- সিরিয়ার যুদ্ধ শেষ হয়নি : জাতিসংঘের দূত
- তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিল রাশিয়া
- বিদ্রোহীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত পুতিনের
বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়া সীমান্তের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সম্প্রতি সীমান্তের বাফার জোন দখলের পর হারমন পর্বতের সিরিয়ার অংশের দখল নেয় ইসরায়েলিরা এবং দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি নতুন গ্রাম দখল করেছে তারা। নতুন করে দখল করা সেই হারমন পর্বতে সফর করলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এদিকে, রাশিয়ান সরকারের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় থাকা তালেবান এবং হায়াত তাহবির আল-শাম (এইচটিএস) এর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও, সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত গিয়ার পেডারসেন বলেছেন, আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি।
সিরিয়া সিমান্ত ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালিয়ে নতুন করে হারমন পর্বত দখল করেছে। দখল করা সেই পর্বতে সফরও করছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পর্বতের চূড়া থেকে একটি ভাষণও দেন তিনি। সেখানে তিনি এই স্থানকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সেখানে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, দামেস্কের সঙ্গে ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী নতুন করে দখল করা সিরীয় ভূখণ্ডের মধ্যে একটি বাফার জোনে থাকবে। অতীতের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, আমি ৫৩ বছর আগে এখানে একজন সৈনিক হিসেবে ছিলাম। জায়গা বদলায়নি, কিন্তু আমাদের নিরাপত্তার জন্য এর গুরুত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ, ডিসেন্স ফোর্স-আইডিএফের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. হারজি হালেভি এবং অন্যান্য শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা। এর আগে চলতি মাসের শুরুতে বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর বিশৃঙ্খলার মধ্যে ওই এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে সেনা মোতায়েন করে ইসরায়েল।
এদিকে, সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় থাকা দুই গ্রুপ তালেবান এবং হায়াত তাহবির আল-শাম (এইচটিএস) নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে, রাশিয়ার নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে এই দু’গ্রুপের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে ভøাদিমির পুতিনের সরকার। আফগানিস্তানের তালেবান হোক বা সিরিয়ায় নতুন বিদ্রোহীদের সরকার রাশিয়া চাইছে দুই দেশকেই বন্ধু করতে। বন্ধুত্বের সম্পর্ক স্থাপনের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে রাশিয়া এ বার তালেবানদের ওপর থেকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। রাশিয়ার সংসদে পাশ হওয়া নতুন আইন সরকারের ভাবনা বাস্তবায়িত করার অন্যতম ধাপ বলে মনে করছেন অনেকে। নতুন আইনে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যে সব গোষ্ঠীকে রাশিয়ার সরকার সন্ত্রাসী বলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল, কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তা তুলে নেওয়া হবে। নতুন আইন বলে আদালতের হাতে থাকবে সেই ক্ষমতা। সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় থাকা তালিবান ও এইচটিএস নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে, রাশিয়ার নতুন আইন বাস্তবায়িত হলে এ দুই গোষ্ঠীর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে রাশিযার সরকার। ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া প্রথম যে গোষ্ঠীগুলিকে সন্ত্রাসী তালিকায় যুক্ত করেছিল, তাদের মধ্যে ছিল তালেবান। ২০২১ সালে আফগানিস্তানের তৎকালীন সরকারকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে তারা। তবে এখনো পর্যন্ত বিশ্বের কোনো দেশই আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এই অবস্থায় রাশিয়া যদি নতুন আইনে তালেবানকে সন্ত্রাসবাদী তালিকা থেকে বাদ দেয়, তবে তা যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। অন্য দিকে, সিরিয়ার এইচটিএস-এর ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করতে পারে পুতিন সরকার। ২০২০ সালে এই গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল পুতিন সরকার।
এছাড়াও, আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করার পরেও এখনও দেশটির উত্তরাঞ্চলে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ থেমে নেই। এমন পরিস্তিতিতে সিরিয়ায় জাতিসংঘের বিশেষ দূত গিয়ার পেডারসেন সতর্ক করে বলেছেন, বিদ্রোহী যোদ্ধারা বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও সিরিয়ার যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। যদিও পরে এই দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তিনি বলেন, একটি যুদ্ধবিরতি সম্পাদিত হওয়ার আগে গত দুই সপ্তাহে উল্লেখযোগ্য লড়াই দেখা গেছে। সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি ধ্বংসাত্মক হতে পারে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে তুরস্কের সহায়তাপুষ্ট বিদ্রোহীদের জোট সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপুষ্ট সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) নিজেদের মধ্যে লড়াই করে আসছিল। তাদের এই সংঘর্ষের মধ্যে এই মন্তব্য করলেন জাতিসংঘের দূত।
গত সপ্তাহে এসএনএ যোদ্ধারা এসডিএফ-এর কাছ থেকে উত্তরের শহর মানবিজ দখল করে নেয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হলে এসডিএফ ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব দিকে সরে যায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পেডারসেনের বক্তব্যের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানান, উত্তর সিরিয়ায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ এই সপ্তাহের শেষ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।


























