◉ জাইকার অর্থায়নে ডার্ক সফটওয়্যার ব্যবহারের উদ্যোগ
মেট্রোপলিটন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে এবার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের পথে হাঁটছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসপি) উদ্যোগে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে সড়ক নিরাপত্তার কার্যক্রম শুরু হয়। জাইকা বিশেষজ্ঞ দলের (জেইটি) সমন্বয়ে ঢাকার সড়ক দুর্ঘটনা রোধে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে ডিএমপির ডাটাবেজ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস অব রোড ক্র্যাশ (ডার্ক ডিএমপি) ‘ডার্ক’ নামে একটি সফটওয়্যার।
সংলিষ্ট সূত্র বলছে, সফটওয়্যারটিতে মূলত তথ্য দেবেন ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্টরা। তারা দুর্ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে এই অ্যাপসে দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য ইনপুট দেবেন। সেসব তথ্য ডিএমপির সদর দপ্তরে জমা হবে এবং ভবিষ্যতে কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামানো যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতনরা। এ সফটওয়্যার বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ডিএমপির ৮৫০ ডিসি, এডিসি, এসি, টিআই ও সার্জেন্ট। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ডিএমপিতে রদবদলের কারণে প্রশিক্ষণ নেওয়া বেশ কয়েকজন সার্জেন্ট বদলি হয়েছেন। তবে ডিএমপিতে নতুন যারা যোগদান করেছেন তাদের ডার্ক সফটওয়্যারের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে শিগগির।
ডিএমপি বলছে, ঢাকা শহরে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ৬৭টি ফিল্ডের একটি ফরমে দুর্ঘটনার তথ্য পূরণ করতো পুলিশ। ফরমটি পূরণের পর থানায় রেকর্ড হতো। বাস্তবতা হলো যদি কোনো দুর্ঘটনার পর কোনো এক পক্ষ থানায় মামলা বা জিডি করে তখনই শুধু ৬৭টি ফিল্ডের ফরম পূরণ করে থানায় জমা রাখা হতো। অন্যথায় দুর্ঘটনার শিকার উভয় পক্ষ যদি মীমাংসা করতো তবে ফরমটি আর পূরণ করতো না পুলিশ। সড়কে যতগুলো দুর্ঘটনা ঘটে তার বেশিরভাগই থানা-পুলিশের ঝামেলা এড়াতে উভয়পক্ষ মীমাংসা করে ফেলে। এতে বাস্তবতা হলো দুর্ঘটনার অনেক তথ্যই উঠে আসে না। দুর্ঘটনার ফলে থানায় যে মামলাগুলো হচ্ছে সেই তথ্য এই সফটওয়্যারে ইনপুট দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মামলা না হলেও যে কোনো দুর্ঘটনার তথ্য সফটওয়্যারটিতে ইনপুট দেবে পুলিশ। সফটওয়্যারটিতে আটটি ক্যাটাগরি রয়েছে। সফটওয়্যারের মূল উদ্দেশ্য- যেকোনো সড়ক দুর্ঘটনা ডাটাবেজের মাধ্যমে নিয়ে আসা এবং প্রকৃতপক্ষে ঢাকা শহরের সামগ্রিক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা। আগে যে ফরম ছিল সেখানে দুর্ঘটনার প্রকৃত স্থান চিহ্নিত করা যেত না। বর্তমানে সফটওয়্যারটিতে পিন-পয়েন্ট লোকেশনের জন্য জিপিএস ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে প্রকৃত লোকেশন পাওয়া সম্ভব। দুর্ঘটনার সময়, তারিখ, রিপোর্টটি কোন অফিসার ইনপুট দিচ্ছেন তার তথ্য, জিপিএসে লোকেশনের তথ্য, হতাহতের তথ্য, দুর্ঘটনার ধরন, দুর্ঘটনার পেছনে সহায়ক কারণ, দুর্ঘটনার সময় আবহাওয়া কেমন ছিল (বৃষ্টি, কুয়াশা কিংবা রোদ) ও দুর্ঘটনার চিত্র। একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট খুব সহজেই ছবি তুলে দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র সফটওয়্যারে ইনপুট দিতে পারবেন।
ঢাকা রোড ট্রাফিক সেফটি প্রজেক্টের (ডিআরএসসি) ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার মো. মাহমুদ হাসান বলেন, দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করা ফরমটি ছিল সম্পূর্ণই কাগজে-কলমে অর্থাৎ অ্যানালগ। হাতে লেখা ফরমে দুর্ঘটনার একটি বড় অংশের তথ্য রেকর্ড থাকতো না। আবার যে রেকর্ডগুলো থানা থেকে আসতো সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ থাকতো। এজন্য ডিআরএসসি অনলাইন বেসিসে একটি সফটওয়্যার তৈরি করে। যার নাম দেওয়া হয় ডার্ক সফটওয়্যার। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ‘ড্রাইভার সফটওয়্যার’ রয়েছে। সেই সফটওয়্যারের আদলে ডিএমপির প্রয়োজন অনুসারে মোডিফাই করে ডার্ক সফটওয়্যার তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, সফটওয়্যারের মূল উদ্দেশ্য- যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ডাটাবেজের মাধ্যমে নিয়ে আসা এবং প্রকৃতপক্ষে ঢাকা শহরের সামগ্রিক দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করা। আগে যে ফরম ছিল সেখানে দুর্ঘটনার প্রকৃত স্থান চিহ্নিত করা যেত না। বর্তমান সফটওয়্যারটিতে পিন পয়েন্ট লোকেশনের জন্য জিপিএস ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এতে প্রকৃত লোকেশন পাওয়া সম্ভব।


























