গাজার উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার সড়ক উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিজ ঘরের দিকে যাত্রা শুরু করেছেন। ইসরায়েলি নারী আরবেল ইয়েহুদসহ দুই জিম্মিকে হামাস মুক্তি দিতে সম্মত হলে গতকাল সোমবার সকালে সড়ক থেকে অবরোধ সরিয়ে নেয় ইসরায়েল। রয়টার্সের প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, হাজারো মানুষের বিশাল জনসমাগম চলতে শুরু করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গাজার মধ্যাঞ্চলের প্রথম ক্রসিং পয়েন্ট খুলে দেওয়ার পর স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকেই স্থানীয়রা আসতে শুরু করেন। দুঘণ্টা পর আরেকটি ক্রসিং খুলে দেওয়ার কথা ছিল। সড়ক উন্মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে যেতেই আশ্রয় শিবিরে থাকা বাস্তচূত্য ফিলিস্তিনিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, গত সপ্তাহের শেষেই উত্তরাঞ্চলীয় গাজার অধিবাসীদের প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে শেষ মূহুর্তে বেঁকে বসে ইসরায়েল। তাদের অভিযোগ, বেসামরিক নারী ইয়েহুদকে মুক্তি না দিয়ে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেছে হামাস। এরপর, রবিবার কাতারি মধ্যস্থতাকারীরা জানান, শুক্রবারের আগেই ইয়েহুদসহ দুই জিম্মিকে মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছে হামাস। তারপরই ইসরায়েল জানায়, গতকাল সোমবার সকাল থেকে গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরে যেতে ফিলিস্তিনিদের অনুমতি দেওয়া হবে। ইয়েহুদ, সেনাসদস্য আগাম বেরজের ও অন্য এক জিম্মির মুক্তি পাওয়ার তথ্য গত রবিবার নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেছেন, সোমবার সকাল থেকেই বাস্তচ্যুত গাজা অধিবাসীদের ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলে ফিরে যেতে দেওয়া হবে।
এদিকে, দীর্ঘ ১৫ মাসের বেশি সময় পর চলতি মাসেই ফিলিস্তিনের গাজায় কার্যকর হয়েছে যুদ্ধবিরতি চুক্তি। তবে এরপরও বেড়েই চলেছে প্রাণহানি। মূলত ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একের পর এক উদ্ধার হচ্ছে নিহতদের লাশ। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩০৬ জনে পৌঁছেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধ্বংসস্তূপ থেকে আরও ১৪ জনের লাশ উদ্ধারের পর নিহতের সংখ্যা ৪৭ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে যায়। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন তাদের আঘাতের কারণে মারা গেছে এবং ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, হামলায় আরও ১১ জন আহত হয়েছেন। এতে করে ইসরায়েলি আক্রমণে আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ৪৮৩ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময় এবং স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। এদিকে গাজায় ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের আপাতত অবসান ঘটলেও ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি আক্রমণে নিখোঁজ রয়েছেন ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছিল। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
আবার এদিকে, নতুন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন। তিনি ইসরায়েলের প্রতি সম্পূর্ণরূপে সমর্থন জানান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণের পর রোববার প্রথম ফোনালাপের জন্য নেতানিয়াহুকে বেছে নেন পিট হেগসেথ। পেন্টাগন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হেগসেথ এবং নেতানিয়াহু দুই দেশের পারস্পরিক নিরাপত্তা স্বার্থ এবং অগ্রাধিকারগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন অব্যাহত থাকবে। ইসরায়েলের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে হেগসেথ কেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ক্যাটজের পরিবর্তে নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন, তা নিয়ে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি। গত রাতে মার্কিন সিনেটে স্বল্প ব্যবধানে নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার শপথ গ্রহণ করেন হেগসেথ। তিনি ট্রাম্পের সবচেয়ে বিতর্কিত মন্ত্রিসভা মনোনীতদের একজন। এই মন্ত্রী মদ্যপান এবং যৌন অসদাচরণের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বৃহৎ দায়িত্ব পরিচালনা করার ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতার অভাব নিয়ে নিজ জনগণের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।


























