❖এত নোংরা কথা আগে কেউ বলেননি, মোদিকে ইঙ্গিত মনমোহনের
❖৪ জুনের পর ভারতে রাজনৈতিক ভূমিকম্প হবে : মোদি
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দীর্ঘ প্রচার পর্ব শেষে নরেন্দ্র মোদি সেখানেই ধ্যানমগ্ন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। গতকাল তার কন্যাকুমারী পৌঁছনোর কথা এবং সন্ধ্যা থেকেই টানা দুই দিন তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে ধ্যানে বসেছেন তিনি। ২০১৪ সাল থেকেই বিজেপির দেশজুড়ে ভোট প্রচারের শেষে এ ধরনের বিশ্রাম বা ধ্যানে যান তিনি। কন্যাকুমারীর ধ্যানগৃহ বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল, যেখানে স্বামী বিবেকানন্দ ধ্যান করেছিলেন সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মোদি ধ্যান করবেন। এর আগেও ২০১৯ সালের মে মাসে লোকসভা ভোটের প্রচার পর্ব শেষ হওয়ার পরদিনই মোদি ধ্যানে বসেছিলেন হিমালয়ের তুষারতীর্থ কেদারনাথে। কেদারনাথে ১১ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে গুহার মধ্যে ধ্যানে বসেছিলেন তিনি।
গত বুধবার এই খবর সামনে আসতেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। তামিলনাড়ু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক কে বালকৃষ্ণান দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে সিপিএম নেতা লেখেন, মোদি ব্যক্তিগতভাবে কোথাও ধ্যানে বসতেই পারেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানমগ্ন হওয়া বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হলে দেশে সপ্তম দফা ভোটের আগে তা নির্দিষ্ট একটি দলকে (বিজেপি) বিশেষ সুবিধা দেবে। নির্বাচন কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি যাতে ভঙ্গ না হয়, সে কারণে এই সম্প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
আগামী ১ জুন ভারতে সপ্তম দফার ভোট হবে। কমিশনের বিধি অনুযায়ী, ভোট শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার পর্ব শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার পরে আর কোনো প্রচার চালানো যাবে না। মোদির ধ্যানের ছবি সরাসরি সম্প্রচারিত হলে দেশে শেষ দফার ভোটের আগে কমিশনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘিত হবে।
এ নিয়ে মোদিকে কটাক্ষ করেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ধ্যান করবে তো ক্যামেরা নিয়ে কেন? লোকে পূজা ক্যামেরার সামনে ছবি তুলে করে? এই সময়টাকেও খুব কৌশল করে মোদি প্রচারের কাজে ব্যবহার করছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী ধ্যানে বসেছেন, এটা সব মিডিয়াই তুলে ধরবে। এখন দেখার বিষয় কমিশন এ নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়।
একই আবেদন জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেসও। দলটির নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি ও সৈয়দ নাসির হুসেন কমিশনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। কংগ্রেস বলেছে, এমনটা হলে ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনও লঙ্ঘন করবেন মোদি। ৩০ মে সন্ধ্যা থেকেই প্রচার পর্ব শেষ। ভোটাররা এ সময় ভোটদান নিয়ে ভাবনা করেন। তখন মোদি ধ্যানে বসলে এবং তা টেলিভিশনে প্রচার হলে ভোটাররা প্রভাবিত হবেন। এটাও তার একধরনের পরোক্ষ প্রচার। যেখানে মোদি নিজেই এবারের পর্বে বারানসিতে প্রার্থী। তাই কংগ্রেসের দাবি, কমিশন যেন কোনোভাবেই টেলিভিশন বা অন্যান্য গণমাধ্যমে এ ঘটনা প্রচার করার নির্দেশ না দেন। বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। কন্যাকুমারীর ত্রিবেণী সঙ্গমে পাথরের ওপর বসে স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯২ সালে ধ্যান করেছিলেন।
গতকাল লোকসভা নির্বাচনের শেষ ধাপের আগে দেশের জনগণকে সম্বোধন করে লেখা এক চিঠিতে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইঙ্গিত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, দেশের কোনো বিশেষ অংশ (সম্প্রদায়) বা বিরোধী দলকে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য পূর্ববর্তী কোনো প্রধানমন্ত্রী এমন বাজে, অসংসদীয় ও নিম্নমানের ভাষা ব্যবহার করেননি। তারা আমার বিষয়েও কিছু ভুল বক্তব্য দিয়েছে। আমি জীবনে কখনোই এক সম্প্রদায়কে অন্য সম্প্রদায় থেকে আলাদা করে দেখিনি। এটি বিজেপির বিশেষ অধিকার ও অভ্যাস।’
এর আগে, গত মাসের শুরুর দিকে জাতীয় ‘জাত সমীক্ষার’ অংশ হিসেবে ‘অর্থনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনের’ পরিকল্পনা প্রকাশ করে কংগ্রেস। দলটির নির্বাচনী ইশতেহার ও তাদের সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের এক মন্তব্যকে ইঙ্গিত করে মোদি বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস বলে যে, তারা আমাদের মা-বোনদের কাছে থাকা সোনার হিসাব করবে এবং সেই সম্পত্তি বণ্টন করবে সবার মাঝে। মনমোহন সিংয়ের সরকার বলেছিল যে, সমস্ত সম্পদের ওপর মুসলমানদের প্রথম অধিকার আছে…।’ তবে কংগ্রেস সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু যাকে নিয়ে মোদির মন্তব্য, সেই মনমোহন সিং দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মুখ খুলছিলেন না। অবশেষে তিনি মুখ খুলেছেন এবং বলেছেন, সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে বিভেদ তৈরি বা আলাদা নজরে দেখা কখনোই ঠিক হবে না। আমি এই নির্বাচনের প্রচারের সময় রাজনৈতিক আলোচনা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছি। মোদি জঘন্য ঘৃণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন, যা একেবারেই বিভাজন সৃষ্টিকারী। মোদি হলেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি তার পদের মর্যাদাহানি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভাবগাম্ভীর্য কমিয়েছেন।
গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত মথুরাপুর এলাকায় এক নির্বাচনী জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, আপনাদের জমি জায়গা অনুপ্রবেশকারীরা দখল করে নিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস কেন সিএএর এত বিরোধিতা করছে, কেন এত মিথ্যা রটাচ্ছে? কারণ তৃণমূল কংগ্রেস অনুপ্রবেশকারীদের জায়গা দিতে চায়। হিন্দু, মতুয়া সমাজের লোকদের তৃণমূল এখানে রাখতে দিতে চায় না। কিন্তু চিন্তা করবেন না। ৪ জুনের পর তৃণমূলের হাওয়া বেরিয়ে যাবে। মতুয়া সমাজ, নমশূদ্র সমাজকে অধিকার পাইয়েই ছাড়ব। এটা মোদির গ্যারান্টি। সব শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব মিলবে। ৪ জুনের পর আগামী ছয় মাসে দেশে বহু বড় রাজনৈতিক ভূমিকম্প আসতে চলেছে।
পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, আপনারা ভারতে ১০ বছরের বিকাশ যাত্রা দেখেছেন। ভারতের কোটি গরিব মানুষ জীবনের ন্যূনতম সুবিধা পেতেন না। না খেয়ে মৃত্যু হতো। কোটি মানুষের মাথায় ছাদ ছিল না, মহিলাদের জন্য শৌচালয় ছিল না। সব থেকে বড় দুর্ভাগ্য ছিল, এই সমস্যা মেটানোর জন্য চেষ্টাও হতো না। পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি মানুষকে শেষ করে দিয়েছে। তবে ভারত এখন এগিয়ে চলেছে। গোটা বিশ্ব দেখছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনতাই বলছে, বিজেপির জয় এবার কতটা জোরদার হতে চলেছে। আপনাদের এই উচ্ছ্বাসই বলে দিচ্ছে, বিজেপির জয় কতটা শক্তিশালী হতে চলেছে। আমাকে বলা হয়েছে, পরশু ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। মঞ্চ বানানোর সমস্যা ছিল। শেষ মুহূর্তে আপনারা খোলা আকাশের নিচে জড়ো হয়েছেন। এত কম সময়ে, এত বড় সভার আয়োজন মুখের কথা নয়। আপনাদের ধন্যবাদ। চব্বিশের এই নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে এটাই আমার শেষ সভা।


























