সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনে যোগ না দিলেও দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ফ্রান্স ও ইতালিতে সাক্ষাৎ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন অস্ত্র প্রয়োগের প্রথম ঘটনার কথা জানা যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন বিষয়ক শান্তি সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুপস্থিতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের আনন্দের কারণ হবে, এমন মন্তব্য করে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন জেলেনস্কি। গোটা বিশ্বের যত বেশি সম্ভব দেশের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলনে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করছেন জেলেনস্কি। আগামী ১৫ ও ১৬ জুনের সম্মেলনে আপাতত প্রায় ১৬০টি দেশ ও প্রতিষ্ঠান অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। রাশিয়াকে আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদে চীন সেই সম্মেলন বর্জন করে অন্যান্য দেশের উপরেও দূরে থাকার চাপ সৃষ্টি করছে বলে জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনবার্গও চীনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ক্ষোভ কমাতে বাইডেন পরপর দুইবার তার সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনা করেছেন। চলতি সপ্তাহে ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে এবং তারপর ইতালির বারি শহরে জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে তিনি রাশিয়ার হামলা মোকাবিলায় ইউক্রেনের জন্য আরও সহায়তার বিষয়ে জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনা করবেন। জুন মাসের মাঝামাঝি সুইজারল্যান্ডে শান্তি সম্মেলনের সময় বাইডেন নিজের নির্বাচনি অভিযানের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হলিউডের তারকাদের সঙ্গে ব্যস্ত থাকবেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস সম্মেলনে আমেরিকার প্রতিনিধিত্ব করবেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানও উপস্থিত থাকবেন। ইউক্রেনের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের আরো সহায়তা নিশ্চিত করতে বাইডেন প্রশাসন উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে। জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে আটক রাশিয়ার তহবিল কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের জন্য আর্থিক সহায়তার বিষয়ে অগ্রগতির আশা করা হচ্ছে।
এদিকে নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্রের সূত্র অনুযায়ী বাইডেনের ছাড়পত্রের পর ইউক্রেন রাশিয়া সীমান্তের কাছে মার্কিন অস্ত্র প্রয়োগ করে আঘাত হেনেছে। ইউক্রেনের সংসদের জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির উপ-সভাপতি ইয়েহর চেরনেভকে উদ্ধৃত করে এনওয়াইটি দাবি করেছে, সীমান্ত থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে বেলগোরোদ অঞ্চলে রাশিয়ার মিসাইল লঞ্চারের উপর আঘাত হানতে মার্কিন হাইমার্স আর্টিলারি রকেট সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রথম ইউক্রেনের কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এমন হামলার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করলেন। উল্লেখ্য, রাশিয়া বারবার পশ্চিমা অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছে। কিন্তু আমেরিকা ও জার্মানিসহ বেশ কিছু পশ্চিমা দেশ নির্দিষ্ট কিছু পরিস্থিতিতে ইউক্রেনকে সেই ছাড়পত্র দিয়ে মস্কোর হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউক্রেনে পাঠানো যেকোনো ফরাসি সামরিক প্রশিক্ষক রুশ সশস্ত্র বাহিনীর জন্য ‘বৈধ লক্ষ্যবস্তু’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। তিনি বলেন, আমি মনে করি ফরাসি প্রশিক্ষকেরা এরই মধ্যে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রয়েছে। ফরাসি সামরিক কর্মকর্তা বা ভাড়াটে সেনা যে-ই হোক না কেন, তারা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তু হবে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা ফ্রান্সের কাছ থেকে তাদের সৈন্যদের জন্য প্রশিক্ষণ সহায়তা চাইছেন বলে খবর প্রকাশের পর গত মঙ্গলবার কঙ্গোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন ক্লদ গাকোসোর সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
ইউক্রেনের শীর্ষ কমান্ডার গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেছেন, যা শিগগিরই ফরাসি সামরিক প্রশিক্ষকদের ইউক্রেনের প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে প্রবেশের অনুমতি দেবে। এরপর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, তিনি কোনো গুজব সম্পর্কে মন্তব্য করবেন না। এই সপ্তাহের শেষের দিকে ডি-ডে’র ৮০তম বার্ষিক অনুষ্ঠানে ইউক্রেনের প্রতি ফ্রান্সের সমর্থনের বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন তিনি। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগ দেবেন ম্যাক্রোঁ । গত মঙ্গলবার ম্যাক্রোঁর কার্যালয় বলেছে, তারা ল্যাভরভের হুঁশিয়ারির ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবে না। ফরাসি প্রশিক্ষকেরা ইউক্রেনে আছেন এমন কোনো প্রমাণও নেই বলে দাবি করা হয় এ সময়।
ইউক্রেনে মস্কোর পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে চায় রাশিয়া। এই লক্ষ্যে ল্যাভরভ গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার আফ্রিকা সফর করেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশ ফ্রান্স ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো তাদের পুরোনো পশ্চিমা অংশীদারদের প্রতি প্রকাশ করেছে ক্রমবর্ধমান হতাশা। অঞ্চলটিতে বেশ কয়েকটি ইসলামি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্যও রাশিয়ার দিকে তাকাচ্ছে দেশগুলো। গত মঙ্গলবার ল্যাভরভ সুইজারল্যান্ডে এই মাসের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউক্রেন শান্তি সম্মেলনও বাতিল করেছেন। এই সম্মেলনে রাশিয়াকে আমন্ত্রণও জানানো হয়নি। বর্তমানে ইউক্রেনীয় ভূখণ্ডের প্রায় ১৮ শতাংশ রয়েছে রাশিয়ার দখলে। ল্যাভরভ এই সম্মেলন প্রসঙ্গে বলেন, এই সম্মেলনের কোনো অর্থ নেই। এর একমাত্র অর্থ হতে পারে- ভেঙে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা রুশবিরোধী ব্লককে রক্ষা করার চেষ্টা করা।


























