ইসলাম একটি স্বভাবজাত ধর্ম। কুরআন-হাদিসে বর্ণিত প্রতিটি নির্দেশনা মানুষের স্বভাবসম্মত, সুবিন্যস্ত এবং পরিপাটি। সুশৃঙ্খল ও উন্নত জীবনযাপনের জন্য আয় অনুপাতে ব্যয়ের যে খাত নির্ধারণ করা হয়, সেটাই বাজেট। ইসলামে বাজেটের গুরুত্ব অপরিসীম। বাজেটের সঙ্গে দেশের উন্নতি-অগ্রগতি এবং জনগণের ভাগ্য অনেকাংশে জড়িত। তাই ইসলামে বাজেটকে একটি জাতীয় আমানত হিসাবে দেখা হয়।
বাজেটের ওপর ভিত্তি করে একটি দেশ যেমন এগিয়ে যায়, তেমনি অপরিকল্পিত বাজেটের কারণে একটি দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ ধ্বংসও হয়ে যেতে পারে। সরকারের দায়িত্ব হলো, বাজেট প্রণয়নের সময় দেশ ও জনগণের কল্যাণে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও আমানতের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা। অন্যথায় আল্লাহর দরবারে কঠিন জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে। পবিত্র কোরআন থেকে জাতীয় বাজেটের ধারণা পাই। প্রাচীন মিসরে হজরত ইউসুফ (আ.) কে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়ে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদি অর্থব্যবস্থা সংরক্ষণের ঘটনা বর্ণনা করে মহান আল্লাহ আমাদের সে শিক্ষাই দিয়েছেন। তৎকালীন মিসরের বাদশাহ এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায়, ‘বাদশাহ বলল, আমি স্বপ্নে দেখলাম, সাতটি মোটাতাজা গাভি এদেরকে সাতটি শীর্ণ গাভি খেয়ে যাচ্ছে এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অন্যগুলো শুষ্ক’ (সুরা ইউসুফ: ৪৩)।
মহান আল্লাহ ইউসুফকে (আ.) স্বপ্নের ব্যাখ্যার জ্ঞান দান করেছিলেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যার জন্য ইউসুফকে (আ.) রাজদরবারে ডাকা হলো। তিনি বাদশাহর স্বপ্নের বিবরণ শুনে বুঝে ফেললেন এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের কথা জানালেন। তিনি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সচল রাখতে ভবিষ্যৎ বাজেট পরিকল্পনার একটি খসড়া করে দিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘ইউসুফ স্বপ্নের ব্যাখ্যায় বললেন, তোমরা সাত বছর উত্তম রূপে চাষাবাদ করবে। অতঃপর যা কাটবে, তার মধ্যে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে তা ছাড়া অবশিষ্ট শস্য শীষসহ রেখে দেবে এবং এরপরে আসবে দুর্ভিক্ষের সাত বছর; তোমরা এ দিনের জন্য যা রেখেছিলে, তা খেয়ে যাবে। কিন্তু অল্প পরিমাণ ছাড়া, যা তোমরা তুলে রাখবে। এর পরেই আসবে এক বছর-তখন মানুষের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং তখন তারা রস নিংড়াবে’ (সুরা ইউসুফ: ৪৭-৪৯)।
আমাদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নবী ইউসুফ (আ.) এখানে ১৪ বছরের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন এবং আসন্ন দুর্যোগ ও সংকট মোকাবিলায় দেশের উৎপাদন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব করে দিয়েছেন। ইউসুফ (আ.)-এর আল্লাহ প্রদত্ত এই অভূতপূর্ব পরামর্শে বিমোহিত হয়ে বাদশাহ তাকে নিজের একান্ত সহযোগী হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বাদশাহ বলল, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। আমি তাকে নিজের বিশ্বস্ত সহচর করে রাখব’ (সুরা ইউসুফ: ৫৪)।
কিন্তু ইউসুফ (আ.) এ প্রস্তাব শুনে নিজের পক্ষ থেকে আরও একটি আবেদন করলেন। মহান আল্লাহ বলেন,‘ ইউসুফ বলল, আমাকে দেশের ধন-ভান্ডারে নিযুক্ত করুন’ (সুরা ইউসুফ: ৫৫)। নবী ইউসুফ (আ.) কেন অর্থমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন? এর কারণও তিনি নিজেই বর্ণনা করেছিলেন, ‘আমি বিশ্বস্ত রক্ষক ও অধিক জ্ঞানবান’ (সুরা ইউসুফ: ৫৫)।


























