০৮:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কিশোরগঞ্জে মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাংচুর, আতঙ্কে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।দুর্গাপূজা কে ঘিরে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেই প্রস্তুতির মাঝেই বৃহঃপতিবার (৩অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ গোপিনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে দুর্বৃত্তরা  প্রবেশ করে প্রতিমা ভেঙে ফেলে। এতে আতঙ্কে পড়েছে সনাতন ধর্মালবম্বীরা। মন্ডপের সবগুলো প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।
জানা যায়,গত ৫ আগস্টের পর থেকে নিরাপত্তার জন্য কিশোরগঞ্জে রাতভর হিন্দু-মুসলিম মিলে শহরের সব মন্দির, আখড়া পাহারা দেওয়া শুরু করে।জেলায় ১৩ টি উপজেলায় এবার ৩৬৩টি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। ১ম বারের মতো এ বছর গোপীনাথ জিউর আখড়ায় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দুর্গা প্রতিমা বানানোর শেষ পর্যায়ের কাজ চলছিলো। রাতভর নিরাপত্তার কারণে আখড়ায় স্থানীয় গোপীনাথ সংঘ সংগঠনের ছেলেরা মন্দির পাহারায় ছিলেন। রাত ৩টা পর্যন্ত সংগঠনের পাঁচ সদস্য সজাগ ছিলেন। ভোরের দিকে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় কে বা কারা দেওয়াল টপকে মন্দিরে প্রবেশ করে দুর্গা,কার্তিক, গনেশ সহ সবগুলি প্রতিমা ভেঙে ফেলে।পরে স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানালে,খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরি ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় পূজারীরা জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য ন্যাক্কারজনক এ কাজ করা হয়েছে। ভোরের দিকে সব মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা এখন পূজা করার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। এই মন্দিরে এমন কোনো ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবসময় সব পূজা এ মন্দিরে করা হয়। এবারই ১ম দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে এ মন্দিরে। এ দেশে আমরা তো সবাই একত্রে বসবাস করি। এমন কেন হবে? আমরা কিশোরগঞ্জে সবাই একত্রে যার যার ধর্ম তারা তার তার মতো করে পালন করি। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের সুষ্ঠু তদন্দের মাধ্যমে কঠোর বিচার দাবি করছি।
গোপীনাথ জিউর আখড়ার দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজিব কুমার সাহা বলেন, ২ মাস ধরে আমরা এ মন্দির পাহারা দিচ্ছি। প্রতিদিন রাতে ৫-৭ জন মিলে পাহারা দেই। এ বছর ১ম বারের মতো দুর্গাপূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অনুযায়ী পূজার আয়োজন করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল। এখন শুধু রঙ করা ও সাজানোর বাকি ছিল। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে সব প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের যারা পাহারায় থাকেন তারা রাত ৩টা পর্যন্ত সজাগ ছিলেন। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লে কে বা কারা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে চলে যায়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নারায়ণ দত্ত প্রদীপ বলেন, আমরা পূজা সুন্দরভাবে করতে চাই। তদন্ত সাপেক্ষে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছি। মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলেও মন্দিরের পাশের ক্যামেরাগুলো দেখে কারা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে তাদের শনাক্ত করার জন্য প্রশাসন কে  অনুরোধ করেছি। ঘটনার পরপর জেলা প্রশাসনের লোকজন সকালে মন্দির পরিদর্শন করেছেন। দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা আয়োজন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মন্দির পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর উর্ধ্ধতন কর্মকর্তারা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি মন্দিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। দুর্গাপূজা উৎসব যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেইভাবে কাজ করা হচ্ছে।দুষ্কৃতিকারী যেই হওক,আমরা তাদের আইনের আওতায় আনবো।
জনপ্রিয় সংবাদ

কিশোরগঞ্জে মন্দিরে ঢুকে প্রতিমা ভাংচুর, আতঙ্কে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা

আপডেট সময় : ০৫:৫১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।দুর্গাপূজা কে ঘিরে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সেই প্রস্তুতির মাঝেই বৃহঃপতিবার (৩অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বত্রিশ গোপিনাথ জিউর আখড়া মন্দিরে দুর্বৃত্তরা  প্রবেশ করে প্রতিমা ভেঙে ফেলে। এতে আতঙ্কে পড়েছে সনাতন ধর্মালবম্বীরা। মন্ডপের সবগুলো প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।
জানা যায়,গত ৫ আগস্টের পর থেকে নিরাপত্তার জন্য কিশোরগঞ্জে রাতভর হিন্দু-মুসলিম মিলে শহরের সব মন্দির, আখড়া পাহারা দেওয়া শুরু করে।জেলায় ১৩ টি উপজেলায় এবার ৩৬৩টি মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে। ১ম বারের মতো এ বছর গোপীনাথ জিউর আখড়ায় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে দুর্গা প্রতিমা বানানোর শেষ পর্যায়ের কাজ চলছিলো। রাতভর নিরাপত্তার কারণে আখড়ায় স্থানীয় গোপীনাথ সংঘ সংগঠনের ছেলেরা মন্দির পাহারায় ছিলেন। রাত ৩টা পর্যন্ত সংগঠনের পাঁচ সদস্য সজাগ ছিলেন। ভোরের দিকে তারা ঘুমিয়ে পড়েন। এ সময় কে বা কারা দেওয়াল টপকে মন্দিরে প্রবেশ করে দুর্গা,কার্তিক, গনেশ সহ সবগুলি প্রতিমা ভেঙে ফেলে।পরে স্থানীয়রা প্রশাসনকে জানালে,খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান,পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরি ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় পূজারীরা জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য ন্যাক্কারজনক এ কাজ করা হয়েছে। ভোরের দিকে সব মূর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমরা এখন পূজা করার বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। এই মন্দিরে এমন কোনো ঘটনা এর আগে কখনো ঘটেনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবসময় সব পূজা এ মন্দিরে করা হয়। এবারই ১ম দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে এ মন্দিরে। এ দেশে আমরা তো সবাই একত্রে বসবাস করি। এমন কেন হবে? আমরা কিশোরগঞ্জে সবাই একত্রে যার যার ধর্ম তারা তার তার মতো করে পালন করি। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের সুষ্ঠু তদন্দের মাধ্যমে কঠোর বিচার দাবি করছি।
গোপীনাথ জিউর আখড়ার দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সজিব কুমার সাহা বলেন, ২ মাস ধরে আমরা এ মন্দির পাহারা দিচ্ছি। প্রতিদিন রাতে ৫-৭ জন মিলে পাহারা দেই। এ বছর ১ম বারের মতো দুর্গাপূজা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেই অনুযায়ী পূজার আয়োজন করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিল। এখন শুধু রঙ করা ও সাজানোর বাকি ছিল। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার ভোরে সব প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। আমাদের যারা পাহারায় থাকেন তারা রাত ৩টা পর্যন্ত সজাগ ছিলেন। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লে কে বা কারা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করে চলে যায়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নারায়ণ দত্ত প্রদীপ বলেন, আমরা পূজা সুন্দরভাবে করতে চাই। তদন্ত সাপেক্ষে যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছি। মন্দিরে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলেও মন্দিরের পাশের ক্যামেরাগুলো দেখে কারা প্রতিমা ভাঙচুর করেছে তাদের শনাক্ত করার জন্য প্রশাসন কে  অনুরোধ করেছি। ঘটনার পরপর জেলা প্রশাসনের লোকজন সকালে মন্দির পরিদর্শন করেছেন। দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনের সব কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা আয়োজন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী জানান, বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মন্দির পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর উর্ধ্ধতন কর্মকর্তারা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত হচ্ছে। দুষ্কৃতকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি মন্দিরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। দুর্গাপূজা উৎসব যেন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় সেইভাবে কাজ করা হচ্ছে।দুষ্কৃতিকারী যেই হওক,আমরা তাদের আইনের আওতায় আনবো।