◆ টাকা ফেরত অথবা অন্য দেশে পাঠানোর চেষ্টা
◆ তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়
◆ আরও দক্ষ কর্মী নেবে জাপান
মালয়েশিয়ায় যেতে ব্যর্থ শ্রমিকদের দিন কাটছে চরম হতাশায়। ভিসা ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়া প্রায় ১৭ হাজার কর্মীকে বেঁধে দেওয়া ডেডলাইন ৩১ মে‘র মধ্যে দেশটিতে পাঠাতে ব্যর্থ হয়েছে বেসরকারি এজেন্সিগুলো। তবে এ ব্যর্থতার জন্য মালয়েশিয়ার সরকার এবং দেশের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়েরও দায় আছে বলে জানাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন-বায়রা।
অবশ্য মন্ত্রণালয়টির পক্ষ থেকে এ দায় অস্বীকার করে জড়িত এজেন্সি চিহ্নিত করার জন্য গঠিত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জমা দেওয়া মোটা অঙ্কের টাকা ফেরত নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অবশ্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস-বায়রার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। তবে এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে নিজেদের মতো করে কর্মীদের ক্ষতি পোষানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কারণ ভিসা আনতে এজেন্সিগুলোরও খরচ হয়েছে। বিষয়টি সমাধান না করলে তাদেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে কর্মীদের টাকা ফেরত অথবা অন্য দেশে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বঞ্চিত কর্মীদের মালয়েশিয়া পাঠাতে সরকারের প্রতি কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোরও আহ্বান জানিয়েছেন এজেন্সি মালিকরা।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া কর্মী পাঠাতে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মংস্থান) নূর মো. মাহবুবুল হককে প্রধান করে ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ভুক্তোভোগীরা তদন্ত কমিটির কাছ থেকে প্রতিকারও চাইতে পারবেন। টাকা ফেরত পেতে কমিটির কাছে অভিযোগ করতে হবে।
কিন্তু বায়রার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এক্ষেত্রে সংগঠনের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে বলা হয়েছে, কিছুদিন সময় পেলে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে নিজেরাই টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা বলবে। আপাতত সরকারের পক্ষ থেকে যেন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা না নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে বায়রার যুগ্ম মহাসচিব-৩ টিপু সুলতান সবুজ বাংলাকে বলেন, আমরা চাই, সরকার কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বঞ্চিত কর্মীদের মালয়েশিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করুক। তবে সংক্ষুব্ধ কর্মীরা যাতে কোনো অভিযোগ নিয়ে মন্ত্রণালয়ে না যায় সেজন্য এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা টাকা ফেরত চাইবে তাদের তা ফেরত দেওয়া আর যারা অন্য দেশে যেতে চাইবে তাদেরকে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে কর্মীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে যেতে না পারা কর্মীদের টাকা ফেরত পাওয়ার চেয়ে তারা যাতে যেতে পারে সেটাই তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো বলে মনে করেন জনশক্তি রপ্তানি খাত বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া টাকা ফেরত পেলেও সেটা বেশ সময় সাপেক্ষ এবং সব টাকা না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তার চেয়ে বরং কর্মী যেতে পারলেই বেশি ভালো হয় বলে মনে করছেন তারা।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংস্থান বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিমের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রতিমন্ত্রী। তবে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আপাতত কর্মী না নেওয়ার ব্যাপারে মালয়েশিয়ার অবস্থান আগের মতোই আছে।
এদিকে, গতকাল রোববার প্রবাসী কল্যাণ ভবনে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মংস্থানবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ব্যর্থতার বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর সে অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও দক্ষ কর্মী নেবে জাপান : জাপানের কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানিয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানের বিভিন্ন কোম্পানির ১১ জনের একটি প্রতিনিধিদলের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ পেশাদার, কারিগরি ও নির্মাণশ্রমিক নিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমরা তাদের যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে আবেদন করার অনুরোধ জানিয়েছি।
জাপানের প্রতিনিধি দলকে তাদের প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণের জন্য টিটিসির ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেখানে তারা আগ্রহী কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করবে এবং যোগ্যদের বাছাই করতে সক্ষম হবে। জাপান প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের ভালো সংখ্যক দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন জাপানের ইউরিগুমি মেরিটাইম কোম্পানি লিমিটেডের মাসাফুমি ইউরিগুমি।


























