০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শর্তযুক্ত বাজেটে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা

বাজেটে থাকছে আইএমএফের প্রভাব

◉নতুন এডিপি সরকারের মুদ্রাসংকোচননীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণÑ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি
◉ঋণ নেওয়ার শর্তে আত্মসমর্পণের বাজেট প্রণয়ন করছে সরকারÑ এম এম আকাশ, অর্থনীতিবিদ

 

 

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্তের প্রতিফলন ঘটছে আসন্ন বাজেটে। গত অর্থবছরের মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও আইএমএফের প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। আইএমএফ ঋণ কর্মসূচিতে যেসব শর্ত দিয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে সেগুলোর বেশিরভাগ বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

বাজেটের আকার ছোট রাখা, ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, কর ছাড় প্রত্যাহার, ভর্তুকি কমানো, দরিদ্রদের ভাতা বাড়ানোসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে অনিয়ম রোধ, উপকারভোগী সঠিকভাবে নির্বাচন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ রয়েছে আইএমএফের। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট তৈরির ছক করছে অর্থমন্ত্রণালয়।

 

আইএমএফের চাপের এমন বাজেট নিয়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফের শর্ত মোটা দাগে একটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে অর্থনীতির দুর্বল পরিস্থিতিতে সব শর্ত একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।

 

জানা গেছে, প্রতিবার সাধারণত বাজেটের আকার ১২-১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে চলতি বছরের তুলনায় আগামী বাজেটের আকার বাড়তে পারে ৫-৮ শতাংশ।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন অর্থবছরে এডিপির আকার খুব বেশি না বাড়ানোটা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রস্তাবিত এডিপি যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তবে বিদেশি ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব ও রিজার্ভ বাড়ানোসহ যেসব বিষয়ে আইএমএফ শর্তারোপ করছে, সরকারও সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব খাতের সংস্কারে আমরা যে কাজগুলো করতে পারিনি, আইএমএফ সেগুলোই মনে করিয়ে দিয়েছে। অনেক আগেই এসব সংস্কার করা উচিত ছিল।

 

জানা গেছে, আগামী বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ বাজেটের মূল আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা এর আগের বাজেটের চেয়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। আইএমএফের শর্তের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রবৃদ্ধিও কমিয়ে আনা হচ্ছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাশেরও কম। বৈশ্বিক সংকটের কারণে ইতোমধ্যে প্রবৃদ্ধির হার নেমেছে অর্ধেকে।

 

 

বিবিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ র্অবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ০১ শতাংশ।

 

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত এডিপিতে খাদ্য নিরাপত্তাকে মূল অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ, শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো, দারিদ্র্য কমানোর প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি নিরোধের প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা সম্পর্কিত প্রকল্পে বিশেষ অগ্রাধিকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

বিশ্লেষণে দেখা যায়, উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে বড় ১০টি প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে সমাপ্তি ঘটবে ২৮৯টি প্রকল্পের। এগুলোর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল), পূর্বাচলে খাল খনন ও আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। নতুন অর্থবছরের এডিপিতে সরকার অর্থায়ন করবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা আসবে বিদেশি বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে।

 

 

এদিকে কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। আগামী বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। একই সঙ্গে বর্তমানে কর অব্যাহতি অথবা করছাড় সুবিধা পাওয়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়ানো হতে পারে। তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস সিলিন্ডারের মতো পণ্যেও বাড়তে পারে ভ্যাট। তবে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি না বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শ থাকলেও এ খাতে আরও কয়েক বছর কর অব্যাহতি থাকতে পারে।

 

আইএমএফের পরামর্শে ও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বাজেট অনেকটা সংকোচনমূলক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ঋণাত্মক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ সাজিয়ে বাজেট চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এর আগের অর্থবছরগুলোতে সাধারণত পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে বাজেট দেওয়া হয়েছে।

 

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন এডিপি সরকারের মুদ্রাসংকোচননীতি সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এবার খাদ্য ও জলবায়ুকে মূল অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে- ঠিকই আছে। তবে শিক্ষা খাতে আরো বরাদ্দ রাখা উচিত ছিল। প্রস্তাবিত এডিপি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে এটা দিয়েই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

 

বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি করে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে মাত্র ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার শর্তের বিনিময়ে তাদের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে সরকারকে।

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

শর্তযুক্ত বাজেটে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা

বাজেটে থাকছে আইএমএফের প্রভাব

আপডেট সময় : ০৬:১৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

◉নতুন এডিপি সরকারের মুদ্রাসংকোচননীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণÑ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক, সিপিডি
◉ঋণ নেওয়ার শর্তে আত্মসমর্পণের বাজেট প্রণয়ন করছে সরকারÑ এম এম আকাশ, অর্থনীতিবিদ

 

 

 

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্তের প্রতিফলন ঘটছে আসন্ন বাজেটে। গত অর্থবছরের মতো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটেও আইএমএফের প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। আইএমএফ ঋণ কর্মসূচিতে যেসব শর্ত দিয়েছে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যে সেগুলোর বেশিরভাগ বাস্তবায়নের ঘোষণা থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

 

বাজেটের আকার ছোট রাখা, ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানো, কর ছাড় প্রত্যাহার, ভর্তুকি কমানো, দরিদ্রদের ভাতা বাড়ানোসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে অনিয়ম রোধ, উপকারভোগী সঠিকভাবে নির্বাচন করার পাশাপাশি এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের তাগিদ রয়েছে আইএমএফের। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট তৈরির ছক করছে অর্থমন্ত্রণালয়।

 

আইএমএফের চাপের এমন বাজেট নিয়ে আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএমএফের শর্ত মোটা দাগে একটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে অর্থনীতির দুর্বল পরিস্থিতিতে সব শর্ত একসঙ্গে বাস্তবায়ন করা হলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে।

 

জানা গেছে, প্রতিবার সাধারণত বাজেটের আকার ১২-১৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে চলতি বছরের তুলনায় আগামী বাজেটের আকার বাড়তে পারে ৫-৮ শতাংশ।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন অর্থবছরে এডিপির আকার খুব বেশি না বাড়ানোটা সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রস্তাবিত এডিপি যথাযথ বাস্তবায়ন হলেই প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব। তবে বিদেশি ঋণের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব ও রিজার্ভ বাড়ানোসহ যেসব বিষয়ে আইএমএফ শর্তারোপ করছে, সরকারও সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করছে। এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মাদ আবদুল মজিদ বলেন, রাজস্ব খাতের সংস্কারে আমরা যে কাজগুলো করতে পারিনি, আইএমএফ সেগুলোই মনে করিয়ে দিয়েছে। অনেক আগেই এসব সংস্কার করা উচিত ছিল।

 

জানা গেছে, আগামী বাজেটের আকার হতে পারে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ বাজেটের মূল আকার ধরা হয় ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা, যা এর আগের বাজেটের চেয়ে ৮৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। আইএমএফের শর্তের সঙ্গে সমন্বয় রেখে প্রবৃদ্ধিও কমিয়ে আনা হচ্ছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ শতাশেরও কম। বৈশ্বিক সংকটের কারণে ইতোমধ্যে প্রবৃদ্ধির হার নেমেছে অর্ধেকে।

 

 

বিবিএসের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (২০২৩ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর) জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০২২-২৩ র্অবছরের একই সময়ে ছিল ৬ দশমিক ০১ শতাংশ।

 

পরিকল্পনা কমিশনের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রস্তাবিত এডিপিতে খাদ্য নিরাপত্তাকে মূল অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ, শ্রমশক্তির দক্ষতা বাড়ানো, দারিদ্র্য কমানোর প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ- বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, অতিবৃষ্টি নিরোধের প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সবুজ ও জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা সম্পর্কিত প্রকল্পে বিশেষ অগ্রাধিকারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

বিশ্লেষণে দেখা যায়, উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে বড় ১০টি প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের মধ্যে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে সমাপ্তি ঘটবে ২৮৯টি প্রকল্পের। এগুলোর মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (থার্ড টার্মিনাল), পূর্বাচলে খাল খনন ও আশ্রয়ণ প্রকল্প রয়েছে। নতুন অর্থবছরের এডিপিতে সরকার অর্থায়ন করবে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। বাকি ১ লাখ কোটি টাকা আসবে বিদেশি বিভিন্ন দাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে।

 

 

এদিকে কিছু শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে রেফারেল বা বিশেষায়িত হাসপাতাল শুল্কছাড় সুবিধায় ১ শতাংশ শুল্কে মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির সুযোগ পাচ্ছে। আগামী বাজেটে ২০০টিরও বেশি মেডিক্যাল যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে। একই সঙ্গে বর্তমানে কর অব্যাহতি অথবা করছাড় সুবিধা পাওয়া স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কিছু ইলেকট্রনিকস পণ্যের ওপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) বাড়ানো হতে পারে। তরল পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাস সিলিন্ডারের মতো পণ্যেও বাড়তে পারে ভ্যাট। তবে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে কর অব্যাহতি না বাড়াতে আইএমএফের পরামর্শ থাকলেও এ খাতে আরও কয়েক বছর কর অব্যাহতি থাকতে পারে।

 

আইএমএফের পরামর্শে ও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী বাজেট অনেকটা সংকোচনমূলক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাজেট ঘাটতি কমিয়ে আনা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ ঋণাত্মক পর্যায়ে নামিয়ে আনার উদ্যোগ থাকবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ সাজিয়ে বাজেট চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এটি চলতি বাজেটের তুলনায় ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। এর আগের অর্থবছরগুলোতে সাধারণত পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১২ থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে বাজেট দেওয়া হয়েছে।

 

গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন এডিপি সরকারের মুদ্রাসংকোচননীতি সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এবার খাদ্য ও জলবায়ুকে মূল অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা হয়েছে- ঠিকই আছে। তবে শিক্ষা খাতে আরো বরাদ্দ রাখা উচিত ছিল। প্রস্তাবিত এডিপি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হলে এটা দিয়েই উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ।

 

বিদ্যুৎ-জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি করে আইএমএফের শর্ত পূরণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ। তিনি বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে মাত্র ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার শর্তের বিনিময়ে তাদের কাছে ‘আত্মসমর্পণ’ করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে সরকারকে।