০৫:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘের কালোতালিকায় ইসরায়েলি বাহিনী

▶এই সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ
▶বেশিরভাগ ইসরায়েলিই ভোট দেবে না নেতানিয়াহুকে
▶পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রী গ্যান্টজ
▶পশ্চিমা সমর্থন বন্ধেই ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডি শেষ হবে : ইরান

সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের ক্ষতি করার দায়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে ‘কালোতালিকাভুক্ত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। যুদ্ধনীতি ভেঙে যেসব দেশ শিশুদের ওপর চড়াও হয়েছে, সেসব দেশকে নিয়ে এ তালিকা করেছে সংস্থাটি। নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উত্থাপনের পর সপ্তাহখানেক বাদে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা রয়েছে। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলে রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান। এদিকে এ-সংক্রান্ত এক ফোনকলের ভিডিও এক্সে তিনি প্রকাশ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। গিলাদকে জাতিসংঘের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে ফোন করেছিলেন সংস্থার এক কর্মকর্তা। এ সময় গিলাদ ফোনকলে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এর অংশবিশেষ এক্সে পোস্ট করেন। ভিডিও কলে গিলাদকে দাবি করতে শোনা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী ইসরায়েলের। এ সময় তিনি আন্তোনিও গুতেরেসকে কালোতালিকাভুক্ত একমাত্র মহাসচিব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। গুতেরেস সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করেন এবং তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেন। তিনি জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্তকে আপত্তিজনক ও ভুল পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।

ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, তার ২৪ বছরের চাকরিজীবনে কোনো কূটনীতিককে এমন অপেশাদারি আচরণ করতে দেখেননি। সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের প্রতি আইন লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর তালিকাসংবলিত একটি প্রতিবেদন ১৪ জুন নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর কয়েক দিন পর এ সিদ্ধান্তের কথা জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে। তালিকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নামও রয়েছে। এ তথ্য জানাতেই কাজের অংশ হিসেবে তাঁদের একজন কর্মকর্তা গিলাদকে ফোন করেন। অথচ গিলাদ ওই ফোনকলের কথোপকথনের ভিডিও করেন এবং অংশবিশেষ এক্সে প্রকাশ করেন।

 

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭৩১ জনের বেশি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুই ১৫ হাজার ৫৭১টি। হামলায় আরো ৮৩ হাজার ৫৩০ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রতি ১০ শিশুর ৯টিই তীব্র খাবারসংকটে ভুগছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি শিশু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। অনেককে চেতনানাশক ছাড়াই অঙ্গচ্ছেদ করাতে হচ্ছে।

 

 

সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ :
জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এ কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিয়াদ মালিকি এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনেক বিলম্বে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাজায় কোন ধরনের বিপর্যয় চলছে, তা বিশ্ব এখন খালি চোখেই দেখছে। সেখানে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে কালোতালিকাভুক্ত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সামনে আর কোনো অজুহাতের পথ খোলা ছিল না।

ইসরায়েলকে কালোতালিকাভুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটির মানবিক নীতি ও পরামর্শবিষয়ক বিভাগের প্রধান আলেকজান্দ্রা সায়েহ বলেন, এটা সত্যিকারে লজ্জাজনক ঘটনা যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারল না। জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করাতে পথ তৈরি করবে। তবে একই ধরনের অপরাধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জ-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড ও আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদকেও কালোতালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

 

নেতানিয়াহুকে ভোট দেবে না বেশিরভাগ ইসরায়েলিরা :
ইসরায়েলের বেশিরভাগ জনগণ আসন্ন নির্বাচনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বা তাকে সমর্থনকারী কোনো দলকে ভোট দেবে না। গত শুক্রবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১২ একটি জনমত জরিপে এমন ফলাফল দেখা গেছে বলে জানিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ভোটার ইসরায়েলের নেতা হিসাবে নেতানিয়াহুকে বা তাকে সমর্থন করে এমন কোনো দলের পক্ষে তাদের ভোট দেবেন না। ১৯ শতাংশ ভোটার নেতানিয়াহুর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বাকি ১৯ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন। নেতাহিয়াহু ব্লকের ভোটার হিসেবে পরিচিত এমন ৩০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা নেতানিয়াহু বা তাকে সমর্থনকারী কোনো দলকে ক্ষমতায় দেখতে চান না। ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করে আসছে জিম্মিদের পরিবার ও সাধারণ জনগণ। এছাড়াও বিচার বিভাগের ক্ষমতা সীমিত করার বিতর্কিত আইন পাশের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হন নেতানিয়াহু।

 

পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রী গ্যান্টজ :
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এর জেরে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। গত শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ওপর থেকে তার দলের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন বলছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা অনুমোদন না করার কারণে গ্যান্টজ পদত্যাগ করছেন। গত মাসে এক টেলিভিশন ভাষণে গ্যান্টজ হুমকি দিয়েছেলেন, গাজা নিয়ে যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা অনুমোদন না দিলে তিনি পদত্যাগ করবেন। তিনি এজন্য ৮ জুন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি নেতানিয়াহু।

এর আগে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় যুদ্ধ শেষে অবরুদ্ধ গাজায় শাসনের জন্য ছয় দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন বেনি গ্যান্টজ। গ্যান্টজের ছয় দফায় হামাসের পতন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেন। যদি তার চাওয়া পূরণ করা না হয়, তাহলে তিনি গত বছর গাজা যুদ্ধের তদারকির জন্য গঠন করা যুদ্ধকালীন জরুরি ঐক্যের সরকার থেকে নিজের মধ্যপন্থি দলের সমর্থন তুলে নেবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

 

পশ্চিমা সমর্থন বন্ধেই ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডি শেষ হবে : ইরান
গত শুক্রবার সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেলকে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অটুট সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমর্থনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বেদনাদায়ক ট্র্যাজেডি এবং বেপরোয়া ও নৃশংস সহিংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুধু তাদের সমর্থন বন্ধ হলে এই সংঘাত অবসান ঘটাতে পারে। এর আগে শুক্রবার তেহরানে জুমার খুতবায় আল-আকসা তুফান অভিযানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ইরানে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ কাজেম সিদ্দিকী বলেন, ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযানের মধ্যদিয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মৌলিক দুর্বলতা ফাঁস হয়ে গেছে এবং তাদের ধ্বংসের সূচনা হয়েছে। এই অভিযানের ফলে কিছু দেশের সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে এবং তা কখনোই আর আগের অবস্থায় ফিরবে না। ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযান পাশ্চাত্যের কথিত লিবারেল ডেমোক্রেসি এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অস্তিত্বের ওপর অপূরণীয় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরাও বলছেন ইহুদিবাদ বা জায়নবাদ গলে যাচ্ছে এবং বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

নোয়াখালীতে মোটরসাইকেল থেকে উদ্ধার ৩ হাজার ৯৬০ পিস ইয়াবা, মাদককারবারি গ্রেপ্তার

জাতিসংঘের কালোতালিকায় ইসরায়েলি বাহিনী

আপডেট সময় : ০৯:৪৮:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুন ২০২৪

▶এই সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ
▶বেশিরভাগ ইসরায়েলিই ভোট দেবে না নেতানিয়াহুকে
▶পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রী গ্যান্টজ
▶পশ্চিমা সমর্থন বন্ধেই ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডি শেষ হবে : ইরান

সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের ক্ষতি করার দায়ে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীকে ‘কালোতালিকাভুক্ত’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতিসংঘ। যুদ্ধনীতি ভেঙে যেসব দেশ শিশুদের ওপর চড়াও হয়েছে, সেসব দেশকে নিয়ে এ তালিকা করেছে সংস্থাটি। নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উত্থাপনের পর সপ্তাহখানেক বাদে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার কথা রয়েছে। গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলে রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান। এদিকে এ-সংক্রান্ত এক ফোনকলের ভিডিও এক্সে তিনি প্রকাশ করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। গিলাদকে জাতিসংঘের ওই সিদ্ধান্তের কথা জানাতে ফোন করেছিলেন সংস্থার এক কর্মকর্তা। এ সময় গিলাদ ফোনকলে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এর অংশবিশেষ এক্সে পোস্ট করেন। ভিডিও কলে গিলাদকে দাবি করতে শোনা যায়, বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক সেনাবাহিনী ইসরায়েলের। এ সময় তিনি আন্তোনিও গুতেরেসকে কালোতালিকাভুক্ত একমাত্র মহাসচিব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। গুতেরেস সন্ত্রাসবাদকে উৎসাহিত করেন এবং তিনি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঘৃণা উসকে দেন। তিনি জাতিসংঘের এমন সিদ্ধান্তকে আপত্তিজনক ও ভুল পদক্ষেপ বলেও উল্লেখ করেন।

ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতের এমন আচরণে বিস্ময় প্রকাশ করে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, তার ২৪ বছরের চাকরিজীবনে কোনো কূটনীতিককে এমন অপেশাদারি আচরণ করতে দেখেননি। সশস্ত্র সংঘাতে শিশুদের প্রতি আইন লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর তালিকাসংবলিত একটি প্রতিবেদন ১৪ জুন নিরাপত্তা পরিষদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। এর কয়েক দিন পর এ সিদ্ধান্তের কথা জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে। তালিকায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর নামও রয়েছে। এ তথ্য জানাতেই কাজের অংশ হিসেবে তাঁদের একজন কর্মকর্তা গিলাদকে ফোন করেন। অথচ গিলাদ ওই ফোনকলের কথোপকথনের ভিডিও করেন এবং অংশবিশেষ এক্সে প্রকাশ করেন।

 

গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ হাজার ৭৩১ জনের বেশি ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শিশুই ১৫ হাজার ৫৭১টি। হামলায় আরো ৮৩ হাজার ৫৩০ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের প্রতি ১০ শিশুর ৯টিই তীব্র খাবারসংকটে ভুগছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রায় তিন হাজার ফিলিস্তিনি শিশু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। অনেককে চেতনানাশক ছাড়াই অঙ্গচ্ছেদ করাতে হচ্ছে।

 

 

সিদ্ধান্ত স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন পক্ষ :
জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ। এ কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রিয়াদ মালিকি এক বিবৃতিতে বলেছেন, অনেক বিলম্বে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাজায় কোন ধরনের বিপর্যয় চলছে, তা বিশ্ব এখন খালি চোখেই দেখছে। সেখানে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে কালোতালিকাভুক্ত না করতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সামনে আর কোনো অজুহাতের পথ খোলা ছিল না।

ইসরায়েলকে কালোতালিকাভুক্তির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটির মানবিক নীতি ও পরামর্শবিষয়ক বিভাগের প্রধান আলেকজান্দ্রা সায়েহ বলেন, এটা সত্যিকারে লজ্জাজনক ঘটনা যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন পর্যন্ত গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারল না। জাতিসংঘের এ সিদ্ধান্ত ইসরায়েলকে জবাবদিহির মুখে দাঁড় করাতে পথ তৈরি করবে। তবে একই ধরনের অপরাধে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জ-দিন আল-কাসাম ব্রিগেড ও আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদকেও কালোতালিকাভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

 

নেতানিয়াহুকে ভোট দেবে না বেশিরভাগ ইসরায়েলিরা :
ইসরায়েলের বেশিরভাগ জনগণ আসন্ন নির্বাচনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু বা তাকে সমর্থনকারী কোনো দলকে ভোট দেবে না। গত শুক্রবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম চ্যানেল ১২ একটি জনমত জরিপে এমন ফলাফল দেখা গেছে বলে জানিয়েছে। জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ ভোটার ইসরায়েলের নেতা হিসাবে নেতানিয়াহুকে বা তাকে সমর্থন করে এমন কোনো দলের পক্ষে তাদের ভোট দেবেন না। ১৯ শতাংশ ভোটার নেতানিয়াহুর পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বাকি ১৯ শতাংশ ভোটার এখনও সিদ্ধান্ত নেননি বলে জানিয়েছেন। নেতাহিয়াহু ব্লকের ভোটার হিসেবে পরিচিত এমন ৩০ শতাংশ ভোটার বলেছেন, তারা নেতানিয়াহু বা তাকে সমর্থনকারী কোনো দলকে ক্ষমতায় দেখতে চান না। ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় বন্দি ইসরায়েলিদের মুক্তির জন্য আন্দোলন করে আসছে জিম্মিদের পরিবার ও সাধারণ জনগণ। এছাড়াও বিচার বিভাগের ক্ষমতা সীমিত করার বিতর্কিত আইন পাশের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হন নেতানিয়াহু।

 

পদত্যাগ করছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রী গ্যান্টজ :
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এর জেরে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। গত শুক্রবার দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের ওপর থেকে তার দলের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ইসরায়েলের পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন বলছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা অনুমোদন না করার কারণে গ্যান্টজ পদত্যাগ করছেন। গত মাসে এক টেলিভিশন ভাষণে গ্যান্টজ হুমকি দিয়েছেলেন, গাজা নিয়ে যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা অনুমোদন না দিলে তিনি পদত্যাগ করবেন। তিনি এজন্য ৮ জুন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেননি নেতানিয়াহু।

এর আগে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় যুদ্ধ শেষে অবরুদ্ধ গাজায় শাসনের জন্য ছয় দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন বেনি গ্যান্টজ। গ্যান্টজের ছয় দফায় হামাসের পতন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেন। যদি তার চাওয়া পূরণ করা না হয়, তাহলে তিনি গত বছর গাজা যুদ্ধের তদারকির জন্য গঠন করা যুদ্ধকালীন জরুরি ঐক্যের সরকার থেকে নিজের মধ্যপন্থি দলের সমর্থন তুলে নেবেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

 

পশ্চিমা সমর্থন বন্ধেই ফিলিস্তিনি ট্র্যাজেডি শেষ হবে : ইরান
গত শুক্রবার সামাজিকমাধ্যম এক্স-এ ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেলকে উদ্ধৃত করে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অটুট সমর্থনের নিন্দা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সমর্থনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বেদনাদায়ক ট্র্যাজেডি এবং বেপরোয়া ও নৃশংস সহিংসতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। শুধু তাদের সমর্থন বন্ধ হলে এই সংঘাত অবসান ঘটাতে পারে। এর আগে শুক্রবার তেহরানে জুমার খুতবায় আল-আকসা তুফান অভিযানের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ইরানে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ কাজেম সিদ্দিকী বলেন, ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযানের মধ্যদিয়ে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মৌলিক দুর্বলতা ফাঁস হয়ে গেছে এবং তাদের ধ্বংসের সূচনা হয়েছে। এই অভিযানের ফলে কিছু দেশের সঙ্গে দখলদার ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে এবং তা কখনোই আর আগের অবস্থায় ফিরবে না। ফিলিস্তিনিদের আল-আকসা তুফান অভিযান পাশ্চাত্যের কথিত লিবারেল ডেমোক্রেসি এবং ইহুদিবাদী ইসরায়েলের অস্তিত্বের ওপর অপূরণীয় আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরাও বলছেন ইহুদিবাদ বা জায়নবাদ গলে যাচ্ছে এবং বিলীন হয়ে যাচ্ছে।