১২:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ফ্রান্স পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট

কট্টর ডানপন্থিদের জয়, ম্যাক্রোঁর জোটের ভরাডুবি

French far-right Rassemblement National (RN) party leader Marine Le Pen speaks during an interview on the evening news broadcast of French TV channel TF1, in Boulogne-Billancourt, outside Paris, on June 10, 2024. Analysts say the French President has taken the extremely risky gamble of dissolving the national parliament in a bid to keep the far-right Rassemblement National (RN) party out of power when his second term ends in 2027, after the far right crushed his centrist alliance in the June 9, 2024 European Elections. The announcement sparked widespread alarm across France, even from within the ranks of his own party. - POOL solely for AP and ABACA (Photo by JULIEN DE ROSA / POOL / AFP) / POOL solely for AP and ABACA

◉ ৪ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি
◉ আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটগ্রহণ

ফ্রান্সে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গত রোববার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে জয় পেয়েছেন কট্টর ডানপন্থিরা। অন্যদিকে ভোটে হতাশাজনক ফল পেয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোট। ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট নির্বাচনের ফলাফলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। অবশ্য মেরিন লে পেনের নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থি দল আরএন এবার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে আগেই বিভিন্ন জনমত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছিল।  ফ্রান্সের অসাধারণ গুরুত্ববহনকারী এবং মেরুকরণের এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাব সংস্থার হিসেবে ভোটের হার ছিল ৬৭.৫ শতাংশ। নিয়মিত সংসদীয় নির্বাচনে ১৯৮১ সালের পর এটাই ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি ভোটের হার। দুই বছর আগে ২০২২ সালে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৭.৫ শতাংশ।

গতকাল বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের সংসদীয় নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে জয়ী হয়ে ডানপন্থিরা সরকার গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের ঐতিহাসিক সুযোগের সম্ভাবনা দেখছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে মেরিন লে পেন-এর উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের পর ফরাসি জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।

মূলত গত জুন মাসের ৬-৯ তারিখের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে আরএন-এর হাতে ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোটের ভরাডুবি হলে, ম্যাক্রোঁ বেশ আকস্মিকভাবেই জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও হতবাক করে দেন ম্যাক্রোঁ। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত – যেটা অনেকে বাজী ধরার সঙ্গে তুলনা করেছেন – এখন উল্টো ফল দিতে যাচ্ছে। ম্যাক্রোঁর জোট এখন পার্লামেন্টে আগের চেয়ে ছোট আকার ধারণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁর ক্ষমতা তার মেয়াদের বাকি তিন বছরে অনেকটা খর্ব হয়ে যাবে।

ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় পোলিং সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, প্রথম দফায় নির্বাচনে আরএন পেয়েছে ৩৪.৫ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট অ্যালায়েন্স ২৮.৫ থেকে ২৯.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর ম্যাক্রোঁর জোট পেয়েছে ২০.৫ শতাংশ থেকে ২১.৫ শতাংশ ভোট। ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে আরএন। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের পর তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৮৯ আসন পাবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সংস্থাগুলোর হিসাবে অবশ্য ভিন্নতা আছে। ইপসস-এর প্রজেকশন অনুযায়ী, আরএন পাবে ২৩০ থেকে ২৮০ আসন; ইফপ-এর হিসাব হচ্ছে তারা ২০৪ থেকে ২৭০টি আসন পাবে; এবং এলাব একমাত্র সংস্থা যারা এরএন-এর আসন সংখ্যা ২৬০ থেকে ৩১০টির মধ্যে থাকবে বলে অনুমান করেছে।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এক বিবৃতিতে যেসব এলাকায় কোনও প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে জয় পাননি এবং যেখানে দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে, সেসব জায়গায় উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে বড় জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। বামপন্থি জোট এবং প্রেসিডেন্টের দল আশা করছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা বুঝে একে অপরের প্রার্থীকে ভোট দিলে আরএন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। রাফায়েল গ্লুক্সমান নামে বামপন্থি জোটের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, ফ্রান্সেকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের হাতে সাত দিন সময় আছে।

উল্লেখ্য, ফরাসি নির্বাচনে অভিবাসন-বিরোধী আরএন পার্টি এমন এক সময়ে এগিয়ে গেছে যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ তৃতীয় বছরে গড়িয়েছে এবং জ্বালানি আর খাদ্য মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই রাউন্ডের এই ভোট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো উগ্র ডানপন্থিদের ক্ষমতায় আনতে পারে, এবং দলের নেতা লে পেনের শিষ্য ২৮-বছর বয়সী জর্ডান বরদেল্লাকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে পারে। বারদেল্লা এরই মধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি ‘সকল ফরাসির প্রধানমন্ত্রী’ হতে চান।

জনপ্রিয় সংবাদ

ফ্রান্স পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট

কট্টর ডানপন্থিদের জয়, ম্যাক্রোঁর জোটের ভরাডুবি

আপডেট সময় : ০৮:০৮:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

◉ ৪ দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি
◉ আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটগ্রহণ

ফ্রান্সে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গত রোববার অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে জয় পেয়েছেন কট্টর ডানপন্থিরা। অন্যদিকে ভোটে হতাশাজনক ফল পেয়েছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোট। ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট নির্বাচনের ফলাফলে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। অবশ্য মেরিন লে পেনের নেতৃত্বাধীন কট্টর ডানপন্থি দল আরএন এবার প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে আগেই বিভিন্ন জনমত জরিপে আভাস দেওয়া হয়েছিল।  ফ্রান্সের অসাধারণ গুরুত্ববহনকারী এবং মেরুকরণের এই নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাব সংস্থার হিসেবে ভোটের হার ছিল ৬৭.৫ শতাংশ। নিয়মিত সংসদীয় নির্বাচনে ১৯৮১ সালের পর এটাই ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি ভোটের হার। দুই বছর আগে ২০২২ সালে ভোটার উপস্থিতি ছিল মাত্র ৪৭.৫ শতাংশ।

গতকাল বার্তাসংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের সংসদীয় নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে জয়ী হয়ে ডানপন্থিরা সরকার গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণের ঐতিহাসিক সুযোগের সম্ভাবনা দেখছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোট তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে মেরিন লে পেন-এর উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র‌্যালি (আরএন) আগামী ৭ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোটের পর ফরাসি জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য তাদের নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠতা প্রয়োজন।

মূলত গত জুন মাসের ৬-৯ তারিখের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে আরএন-এর হাতে ম্যাক্রোঁর মধ্যপন্থি জোটের ভরাডুবি হলে, ম্যাক্রোঁ বেশ আকস্মিকভাবেই জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নিজের কিছু ঘনিষ্ঠ মিত্রদেরও হতবাক করে দেন ম্যাক্রোঁ। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত – যেটা অনেকে বাজী ধরার সঙ্গে তুলনা করেছেন – এখন উল্টো ফল দিতে যাচ্ছে। ম্যাক্রোঁর জোট এখন পার্লামেন্টে আগের চেয়ে ছোট আকার ধারণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁর ক্ষমতা তার মেয়াদের বাকি তিন বছরে অনেকটা খর্ব হয়ে যাবে।

ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় পোলিং সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, প্রথম দফায় নির্বাচনে আরএন পেয়েছে ৩৪.৫ শতাংশ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বামপন্থি নিউ পপুলার ফ্রন্ট অ্যালায়েন্স ২৮.৫ থেকে ২৯.১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। আর ম্যাক্রোঁর জোট পেয়েছে ২০.৫ শতাংশ থেকে ২১.৫ শতাংশ ভোট। ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাবে আরএন। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডের পর তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ২৮৯ আসন পাবে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সংস্থাগুলোর হিসাবে অবশ্য ভিন্নতা আছে। ইপসস-এর প্রজেকশন অনুযায়ী, আরএন পাবে ২৩০ থেকে ২৮০ আসন; ইফপ-এর হিসাব হচ্ছে তারা ২০৪ থেকে ২৭০টি আসন পাবে; এবং এলাব একমাত্র সংস্থা যারা এরএন-এর আসন সংখ্যা ২৬০ থেকে ৩১০টির মধ্যে থাকবে বলে অনুমান করেছে।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ এক বিবৃতিতে যেসব এলাকায় কোনও প্রার্থী প্রথম রাউন্ডে জয় পাননি এবং যেখানে দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে, সেসব জায়গায় উগ্র ডানপন্থিদের বিরুদ্ধে বড় জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। বামপন্থি জোট এবং প্রেসিডেন্টের দল আশা করছে, দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা বুঝে একে অপরের প্রার্থীকে ভোট দিলে আরএন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবে না। রাফায়েল গ্লুক্সমান নামে বামপন্থি জোটের এক প্রভাবশালী নেতা বলেন, ফ্রান্সেকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের হাতে সাত দিন সময় আছে।

উল্লেখ্য, ফরাসি নির্বাচনে অভিবাসন-বিরোধী আরএন পার্টি এমন এক সময়ে এগিয়ে গেছে যখন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ তৃতীয় বছরে গড়িয়েছে এবং জ্বালানি আর খাদ্য মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই রাউন্ডের এই ভোট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্সে প্রথমবারের মতো উগ্র ডানপন্থিদের ক্ষমতায় আনতে পারে, এবং দলের নেতা লে পেনের শিষ্য ২৮-বছর বয়সী জর্ডান বরদেল্লাকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে পারে। বারদেল্লা এরই মধ্যেই জানিয়েছেন, তিনি ‘সকল ফরাসির প্রধানমন্ত্রী’ হতে চান।