০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের যে আদেশে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশটির ২২টি অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। এসব অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শক্তিশালী। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষ আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) রব বন্টা উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে গত মঙ্গলবার এ আদেশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন। সেই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন ম্যাসাচুসেটসসহ আরও ২০টি অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বন্টা নিজেই ঘোষণা করেছেন এসব তথ্য।
বিবৃতিতে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রেসিডেন্ট জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল বিষয়ক যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, তা অশোভন, অমার্জিত এবং পুরোপুরি অসাংবিধানিক। এই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খাপ খায় না। এই আদেশ জারির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার করেছেন এবং এজন্য আমরা তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনব। আদালতের কাছে আমাদের অনুরোধ, যত শিগগির সম্ভব— এ আদেশ আটকে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং মামলা যতদিন চলবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের অধিকার যেন কেড়ে না নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বচানের প্রচারাভিযান চলাকালে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় গেলে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নীতি বাতিল করবেন তিনি। সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প, তার মধ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশও ছিল।
ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুর মা-বাবা যদি বৈধভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এছাড়া কেউ যদি শিক্ষার্থী ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা কিংবা পর্যটন ভিসায় সেখানে গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেও সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিক হবে না। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই আদেশ। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, দেশটির ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশু মার্কিন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে। মূলত আফ্রিকা থেকে আসা কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের সন্তানদের স্বীকৃতি দিতে আজ থেকে ১৫০ বছর আগে এ অধ্যাদেশ সংযোজন করা হয়েছিল মার্কিন সংবিধানে।
এদিকে, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ পানামা খাল দখল সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বরাবর চিঠি দিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো। চিঠিতে মুলিনো রেফারেন্স হিসেবে জাতিসংঘ সনদের একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করেছেন। সেই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র অপর সদস্যরাষ্ট্রের ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে হুমকি-ধামকি বা বলপ্রয়োগ করতে পারবে না। পাশাপাশি এ বিষয়টি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর অঙ্গসংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপনের জন্যও মহাসচিবকে অনুরোধ করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট। মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা ভৌগলিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। ৭৫ হাজার ৪১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতেই রয়েছে পানামা খাল, যা মিসরের সুয়েজ খালের পর বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল উপযোগী বাণিজ্যপথ। প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১১০ ফুট প্রশস্ত এই খালটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোনো জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার নটিক্যাল মাইল) পথ অতিক্রম করতে হতো।
এদিকে, শপথ গ্রহণের দিনই চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে দেশটির প্রতি কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক বৃদ্ধির এ ঘোষণা দেন তিনি। ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, চীন থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেসব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণার সময় চীনা পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, বাস্তবে আরোপিত শুল্ক তার চেয়ে অনেক কম। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশকৃত সব চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে ইচ্ছুক। তাছাড়া চীনা পণ্যের ওপর যে পরিমাণ অতিরিক্ত শুল্ক জারি করেছেন ট্রাম্প, তা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর জারিকৃত শুল্কের চেয়েও কম। দুই প্রতিবেশী দেশের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, কানাডীয় পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কারোপ করলে যে কোনো পরিস্থিতির জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাম্প খুবই ভালো আলোচক, তিনি তার আলোচনার অংশীদারকে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চান। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সোমবার কানাডা ও মেক্সিকান পণ্য আমদানিতে ব্যাপক শুল্কারোপের আভাস দিয়েছেন, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে। এরই প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে ট্রুডো বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ অনিশ্চয়তা ডেকে আনে, পরবর্তী আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতার অপেক্ষায় থাকুন। আমেরিকায় যে সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ট্রাম্প করেছেন, সে জন্য কানাডীয় সম্পদের প্রয়োজন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ট্রুডো বলেন, আমেরিকান অর্থনীতিতে অনেক প্রয়োজনীয় যোগান কানাডা সরবরাহ করে। কাজেই দেশটির অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য তা অপরিহার্য।

জনপ্রিয় সংবাদ

জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব

ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা

আপডেট সময় : ০৮:২১:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের যে আদেশে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশটির ২২টি অঙ্গরাজ্যে মামলা হয়েছে। এসব অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতেই বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টি শক্তিশালী। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার শীর্ষ আইন কর্মকর্তা (অ্যাটর্নি জেনারেল) রব বন্টা উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে গত মঙ্গলবার এ আদেশের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন। সেই আবেদনে স্বাক্ষর করেছেন ম্যাসাচুসেটসসহ আরও ২০টি অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা। গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বন্টা নিজেই ঘোষণা করেছেন এসব তথ্য।
বিবৃতিতে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, প্রেসিডেন্ট জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল বিষয়ক যে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, তা অশোভন, অমার্জিত এবং পুরোপুরি অসাংবিধানিক। এই আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খাপ খায় না। এই আদেশ জারির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার বড় ধরনের অপব্যবহার করেছেন এবং এজন্য আমরা তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনব। আদালতের কাছে আমাদের অনুরোধ, যত শিগগির সম্ভব— এ আদেশ আটকে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং মামলা যতদিন চলবে, ততদিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শিশুদের অধিকার যেন কেড়ে না নেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বচানের প্রচারাভিযান চলাকালে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ক্ষমতায় গেলে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নীতি বাতিল করবেন তিনি। সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প, তার মধ্যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের আদেশও ছিল।
ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুর মা-বাবা যদি বৈধভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এছাড়া কেউ যদি শিক্ষার্থী ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা কিংবা পর্যটন ভিসায় সেখানে গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেও সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিক হবে না। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই আদেশ। প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, দেশটির ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশু মার্কিন নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবে। মূলত আফ্রিকা থেকে আসা কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের সন্তানদের স্বীকৃতি দিতে আজ থেকে ১৫০ বছর আগে এ অধ্যাদেশ সংযোজন করা হয়েছিল মার্কিন সংবিধানে।
এদিকে, বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ পানামা খাল দখল সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বরাবর চিঠি দিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো। চিঠিতে মুলিনো রেফারেন্স হিসেবে জাতিসংঘ সনদের একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করেছেন। সেই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র অপর সদস্যরাষ্ট্রের ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে হুমকি-ধামকি বা বলপ্রয়োগ করতে পারবে না। পাশাপাশি এ বিষয়টি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর অঙ্গসংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপনের জন্যও মহাসচিবকে অনুরোধ করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট। মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা ভৌগলিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। ৭৫ হাজার ৪১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতেই রয়েছে পানামা খাল, যা মিসরের সুয়েজ খালের পর বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল উপযোগী বাণিজ্যপথ। প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১১০ ফুট প্রশস্ত এই খালটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে। পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোনো জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার নটিক্যাল মাইল) পথ অতিক্রম করতে হতো।
এদিকে, শপথ গ্রহণের দিনই চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে দেশটির প্রতি কঠোর মনোভাবের ইঙ্গিত দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে শুল্ক বৃদ্ধির এ ঘোষণা দেন তিনি। ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, চীন থেকে যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সেসব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক আরোপ করা হবে। অবশ্য নির্বাচনী প্রচারণার সময় চীনা পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি ট্রাম্প দিয়েছিলেন, বাস্তবে আরোপিত শুল্ক তার চেয়ে অনেক কম। নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশকৃত সব চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে ইচ্ছুক। তাছাড়া চীনা পণ্যের ওপর যে পরিমাণ অতিরিক্ত শুল্ক জারি করেছেন ট্রাম্প, তা এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর জারিকৃত শুল্কের চেয়েও কম। দুই প্রতিবেশী দেশের পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে, কানাডীয় পণ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্কারোপ করলে যে কোনো পরিস্থিতির জবাব দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। গত মঙ্গলবার এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাম্প খুবই ভালো আলোচক, তিনি তার আলোচনার অংশীদারকে কিছুটা বিভ্রান্তিতে ফেলে দিতে চান। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর সোমবার কানাডা ও মেক্সিকান পণ্য আমদানিতে ব্যাপক শুল্কারোপের আভাস দিয়েছেন, যা আগামী ফেব্রুয়ারি থেকেই কার্যকর হতে পারে। এরই প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের সঙ্গে নিয়মিত কথা হয় জানিয়ে ট্রুডো বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের আচরণ অনিশ্চয়তা ডেকে আনে, পরবর্তী আনুষ্ঠানিক আলাপচারিতার অপেক্ষায় থাকুন। আমেরিকায় যে সমৃদ্ধির অঙ্গীকার ট্রাম্প করেছেন, সে জন্য কানাডীয় সম্পদের প্রয়োজন হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ট্রুডো বলেন, আমেরিকান অর্থনীতিতে অনেক প্রয়োজনীয় যোগান কানাডা সরবরাহ করে। কাজেই দেশটির অর্থনীতির সমৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য তা অপরিহার্য।