নেতৃত্বের আসনে নিয়ে আসা খুব প্রয়োজন বলে মনে করছেন উপজেলার রাজনীতিবিদরা।
এছাড়া নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এই উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ৭০টি আর মোট ভোটার ১৬২০০৫ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ২জন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা উম্মে তাবাসসুম বলেন ইতিমধ্যেই সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলায় একটি নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নির্বাচনের শুরু থেকেই প্রশাসন নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে এবং শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। ভোটারদের কেন্দ্রমুখি করতে প্রশাসন বদ্ধ পরিকর। তাই সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে একটি সুন্দর নির্বাচন উপজেলাবাসীকে উপহার দিতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।