বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি হলে তলিয়ে যায় ফসলি জমি, পানিবন্দী হয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করে হাজার হাজার পরিবার।
কক্সবাজার সদর উপজেলার
খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মিত ৬ নং ফোল্ডারের বেড়িবাঁধ দিয়ে অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে তলিয়ে যায় খুরুশকুল ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের তেতৈয়া, ২নং ওয়ার্ডের ডেইল পাড়া ও ৩নং ওয়ার্ডের রাস্তার পাড়া পেঁচার ঘোনা এলাকার ১২,হাজার হেক্টর ফসলি জমি, চিংড়ি ঘের,লবন মাঠ সহ হাজার হাজার ঘরবাড়ি।
কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বেসরকারি উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে একটি বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র। দৈনিক ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে এই কেন্দ্র থেকে, যা প্রতিদিনই জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
এই বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজের জন্য রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে এই বেড়িবাঁধ। এই বেড়িবাঁধপর ওপর দিয়ে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবহৃত ভারিযান চলাচলের কারণে বেড়িবাঁধটি ৩/৪ ফুট নিচে দেবে যায়।
২০২০ সালে চীনের অর্থায়নে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইউএস, ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান।
এই প্রতিষ্ঠানটি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত বেড়িবাঁধটিকে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের সুবিধার জন্য বেড়িবাঁধ ধ্বংস করে বেড়িবাঁধের চেয়ে ৩-৪ফুট নিচে গাড়ি চলাচলের উপযোগী রাস্তা করে। এবং প্রকল্প শেষে পুনরায় বেড়িবাঁধটি সংস্কার করে দেওয়ার কথা। প্রকল্প শেষ হলেও রাস্তা রাস্তাই থেকে গেল।
এদিকে অতিবৃষ্টি হলেই বাকঁখালীর লবনাক্ত পানি রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্লাবিত হয় ১২,জাজার হেক্টর জমি, কৃষকের ধানক্ষেত, চিংড়ি ঘের লবন মাঠ। পানিবন্দি হয়ে যায় হাজার হাজার পরিবার। কিন্তু এইবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় প্রশাসন, এলজিইডি নীরব ভূমিকা পালন করছেন বলে এলাকাবাসীর দাবী।
ভুক্তভোগী ডেইলপারা মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে আমরা বর্ষা আসলে আতঙ্কে থাকি ঘরবাড়ি তলিয়ে যায়।এই লবণাক্ত পানি এসে আমাদের সবকিছু ধ্বংস করে দেয়।
খুরুশকুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কৃষিবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। কৃষিকাজের জন্য তিনি বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প দিয়েছে। খুরুশকুল এলাকায় ২০১৩-২০১৪সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছেন যেখানে শত শত বসতি হাজার হাজার লোক বসবাস করে, সেখানে বাকঁখালী নদীর লবণাক্ত পানি থেকে রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার সেই বেড়িবাঁধটি সংস্কার করেছে। কিন্তু ঐস্থানে আরেকটি উন্নয়ন প্রকল্প বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের মালামাল আনয়নের লক্ষ্যে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য ঐ বেড়িবাঁধকে রাস্তা হিসেবে ব্যবহারের উপযোগী করেছে। রাস্তাটি বড় মালবাহী গাড়ীর চাপে পূর্বের বেড়িবাঁধের চেয়ে ৩-৪ফুট নিচু হওয়ায় বাকঁখালী নদীর লবণাক্ত পানি প্লাবিত হয়ে খুরুশকুলের ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সকল গ্রামের আবাসস্থল, কৃষি জমি, চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। অমাবস্যা পূর্ণিমায় জোয়ারের পানির উচ্চতা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন খুরুশকুল এলাকাবাসীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা ও বাড়তে থাকে।
তিনি আরো বলপন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, হুইপ সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি সহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কে অনুরোধ করব এই খুরুশকুলের জানমাল রক্ষার্থে অচিরেই যাতে ভারী পরিবহনে গাড়ি চলাচলে দেবে যাওয়া রাস্তা সংস্কার করে খুরুশকুল বাসীকে রক্ষায় এগিয়ে আসে।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কক্সবাজার এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ এর সাথে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, ২০১৪সালে আমরা খুরুশকুল-ভারুয়াখালী অঞ্চলের নদীর উপকূলে বেড়িবাঁধ সংস্কার করি। কিন্তু ২০২০সালে সরকারের মেগা প্রকল্প বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করায় বেড়িবাঁধকে চলাচলের উপযোগী করার জন্য রাস্তা নির্মাণ করেছে। তাই এই কাজটির বিষয়ে বর্তমানে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই বিষয়ে আমাদের কোন কিছু করার নেই। যদি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, তবেই আমরা পুনরায় বেড়িবাঁধ পূর্ণ নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারব।
অন্যদিকে সদর উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তৌহিদুল ইসলামের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, এলজিইডির পক্ষ থেকে উল্লেখিত বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে কোন প্রকার রাস্তার কাজ ইতিপূর্বে করা হয়নি। এটি মূলত ইউএস–ডিকে গ্রিন এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি মালামাল পরিবহনের সুবিধার্থে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করেছে। তবে ভবিষ্যতে এটি এলজিইডির পক্ষ থেকে রাস্তার কাজের প্রকল্প আসতে পারে।
খুরুশকুল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহাজান সিদ্দিকীর কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছি আমাদের নেতৃবৃন্দ সহ সকলে মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট যথাযথ আবেদন করে উপযুক্ত সমস্যা সমাধানের চেষ্টায় তদবির চালিয়ে যাচ্ছি।


























