✦ ব্যবসা-বাণিজ্যে ‘অপূরণীয় ক্ষতি’
✦ স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা
✦ ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা
✦ সহিংসতা ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব করোনা মহামারির চেয়ে বেশি
➤ ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী ছিল। এই ধাক্কা কতটা প্রবল হবে এবং কতদিন তার প্রভাব থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয় ➡ড. জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিস
➤ মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সেপ্রেসওয়ের মতো যেসব জনকল্যাণমূলক সেবার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে ➡আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট
চলমান সহিংসতা ও কারফিউতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। অতিমারি করোনাকালীন লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আবার বড় ধাক্কা খেলো ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুরো অর্থনীতি। এমন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে কোটা সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিত, তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। এই সংকটকে দেশের দ্বৈত বিপদ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। একদিকে বাস্তব জীবনের অচলাবস্থা অন্যদিকে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভার্চুয়াল অবরোধ। দেশের ভাবমর্যাদা সংকটে পড়ার আগেই আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া সচল রাখতে সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি কমে যাওয়া ও ডলার সংকটের কারণে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সেই মুহূর্তে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সহিংসতায় পোশাক কারখানা ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বন্দরের সব কার্যক্রম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারিসহ দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় সরকার। অর্থনীতিবিদরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেনÑ সহিংসতা ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব করোনা মহামারির পরিণতির চেয়ে বেশি হবে। এক হিসাব অনুযায়ী, টানা এই অস্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিদিন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার হারিয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের মতে, সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ায় কারখানাগুলো কাঁচামাল সংকটে পড়েছে। তিনি মনে করেন, সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে কোটা সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিত, তাহলে পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হতো না। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানপাট খুললেও ক্রেতাদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। ফলে, ব্যবসায়ীরা হতাশা প্রকাশ করেন।
আন্তর্জাতিক সংকট, মূল্যস্ফীতি আর ডলারের দরের দাপটে এমনিতেই চাপে ছিল দেশের অর্থনীতি, তার মধ্যে এলো কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নজিরবিহীন এক নৈরাজ্যের আঘাত। তাতে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, কীভাবে তা সামলে উঠবে বাংলাদেশ? টানা কারফিউয়ের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য আর অর্থনীতিতে ঠিক কী পরিমাণ ক্ষতি হলো, তা বুঝতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। তবে এর একটি ধারণা দিচ্ছেন দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও উৎপাদকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, বন্দর কার্যক্রম এবং কারখানা বন্ধ থাকায় এ খাতে প্রতিদিনের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার মতো। এই আস্থার ক্ষত মেরামতের ওপর এখন সবচেয়ে বেশি জোর দিতে বলছেন বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তার ভাষায়, আস্থা যত দ্রুত নামে, তত দ্রুত ওঠে না। বছর তিনেক ধরেই নানা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে সংকট, রাজস্ব ঘাটতিতে ঋণ নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি, ঋণের সুদ পরিশোধের দায় ও বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে রপ্তানি আয়ে ভাটা রয়েছে তালিকার উপরের দিকে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত কয়েকদিনে প্রতিদিন প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট ক্ষতি। কারণ বাংলাদেশ এরই মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছে।
তিনি বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্ন ঘটলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, যা এরই মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। আহসান এইচ মনসুর সতর্ক করে বলেন, সাম্প্রতিক এই সংকটের কারণে বাংলাদেশ রপ্তানি আদেশ হারাতে পারে। মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সেপ্রেসওয়ের মতো যেসব জনকল্যাণমূলক সেবার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। আরেক প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন এই সংকটকে দেশের দ্বৈত বিপদ হিসেবে অভিহিত করেছেন। যথাক্রমে- বাস্তব জীবনের লকডাউন এবং ভার্চুয়াল লকডাউন।
তিনি বলেন, এর প্রভাব করোনা মহামারির চেয়েও মারাত্মক হবে। কারণ মহামারিতে মানুষের ব্যবসা সচল ছিল। এছাড়া মহামারির সময় অনলাইনে পেমেন্ট করা যেত। সেখানে চলতি সপ্তাহে ইন্টারনেট বিভ্রাটের কারণে সবকিছু বন্ধ ছিল। জাহিদ হোসেন বলেন, এসব কিছু বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা কমাবে এবং দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে। তিনি বলেন, ইন্টারনেট বন্ধের সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী ছিল। এই ধাক্কা কতটা প্রবল হবে এবং কতদিন তার প্রভাব থাকবে সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদিও প্রাণহানির ক্ষতির কোনো সমীকরণ হয় না। অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে আস্থার যে সংকট তৈরি হলো, সেটার পুনর্বাসন করতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলের প্রতিও অনাস্থা জন্ম নিতে পারে। রপ্তানিতে ভাটা দেখা দিতে পারে। এর সুরাহা বেসরকারি খাতই করবে। তবে সরকারকে প্রথমে দায়িত্ব নিতে হবে


























