- গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল ১২০টি পচা লাশ উদ্ধার
- ৯০০ ট্রাক সাহায্য প্রবেশ করেছে গাজায়
- ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ
- গাজায় ২০ হাজার হামাস যোদ্ধাকে হত্যা করেছে ইসরাইল : আইডিএফ প্রধান
ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ভূখণ্ডটির জেনিন শহরে চালানো অভিযানে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে মিলেছে শতাধিক লাশ। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর গত ২ দিনে সেখান থেকে পঁচা-গলা এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে অন্তত ১০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও অনেক আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এছাড়া বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা জানিয়েছেন, গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে দুই দিনে ১২০টি পচা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পৃথক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, গত মঙ্গলবার উত্তর পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ৪০ জন আহত হয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিশেষ ইউনিট জেনিন শরণার্থী শিবিরের বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় এবং ইসরায়েলি ড্রোন ওই এলাকার দুটি স্থানে হামলা চালায়। ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টার কান নিশ্চিত করেছে, শরণার্থী শিবিরের অবকাঠামো লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা হয়েছে। একটি সামরিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জেনিনে চলমান এই অভিযানের কোড-নাম আয়রন ওয়াল এবং এটি কয়েক দিন ধরে চলতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও জেনিনে এই অপারেশনের কথা নিশ্চিত করেছে।
ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা কুদস ব্রিগেড নিশ্চিত করেছে, তাদের যোদ্ধারা জেনিনে ইসরায়েলি বাহিনীর মুখোমুখি হয়েছে এবং সৈন্যদের মধ্যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসও জেনিনে ইসরায়েলি হামলার মোকাবিলায় ফিলিস্তিনিদের পশ্চিম তীরে একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা বলেছে, ইসরায়েল অবরোধ তুলে নেওয়ার পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চলে সহায়তা বাড়াতে মঙ্গলবার প্রায় ৯০০ ট্রাক সাহায্য গাজায় প্রবেশ করেছে। এছাড়া অধিকৃত পশ্চিম তীরে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বলেছে, অবৈধ ইসরায়েলি বসতিগুলো প্রসারিত হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের চলাচলের স্বাধীনতা ব্যাপকভাবে সীমিত হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারর্জি হালেভি এবং গাজার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ারন ফিঙ্কেলম্যান পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। হামাসের সঙ্গে প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েক দিনের মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ এই দুই কর্মকর্তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরে হামলার ঘটনায় ব্যর্থতার দায় নিয়ে গত মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ করেছেন বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রকাশিত পদত্যাগপত্রে হালেভি বলেছেন, ৭ অক্টোবর (সেনাবাহিনীর) ব্যর্থতার জন্য নিজের দায় স্বীকার করে তিনি বিদায় নিচ্ছেন। তিনি বলেছেন, সামরিক বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সময়ে তিনি পদত্যাগ করছেন। তবে হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন হালেভি। তিনি আরও বলেছেন, যুদ্ধের সব উদ্দেশ্য এখনও অর্জিত হয়নি। হামাস ও এর শাসন করার সক্ষমতাকে আরও ধ্বংস, জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে লড়াই চালিয়ে যাবে সেনাবাহিনী। আর এর মধ্য দিয়ে হামাসের হামলায় বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলিরা ফিরে আসতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর গত ১৫ মাস ধরে গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও লক্ষাধিক মানুষ। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) প্রায় ১৫ মাসের গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানে হামাসের প্রায় ২০ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধাকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন আইডিএফের চিফ অব জেনারেল স্টাফ হার্জি হালেভি।


























