০১:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জান্তা বাহিনীতে ঢোকাতে তরুণদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই-সংঘাত চলছে। এই সংঘাত রাজ্যের রোহিঙ্গা ও রাখাইন তরুণদের শিক্ষা ও কাজ করার স্বপ্নকে ক্রমেই ফিকে করে ফেলছে। তারা জীবন বাঁচাতে কিংবা লড়াইয়ে যোগ দেওয়া এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এমনই একজন রাজ্যের সংখ্যাগুরু রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর থুরা মাআং। ১৮ বছরের এই তরুণ রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় শহর মায়বনে থাকেন। সেখানে গত বছরের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সঙ্গে তীব্র লড়াই শুরু হয়। পরের মাসেই প্রথম বাড়িঘর ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে নদী পার হয়ে পালিয়ে যান থুরা মাআং। কয়েক দিন পর তারা ফিরেও আসেন। কিন্তু পরের কয়েক মাসে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে থুরার পরিবার আরও দুবার শহরের বাড়িঘর ছেড়ে গ্রামে পালিয়ে যায়। যুদ্ধের কারণে মাআং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। পড়াশোনা নিয়ে হতাশ এই তরুণ বলেন, ‘নিজের জীবনকে উন্নত করার কোনো সুযোগ সেখানে নেই এবং আমি কোনো ভবিষ্যতও দেখতে পাচ্ছি না।’

একই অবস্থা আরেক তরুণ জুবায়েরের। রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান জাতিগোষ্ঠীর এই তরুণের বাড়ি মাআংদাউ শহরতলিতে। ২৪ বছরের এই তরুণ সংঘাত শুরুর আগে রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা একটি নাগরিক সংগঠনে চাকরি করতেন। সংঘাত শুরু হলে তাদের অফিস বন্ধ হয়ে যায়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী জোর করে রোহিঙ্গা তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করলে সেটা এড়াতে জুলাইয়ে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যান জুবায়ের। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না, কাজে যেতে পারছি না, এমনকি সময়মতো ঘুমাতেও পারছি না। যে সময়ে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ছিল, সে সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
জুবায়ের ও থুরা মাআং মিয়ানমারের নতুন প্রজন্মের তরুণদের প্রতিচ্ছবি, দেশটিতে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর যাদের জীবন পুরো উল্টে গেছে। ২০১৭ সালে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গার পর থেকেই রাখাইন রাজ্য অশান্ত। অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যুদ্ধ তরুণদের জীবনে কী প্রভাব ফেলছে, তা জানতে সেখানকার চার তরুণের সঙ্গে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

জনপ্রিয় সংবাদ

জান্তা বাহিনীতে ঢোকাতে তরুণদের তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

আপডেট সময় : ০৯:৪২:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই-সংঘাত চলছে। এই সংঘাত রাজ্যের রোহিঙ্গা ও রাখাইন তরুণদের শিক্ষা ও কাজ করার স্বপ্নকে ক্রমেই ফিকে করে ফেলছে। তারা জীবন বাঁচাতে কিংবা লড়াইয়ে যোগ দেওয়া এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এমনই একজন রাজ্যের সংখ্যাগুরু রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর থুরা মাআং। ১৮ বছরের এই তরুণ রাখাইন রাজ্যের উপকূলীয় শহর মায়বনে থাকেন। সেখানে গত বছরের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতাকামী আরাকান আর্মির সঙ্গে তীব্র লড়াই শুরু হয়। পরের মাসেই প্রথম বাড়িঘর ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে নদী পার হয়ে পালিয়ে যান থুরা মাআং। কয়েক দিন পর তারা ফিরেও আসেন। কিন্তু পরের কয়েক মাসে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়লে থুরার পরিবার আরও দুবার শহরের বাড়িঘর ছেড়ে গ্রামে পালিয়ে যায়। যুদ্ধের কারণে মাআং যে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতেন, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। পড়াশোনা নিয়ে হতাশ এই তরুণ বলেন, ‘নিজের জীবনকে উন্নত করার কোনো সুযোগ সেখানে নেই এবং আমি কোনো ভবিষ্যতও দেখতে পাচ্ছি না।’

একই অবস্থা আরেক তরুণ জুবায়েরের। রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান জাতিগোষ্ঠীর এই তরুণের বাড়ি মাআংদাউ শহরতলিতে। ২৪ বছরের এই তরুণ সংঘাত শুরুর আগে রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করা একটি নাগরিক সংগঠনে চাকরি করতেন। সংঘাত শুরু হলে তাদের অফিস বন্ধ হয়ে যায়। মিয়ানমার সেনাবাহিনী জোর করে রোহিঙ্গা তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ শুরু করলে সেটা এড়াতে জুলাইয়ে নিজ বাড়ি থেকে পালিয়ে যান জুবায়ের। তিনি আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমরা বাড়িতে থাকতে পারছি না, কাজে যেতে পারছি না, এমনকি সময়মতো ঘুমাতেও পারছি না। যে সময়ে আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ছিল, সে সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
জুবায়ের ও থুরা মাআং মিয়ানমারের নতুন প্রজন্মের তরুণদের প্রতিচ্ছবি, দেশটিতে ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর যাদের জীবন পুরো উল্টে গেছে। ২০১৭ সালে ভয়াবহ জাতিগত দাঙ্গার পর থেকেই রাখাইন রাজ্য অশান্ত। অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। যুদ্ধ তরুণদের জীবনে কী প্রভাব ফেলছে, তা জানতে সেখানকার চার তরুণের সঙ্গে কথা বলেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।