❖ বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কমবে মূল্যস্ফীতির চাপ
❖ বাজার নিয়ন্ত্রণ করাই হবে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ
❖ বাজারের পর্যবেক্ষণ বাড়ানোর দাবি ভোক্তাদের
◉দাম কমালেই হবে না, বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটের শক্তি কমাতে ব্যবস্থা নিতে হবে- ড. নজরুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ
◉ বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনা কম- সায়মা হক বিদিশা, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর থেকে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে। অথচ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭ অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের উৎসে কর কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। সেই পণ্যগুলোর ক্ষেত্রেও বেড়েছে দাম। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কমবে মূল্যস্ফীতির চাপ। তাই এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করাই হবে সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।
বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। ক্রেতাদের অভিযোগ, যেসব পণ্যের দাম বাড়বে বলে ঘোষণা করা হয়েছে বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে দাম বাড়তি রাখা হচ্ছে। কিন্তু যে সব পণ্যের দাম কামানোর কথা সেই পণ্যের দাম কমার কোনো খবর নেই। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ তাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে।
সাধারণত বাজেটকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থাকে কোন পণ্যের দাম কমে আর কোন পণ্যের দামে বাড়ে। প্রতি বছর বাজেটকে কেন্দ্র করে নানা পণ্যের দাম বাড়ে। এ বছরও সেটির ব্যত্যয় ঘটেনি। গত রোজার আগে থেকে নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী, সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা কোনো কাজে আসেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৮৮৯ শতাংশ। গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.৭৪ শতাংশ। তবে সরকার বলছে, এ বাজেট মূল্যস্ফীতি কমানোর বাজেট।
দিনমজুর আমিন উল্লাহ টিভিতে দেখেছেন এবারের বাজেটে নিত্যপণ্যের দাম কমার কথা সেই খুশিতে বাজার করতে এসে দেখে বাজারে সেই আগের দামে সবকিছু বিক্রি হচ্ছে। কমার কোনো প্রভাব নেই বরং বাজারে দাম বেড়েছে গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ কিনেছিলেন ৭০ টাকায় সেটির দাম এখন ৮০ টাকা। তাহলে বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী কই দাম কমল? আসলে এই বাজেট আমাদের জন্য না। বাজেটের ঘোষণা অনুযায়ী ভেবেছিলাম বাজারে জিনিসের দাম কমবে। কিন্তু দাম উল্টো বেড়ে গেছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭ অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যে উৎসে কর কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি। তাতে স্বস্তি বাড়ার আশা নিত্যপণ্যের বাজারে। কিন্তু দাম কমবে কিনা এ নিয়ে ক্রেতাদের মনে রয়েছে শঙ্কা।
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী মো. খালেদ বলেন, ‘বাজারে দাম না কমলেও ঠিকই বেড়েছে। বাজারে বাজেট ঘোষণার প্রভাব দেখি না বরং সবকিছু বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার এটি বাস্তবায়ন করতে চাইলে বাজার তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। বাজারের পর্যবেক্ষণ একটা বড় ব্যাপার। যেটা আমরা ওইভাবে দেখতে পাই না। কর কমানোর পরও দাম বেড়ে গেছে।’
বর্তমান বাজেটের মূল্যস্ফীতির বিষয়টি জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বলেন, দাম কমালেই হবে না, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সিন্ডিকেটের শক্তি কমাতে ব্যবস্থা নিতে হবে। যে পণ্যের দাম ৫ শতাংশ কমে যাওয়ার কথা, সেটার দাম একই রাখা হচ্ছে। কিন্তু যেটার দাম ২ শতাংশ বাড়ার কথা সেটা ৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যারা এটা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এটা হতেই থাকবে।’
বর্তমান বাজেটে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু আসলে বিষয়টি বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব জানতে চাইলে তিনি বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘সার্বিকভাবে মূল্যস্ফীতি ৯-১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সাধারণ কিছু উদ্যোগ ছাড়া বিশেষ কিছু বাজেটে নেই। ফলে মূল্যস্ফীতি কমার সম্ভাবনাও কম।’
অন্যদিকে বাজেটে যেসব পণ্যে নতুন করে কর আরোপ করা হয়েছে সেই সব পণ্যে এখন থেকেই গুনতে হচ্ছে বাড়তি দাম। কর বাড়ার তালিকায় আছে সিগারেট, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, রেফ্রিজারেটর, মোবাইল সিম, টিউবলাইট, এলইডি বাল্ব, আইসক্রিমসহ ফলের জুস। কোরবানিকে কেন্দ্র করে বাড়ছে ফ্রিজ বিক্রি। বাজেট ঘোষণার পর থেকেই ফ্রিজের ক্ষেত্রে পণ্যভেদে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা। দাম বেড়েছে এসিতেও। কিন্তু বাজেটকে কেন্দ্র করে অনেক পণ্যে দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়ার কথা জুলাই মাসে। অথচ এখন থেকেই বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে অনেক পণ্য।


























