◉ বন্যায় ১০৮ কিমি জাতীয় মহাসড়ক ও ১৩ কিমি রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত
◉ বন্যাসহিষ্ণু করে গড়ে তোলা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
◉ রেলপথে শিডিউল বিপর্যয় ঠেকাতে নতুন সূচি
ভারত থেকে আসা উজানের পানিতে বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের ১২টি জেলা। ভয়াবহ এই বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে এসব অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা শুুধুমাত্র জাতীয় মহাসড়কে ১০৮ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও রেলপথেও ১৩ কিলোমিটারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকারের স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। সংস্কারের পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু কার্যকরী উদ্যোগও। এর মধ্যে আটলেনের মহসড়কগুলোকে বন্যাসহিষ্ণু হিসেবে উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রেলপথে সংস্কার কাজ চলমান থাকায়, পূর্বাঞ্চলের রেলগুলোতে শিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে। এ কারণে এ অঞ্চলের রেল চলাচল নতুন সূচিতে আনার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র বলছে, বন্যায় সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সড়ক নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যায় গত বুধবার পর্যন্ত মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির সড়ক বিভাগ থেকে অন্তত ১৫৭টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে।
বিশেষ করে ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। বন্যা চলাকালীন কুমিল্লা ও ফেনীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে মহাসড়কটি। বিশেষ করে ফেনীর লালপুল ও লেমুয়া ব্রিজ এবং কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় বন্যার খরস্রোতের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার যানবাহন আটকে পড়ে তৈরি হয় যানজট।
সওজ ও এলজিইডি’র প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ২০ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত বন্যায় আট হাজার কিলোমিটারের বেশি সড়ক এবং ১ হাজার ১০১টি সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়ক ১০৮ কিলোমিটার, আঞ্চলিক মহাসড়ক ১২৪ কিলোমিটার, জেলা সড়ক ৫৩৪ কিলোমিটার এবং গ্রামীণ সড়ক ৭ হাজার ৭২২ কিলোমিটার। এসব হিসাবের বাইরে আরো অনেক ক্ষয়ক্ষতির হিসাব প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
সওজ-এর প্রকল্পসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ভবিষ্যতে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করছে সওজ। বিশেষ করে ৮-লেনে উন্নীতকরণের মাধ্যমে মহাসড়কটিকে একটি অত্যাধুনিক যোগাযোগ অবকাঠামো হিসেবে গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে, তার নকশায় বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বিষয়টি।
এ পরিকল্পনার মাধ্যমে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩১ কিলোমিটার মহাসড়ককে একটি অত্যাধুনিক অ্যাক্সেস কন্ট্রোল বিশিষ্ট ৮ লেনের মহাসড়কে উন্নীত করা হবে। যেখানে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে পৌঁছানো যাবে মাত্র চার ঘণ্টাতেই। এরই মধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রায় শেষ। খুব শিগগিরই তা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর শুরু হবে ডিটেইল ডিজাইনিং বা চূড়ান্ত নকশার কাজ।
এেিদক রেলওয়ের পূবাঞ্চল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যার কারণে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চার দিন বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। পানিতে বিভিন্ন রুটে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার রেলপথ ডুবে যায়। এ রেলপথের তিন রুটে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ কিলোমিটার এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত এসব রেলপথের মেরামতের কাজ শুরু হলেও সময়সূচি মেনে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। গন্তব্যে পৌঁছাতেও নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত বেশি লাগছে। এতে যাত্রীদের যেমন বাড়তি সময় লাগছে, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি সংশোধন করার উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল। নতুন করে নির্ধারণ করা হবে সময়সূচি। রেলের ভাষায় একে ওয়ার্কিং টাইম টেবিল (ডব্লিউটিটি) বলা হয়। সর্বশেষ ওয়ার্কিং টাইম টেবিল কার্যকর হয় গত বছরের ১ ডিসেম্বর। এটি ছিল ৫৩তম ওয়ার্কিং টাইম টেবিল। ৫২তম টাইম টেবিল করা হয়েছিল চার বছর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণত তিন মাসের সময়সীমায় গতিবেগ স্বাভাবিকের তুলনায় কমিয়ে রাখা হলে সেটিকে অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ বলা হয়। ময়মনসিংহ রুটসহ দেশের বেশ কিছু রুটে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণাদেশ স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও বেশি হওয়ায় সূচি মেনে ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। রেলপথ ও রেলসেতুর সংস্কারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়তি সময় লাগবে। তাই সংশোধন করে নতুন করে সময় নির্ধারণ করা হবে। তখন যাত্রীদের ট্রেন চলাচলে আর ভোগান্তি থাকবে না, বিভ্রান্তও হতে হবে না।
রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওপিএস) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, গত বছর সময়সূচি নির্ধারণ করা হলেও তা বিভিন্ন কারণে বিঘ্নিত হচ্ছিল। রেলপথ, সেতু, স্টেশনের নির্মাণ, সংস্কারকাজসহ বিভিন্ন প্রকল্প চলমান থাকে। এসব উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় ট্রেন চলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ করে প্রকৌশল দপ্তর। ভৈরব-ময়মনসিংহ ও টঙ্গী-ময়মনসিংহ সেকশনে বেশ কিছু অস্থায়ী গতি নিয়ন্ত্রণাদেশ দীর্ঘ সময় ধরে চলমান থাকায় এই রুটগুলোতে ট্রেন চলাচল মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই সময়সূচিকে এখনকার উপযোগী করে নতুন টাইম টেবিল প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


























