আজ বুধবার পবিত্র আশুরা। হিজরী সনের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ। ঐতিহাসিক কারবালার হƒদয় বিদারক ও গভীর শোকাবহ একটি দিন আজ। এছাড়া ইসলামের বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার কারণে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে এ দিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্যদিয়ে সারাদেশে পবিত্র আশুরা পালন করবেন ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
আরবি শব্দ ‘আশারা’ থেকে আশুরা শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ দশ, ১০ মহররমের এ দিনটিকে ‘আশুরা’ বলে অভিহিত করা হয়। হিজরী ৬১ সনের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) ১০ মহররম ইরাকের কুফা নগরের অদূরে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে এজিদ বাহিনীর হাতে সপরিবারে সঙ্গী-সাথীসহ নির্মমভাবে শহীদ হন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (রা.)। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে ইমাম হোসাইনের (রা.) আত্মত্যাগের এ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। এছাড়া আশুরার দিন মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এদিনেই কেয়ামত হবে। আশুরার দিনেই হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
এদিনে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে রক্ষা পান। মাছের পেট থেকে হজরত ইউনুস (আ.)-এর মুক্তি লাভ, মহাপ্লাবন থেকে হজরত নুহ (আ.) এর রক্ষা, লাঠি দিয়ে রাস্তা বানিয়ে হজরত মুসা (আ.) এর নীল নদ পার হওয়াসহ বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল এদিনে। মহররমের ৯ তারিখ দিবাগত রাত থেকে মূলত আশুরা উদযাপন শুরু হয়।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদাভাবে বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানরা নফল রোজা রাখা, কোরআন তেলাওয়াত, ইবাদত-বন্দেগিসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পবিত্র আশুরার দিনটি পালন করেন। শিয়া সম্প্রদায়ের উদ্যোগে দিনটিতে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বের করা হয় শোক মিছিল।
আশুরা উপলক্ষে আজ রাজধানীসহ দেশের বড় মসজিদগুলোতে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা সভা, জিকির ও মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন পৃথক কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করবে।
২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের আগে হোসাইনী দালানের ইমামবাড়ায় বোমা হামলায় দুজন নিহত হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর মিছিলটিতে কড়া নজরদারি রাখছে পুলিশ। তারপর থেকে কড়া নিরাপত্তায় প্রতিবছর দিনের বেলা তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হত।
আশুরার দিনে তাজিয়া মিছিল নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করতে কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গত সোমবার ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পবিত্র আশুরা উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত তাজিয়া মিছিলে পাইক দলভুক্ত ব্যক্তিবর্গ দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি নিয়ে অংশগ্রহণ করে যা ক্ষেত্র-বিশেষে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। যা ধর্মপ্রাণ, নগরবাসীর মনে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তার প্রতি হুমকি স্বরূপ। তাছাড়া মহররম মাসে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়। যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় নাগরিকবৃন্দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি ইত্যাদি বহন এবং আতশবাজি ও পটকা ফোটানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন ডিএমপি কমিশনার। এই আদেশ তাজিয়া মিছিল শুরু হতে শেষ সময় পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সারাদেশে সরকারি ছুটি। এ উপলক্ষে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় বিশেষ প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেলও এ দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। এ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকা অফিসগুলো আজ বন্ধ থাকবে। তাই বৃহস্পতিবার কোন পত্রিকা প্রকাশিত হবে না।






















