❖ ব্রিকসের নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র ‘নিউক্লিয়ার মেডিসিন’
দীর্ঘদিনের নীতির পরিবর্তন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা কয়েক মাস আগে ঘোষণা দেয়, ইউক্রেন তাদের অস্ত্র দিয়ে চাইলে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাতে পারে। এর পর থেকে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও হুমকির সুরে কথা বলা শুরু করেন। তিনি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য রাশিয়ায় সামরিক মহড়া চালান। পুতিন বলেন, মস্কো তার পারমাণবিক অস্ত্রাগার কখন ব্যবহার করবে, সে-সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তন করার কথা বিবেচনা করে দেখবে। তিনি ইউরোপের অজ্ঞাত ন্যাটো দেশগুলোকে মনে করিয়ে দেন, তাদের আয়তন ছোট এবং ঘন জনসংখ্যার। ফলে তাদের সহজেই নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব হবে।
গত সপ্তাহে রুশ নেতা তার হুমকিকে বিশ্বের অন্য প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তিনি উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে শীতল যুদ্ধ-যুগের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করেছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে তিনি ইউক্রেনকে পশ্চিমের অস্ত্র সরবরাহের প্রতিক্রিয়ায় কিম জং-উনকে অস্ত্র দিতে পারেন। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা বা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে আরও ধ্বংস ছাড়াও রাশিয়ান নেতা প্রমাণ করতে চাইছেন, তিনি অন্য উপায়ে এবং অন্যান্য জায়গায় পশ্চিমকে চাপে রাখতে পারেন।
যুদ্ধের শুরু থেকেই পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে বিরত রাখতে পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিয়ে আসছেন। পুতিন পিয়ংইয়ংয়ে দেখিয়েছেন, তিনি পারমাণবিক হামলা কিংবা গুলি চালানোর মতো ব্যবস্থা নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, ইউক্রেন থেকে অনেক দূরে গিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিচলিত করে তুলতে পারেন।
পিয়ংইয়ংকে অস্ত্রশস্ত্র দেওয়ার সম্ভাবনা পুতিনের শাসনকালের শুরুতেও অকল্পনীয় ছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধে তাঁর পররাষ্ট্রনীতি বদলে গেছে। শুধু উত্তর কোরিয়াই নয়, চলতি মাসের শুরুতে সেন্ট পিটার্সবার্গে পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন, তিনি ইয়েমেনের হুতিদের অস্ত্র দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। কারণ, তারা সমুদ্রে মার্কিন জাহাজ ও বিমান আক্রমণ করছে। উত্তর কোরিয়া, ইরানসহ আমেরিকার প্রতিপক্ষকে অস্ত্র সরবরাহের পাশাপাশি মস্কোর বিশেষজ্ঞরা সাইবার বা মহাকাশ হামলার আশঙ্কা নিয়েও আলোচনা করছেন।
ব্রিকসের নতুন সহযোগিতার ক্ষেত্র ‘নিউক্লিয়ার মেডিসিন’
গত ২০ জুন থেকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে শুরু হয়েছে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিষয়ে ব্রিকস দেশগুলোর আন্তর্জাতিক ফোরাম। ইথিওপিয়া, চীন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতসহ ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলোর ২৫০ জনের বোশী প্রতিনিধি ফোরামে অংশগ্রহণ করছে। এই ফোরামটি আয়োজন করেছে রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এবং রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রসাটম।
ফোরামে রুশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মিখাইল মুরাশকা তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আজকে আমরা ব্রিকস গ্রুপের মধ্যে নতুন একটি ধারা ‘ব্রিকস নিউক্লিয়ার মেডিসিন’র সূচনার সাক্ষী হতে যাচ্ছি। অ্যাটমেডিক্যাল পদ্ধতি এবং ট্যুল ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্রিকস সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সক্ষমতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নতুন অনেক কিছু অর্জন করতে সক্ষম।
ফোরাম চলাকালে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞরা ক্যান্সার এবং অন্যান্য জটিল রোগে মৃত্যুহার হ্রাস, জীবন মান উন্নয়নের অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে ব্রিকস ফ্রেম ওয়ার্কের ভিতরে কার্যকর সহযোগিতার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে কাজ করবেন। বিভিন্ন অনকোলজি, কার্ডিওলজি, এন্ডোক্রাইনোলজি এবং সাইকিয়াট্রি রোগের নির্নয় এবং চিকিৎসার জন্য কার্যকরী রেডিওফার্মাসিউটিক্যালের উদ্ভাবন এবং উৎপাদন বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা সক্রিয় আলোচনা করবেন। এছাড়াও বিশেষায়িত শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ, মেডিকেল চর্চায় উন্নত রেডিও ফার্মাসিউটিক্যাল এবং বিশেষায়িত ইকুইপমেন্টের ব্যবহার নিয়ে দেশগুলোর জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যেসকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তা নিয়েও বিশদ আলোচনা করা হবে।
ফোরামে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা, জাতীয় নিউক্লিয়ার মেডিসিন সোসাইটিসহ সংশ্লিষ্ট পেশাদার সংস্থার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা; রেডিওআইসোটোপ উৎপাদনকারী সংস্থা এবং রেডিওফার্মাসিউটিক্যাল উদ্ভাবন ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞবৃন্দ; বৃহৎ অনকোলজি ক্লিনিক, কার্ডিওলজি সেন্টারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, যারা নিউক্লিয়ার মেডিসিন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন তাদের প্রধানরা।
ব্রিকস নিউক্লিয়ার মেডিসিনে উত্তম চর্চাগুলোর একটি পর্যালোচনা প্রতিবেদন ফোরামের পর জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ক্যান্সার গবেষণা বিষয়ে আন্তর্জাতিক এজেন্সি এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সিকে প্রদান করা হবে এবং তাদের সাইটে আপলোড করা হবে। এর আগে ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে রাশিয়ার উদ্যোগে নিউক্লিয়ার মেডিসিন বিষয়ক ব্রিকস ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়। আইসোটোপ পণ্যের সংখ্যার বিচারে বিশ্বে রাশিয়ার অবস্থান প্রথম এবং আইসোটোপ উৎপাদনকারী হিসেবে শীর্ষ পাঁচটি দেশগুলোর একটি। চীন, ভারত, ব্রাজিলসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রুশ মেডিক্যাল আইসোটোপের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।


























