০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ : জাতিসংঘ

➢ গাজার আরেকটি বিদ্যালয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৯
➢ পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা বিদায়ি ইসরায়েলি জেনারেলের

গত নয় মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযান এবং সীমান্ত অবরোধের কারণে খাদ্যসামগ্রীর প্রবেশ ও সরবরাহ ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে গাজায়। ফলে ইতোমধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং সময় যত গড়াচ্ছে, দুর্ভিক্ষও তত ছড়িয়ে পড়ছে। খাদ্যের দুষ্প্রাপ্যতা এবং তার ফলে সৃষ্ট অপুষ্টি ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত এই শিশুদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন এলাকার।
গত মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এই তথ্যকে সমর্থন করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের প্যানেলও। গত মে মাসে গাজা সফরে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মনোনীত ১১ জন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্যানেলের সদস্যরা জানিয়েছেন, সফরের সময় তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং মধ্যাঞ্চলীয় উপশহর দেইর আল বালাহতে অপুষ্টিজনিত কারণে বেশ কয়েকজন শিশুকে মৃত ও মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছেন।
জাতিসংঘ প্যানেলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই শিশুদের মৃত্যু গাজায় ছড়িয়ে পড়তে থাকা দুর্ভিক্ষের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘ প্যানেলের এই বিবৃতিকে সমর্থন করে পৃথক এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত মিখায়েল ফাখরি বলেছেন, ‘ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেস ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিএস) নামের একটি সংস্থা রয়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এই সংস্থাটির এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, এই মুহূর্তে গাজায় চরম খাদ্যসংকটে রয়েছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ, যা ওই উপত্যকার মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক অংশ। যদি শিগগিরই ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্ত অবরোধ তুলে নিয়ে ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় না আনে, তাহলে এই সংকটে অচিরেই আক্রান্ত হবে আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

গাজার আরেকটি বিদ্যালয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৯
ফিলিস্তিনের গাজায় আরও একটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চার দিনে গাজার চারটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালাল ইসরায়েল। প্রতিটি বিদ্যালয়ই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গাজার হামাস সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে দক্ষিণের খান ইউনিসের পাশে আবাসান শহরের একটি বিদ্যালয়ে। সেখানে তাঁবু দিয়ে তৈরি আশ্রয়শিবিরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিস ও গাজা নগরীর বিভিন্ন অংশ খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের পর এসব এলাকা থেকে হাজারো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে গেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার তিনটি প্রধান হাসপাতালের কার্যক্রম। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা এখনো চলছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ৮৮ হাজারের বেশি।

পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা বিদায়ি ইসরায়েলি জেনারেলের
অধিকৃত পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছেন বিদায়ি ইসরায়েলি জেনারেল ইহুদা ফক্স। তিনি তার বিদায়ী অনুষ্ঠানে ইহুদা ফক্স বলেন, পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা জাতীয়তাবাদী অপরাধ করছে। তারা সহিংসতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। অথচ সেখানে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের জন্য কোনও হুমকিই নয়। আমার দৃষ্টিতে ইহুদিবাদ আর ইহুদি ধর্ম এক নয়। অন্তত আমি আমার বাবা-মা থেকে যে ধর্ম শিখেছি, তার সাথে ইহুদিবাদের কোনও মিল নেই। এটি তাওরাত নির্দেশিত ইহুদিবাদ নয়। বরং এর মাধ্যমে শত্রুদের পথ অবলম্বন করা হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে অভিযান বাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৫৫৩ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনী এবং ভূখণ্ডে বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৯ হাজার ৫১০ জনকে আটক করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

গাজার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে দুর্ভিক্ষ : জাতিসংঘ

আপডেট সময় : ০৯:১১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুলাই ২০২৪

➢ গাজার আরেকটি বিদ্যালয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৯
➢ পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা বিদায়ি ইসরায়েলি জেনারেলের

গত নয় মাস ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান অভিযান এবং সীমান্ত অবরোধের কারণে খাদ্যসামগ্রীর প্রবেশ ও সরবরাহ ব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে গাজায়। ফলে ইতোমধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং সময় যত গড়াচ্ছে, দুর্ভিক্ষও তত ছড়িয়ে পড়ছে। খাদ্যের দুষ্প্রাপ্যতা এবং তার ফলে সৃষ্ট অপুষ্টি ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এ পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৩৩ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত এই শিশুদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন এলাকার।
গত মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এই তথ্যকে সমর্থন করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের প্যানেলও। গত মে মাসে গাজা সফরে গিয়েছিলেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউএনএইচসিআরের মনোনীত ১১ জন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞের একটি প্যানেল। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে প্যানেলের সদস্যরা জানিয়েছেন, সফরের সময় তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিস এবং মধ্যাঞ্চলীয় উপশহর দেইর আল বালাহতে অপুষ্টিজনিত কারণে বেশ কয়েকজন শিশুকে মৃত ও মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছেন।
জাতিসংঘ প্যানেলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এই শিশুদের মৃত্যু গাজায় ছড়িয়ে পড়তে থাকা দুর্ভিক্ষের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ছে।
জাতিসংঘ প্যানেলের এই বিবৃতিকে সমর্থন করে পৃথক এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত মিখায়েল ফাখরি বলেছেন, ‘ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেস ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিএস) নামের একটি সংস্থা রয়েছে। জাতিসংঘ সমর্থিত এই সংস্থাটির এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, এই মুহূর্তে গাজায় চরম খাদ্যসংকটে রয়েছেন ৪ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ, যা ওই উপত্যকার মোট জনসংখ্যার পাঁচ ভাগের এক অংশ। যদি শিগগিরই ইসরায়েলি বাহিনী সীমান্ত অবরোধ তুলে নিয়ে ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় না আনে, তাহলে এই সংকটে অচিরেই আক্রান্ত হবে আরও লাখ লাখ ফিলিস্তিনি।

গাজার আরেকটি বিদ্যালয়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২৯
ফিলিস্তিনের গাজায় আরও একটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এই হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চার দিনে গাজার চারটি বিদ্যালয়ে বিমান হামলা চালাল ইসরায়েল। প্রতিটি বিদ্যালয়ই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়শিবির হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। গাজার হামাস সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, সর্বশেষ হামলাটি হয়েছে দক্ষিণের খান ইউনিসের পাশে আবাসান শহরের একটি বিদ্যালয়ে। সেখানে তাঁবু দিয়ে তৈরি আশ্রয়শিবিরে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা ছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনী খান ইউনিস ও গাজা নগরীর বিভিন্ন অংশ খালি করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের পর এসব এলাকা থেকে হাজারো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র সরে গেছেন। বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার তিনটি প্রধান হাসপাতালের কার্যক্রম। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় হামাস। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলা এখনো চলছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৩৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আহতের সংখ্যা ৮৮ হাজারের বেশি।

পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা বিদায়ি ইসরায়েলি জেনারেলের
অধিকৃত পশ্চিমতীরে বসতি সম্প্রসারণের নিন্দা জানিয়েছেন বিদায়ি ইসরায়েলি জেনারেল ইহুদা ফক্স। তিনি তার বিদায়ী অনুষ্ঠানে ইহুদা ফক্স বলেন, পশ্চিমতীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা জাতীয়তাবাদী অপরাধ করছে। তারা সহিংসতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছে। অথচ সেখানে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিরা ইসরায়েলের জন্য কোনও হুমকিই নয়। আমার দৃষ্টিতে ইহুদিবাদ আর ইহুদি ধর্ম এক নয়। অন্তত আমি আমার বাবা-মা থেকে যে ধর্ম শিখেছি, তার সাথে ইহুদিবাদের কোনও মিল নেই। এটি তাওরাত নির্দেশিত ইহুদিবাদ নয়। বরং এর মাধ্যমে শত্রুদের পথ অবলম্বন করা হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী এবং বসতি স্থাপনকারীরা অধিকৃত পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিনি শহর ও গ্রামে অভিযান বাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, গত ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৫৫৩ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনী এবং ভূখণ্ডে বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৯ হাজার ৫১০ জনকে আটক করা হয়েছে।