কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যোগাযোগ ব্যবস্হা স্বাভাবিক না থাকায় দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধি পেয়েছে তুলনামূলক বেশি। সাধারণ মানুষের কষ্ট চরমে।
গত শনিবার রাত থেকে দেশব্যাপী সরকার ১৪৪ ধারা জারি করলে বাজার ব্যবস্হা আরো বেঙ্গে পড়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কক্সবাজার বড়বাজারে ২৮ মিনিকেট চাউল গত সপ্তাহে ২৯৫০ তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৩৫০ টাকা। এরকম প্রতিটি চালে কেজি প্রতি ৫ থেকে ৬ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আদা ২৪০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৮০থেকে ৩০০ টাকা, পিয়াজ ৯০ টাকা থেকে ১২০, তেল ৫ লিটার ৮১০ থেকে এখন ৮৪০ থেকে ৮৫০ টাকা।
কাঁচা তরকারী ১০০টাকার নিছে নেই। পাতাকপি ১২০, টমেটু ২২০, লব্যাচই ১২০, বেন্ডি ১০০,শশা ১০০, কাঁচা মরিচ ২৫০টাকা। খুচরা মুদি ব্যবসায়ী বাদশা সওদাগর বলেন গাড়ি চলাচল না করার কারণে বাজার থেকে বেশি দামে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে বিধায় আমার ও কয়েক টাকা বেশি নিতে হচ্ছে। বাজার করতে আসা হাবিবুল্লাহ বলেন, আজ দুই দিন পর বাজার করতে এসে দেখি সব কিছুর দাম বৃদ্ধি ১০০০ টাকা ধার করে এনে ১০ কেজি চাল নেওয়ার পর ৩০০ টাকায় কি কিনবো বুঝতে পারছি না। আমরা চাই সকল পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসুক। এরকম চলতে থাকলে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ না খেয়ে মরে যাবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কক্সবাজারে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় মুলত গত ১৬ জুলাই, মঙ্গলবার, সকাল ১১টার দিকে কক্সবাজারে লিংক রেডে এক দল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। তারা মিছিল নিয়ে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সামনে এসে ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এক পর্যায়ে গাড়ি ভাংচুর, ইট পাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে দিয়ে কক্সবাজারের পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে।
সন্ধ্যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ছাত্র ছাত্রীদের মিছিল থেকে জেলা আওয়ামিলীগ কার্যালে হামলা হয়েছে বলে জানান, জেলা আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তাৎক্ষণিক জেলা আওয়ামিলীগ কার্য্যলয়ে হামলার প্রতিবাদে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে বিএনপি অফিস ভাংচুর হয় বলে দাবী করেন জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসুফ বদরী। শুরু হয় কক্সবাজারে মিছিল, পিকেটিং, আগুন, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে আতংক সৃষ্টি হয় মানুষের মাঝে, চারিদিকে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সারারাত দফায় দফায় পুলিশ, আওয়ামিলীগ ছাত্রলীগের সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনরত ছাত্র ছাত্রীদের সাথে সংঘর্ষে চলতে থাকে। এতে গুলি ও বোমার আঘাতে পথচারী সহ ৩৮ জন গুলিবিদ্ধ ১ জন ছাত্র নিহত হয়। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি রাকিবুজ্জামান বলেন ভোরের দিকে পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকতা ডাঃ আশেকুর রহমান জানান, ২ জনকে আশংকা জনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। একজনের গলায় ও আর এক জনের চোখে গুলির আঘাত পাওয়া যায়। ৫ জন ছাত্রকে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হলেও ৩১ জনকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। এর মধ্যে গলায় গুলিবিদ্ধ ছাত্র এহাছান ( ২২) চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়া খালী ইউনিয়নের আসাদ আলী পাড়ার হেলাল উদ্দিনের ছেলে। নিহত এহাছানের চাচা মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শনিবার রাত থেকে দেশব্যাপী সরকার ১৪৪ ধারা ঘোষণা করলে রাস্তায় নেমে আসে সেনাবাহিনী, তাদের সাথে অবস্থান করছে, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ এতে আতংকিত সাধারণ মানুষ হয়ে যায় ঘর বন্দী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে মাঝে ঝটিকা মিছিল দেখা গেলেও সেনাবাহিনীর, বিজিবির দখলে রাজপথ। পথে পথে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। দোকানপাট বন্ধ থাকায় কক্সবাজার হয়ে উঠে আতংকের নগরী।
এদিকে কক্সবাজারে আটকে পড়ে ১০ হাজার পর্যটক। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন আটকা পড়া পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্হায় গ্রহণ করেছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিভীষণ কান্তি দাশ।
খাবার হোটেল কমদামে খাবার, দেওয়া হয়েছে হোটেল মোটেল এ ৫০% ছাড়। ইউএস বাংলা চাুল করেছে বিশেষ ফ্লাইট। বিশেষ পাস দিয়ে ১৫০০ পর্যটক মাইক্রোবাসে করে চলে যায়। দ্বিতীয় ধাপে ৭১ টি বাসে করে ৩০০০ পর্যটককে আগে পিছে পুলিশ পাহারা দিয়ে পর্যটকদের নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে ব্যাবস্হা করেন এবং বাকিদের ও নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছাতে জেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গণি ওসমানী।
কারফিউ শিথিল হওয়া এবং অফিস আদালত চালু হওয়ায় জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।


























