সদ্য বিদায়ি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল মিলিয়ে বাংলাদেশকে প্রায় ৩৩৬ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে এই প্রথমবারের মতো এক বছরে বিদেশি ঋণ পরিশোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেল। পরিশোধ করা অর্থের মধ্যে আসল ২০১ কোটি ডলার, আর সুদের পরিমাণ প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার।
গতকাল রোববার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিদায়ি অর্থবছরের বৈদেশিক ঋণের হালনাগাদ পরিস্থিতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে এ তথ্য পাওয়া গেছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, এক বছরের ব্যবধানে ঋণের আসল ও সুদ পরিশোধ দুটোই বেশ বেড়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এই বৃদ্ধি ২৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সুদ ও আসল মিলিয়ে ২৬৮ কোটি ডলার পরিশোধ করেছিল বাংলাদেশ।
কয়েক বছর ধরেই বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। ঋণ পরিশোধ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গত দুই বছরে। বিদেশি ঋণ পরিশোধের এই চাপ শুরু হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন দেশে দীর্ঘদিন ধরে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বিদেশি ঋণ পরিশোধ বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাজেটে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে বিদেশি ঋণের আসল পরিশোধ যে গতিতে বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি গতিতে বেড়েছে সুদ বাবদ খরচ। গত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় আসল পরিশোধ বেড়েছে ২৮ কোটি ডলার বা ১৬ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আসল পরিশোধ করতে হয়েছিল ১৭৩ কোটি ডলার।
অন্যদিকে একবছরের ব্যবধানে সুদ পরিশোধ বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। গত অর্থবছরে সুদ খাতে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়েছে ৪২ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সুদ বাবদ ৯৩ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছিল। বিদায়ি অর্থবছরে প্রথমবারের মতো শুধু সুদ বাবদ খরচও এক বিলিয়ন ডলার বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়াল। ইআরডির তথ্যানুসারে, গত অর্থবছরের জুলাই থেকে জুন সময়ে ৯৮৬ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণ এসেছে। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ছাড় বেড়েছে ৫৫ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯২১ কোটি ডলার ছাড় করেছিল উন্নয়ন সহযোগীরা। এদিকে, গত অর্থবছরে ঋণদাতা সংস্থা ও দেশগুলো ১ হাজার ৭২ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইআরডির এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘বিদেশি ঋণ পরিশোধ প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তবে বিদেশি ঋণ পাওয়া আমাদের প্রত্যাশার মধ্যেই আছে। বিদায়ি অর্থবছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ের প্রত্যাশা করেছিলাম।’


























