০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্রোহীদের দখলে গোমা শহর

মধ্য আফ্রিকার খনিজসমৃদ্ধ দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর, নর্থ কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের একটি জোট। সরকারি সেনাদের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভোরের আগে রাত ৩টার মধ্যে আত্মসমর্পণেও নির্দেশ দিয়েছে তারা। পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী এই জোটের ত্বরিত অগ্রগতির কারণে এরই মধ্যে ওই এলাকার লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, একইসঙ্গে অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। এ দাবি প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও কিনশাসা সরকারের মুখপাত্র এবং সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াও পায়নি তারা। কিনশাসা গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। দেশটির পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুমুল সক্রিয় বিদ্রোহী জোট কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সে সশস্ত্র মার্চ ২৩ মুভমেন্টও (এম২৩) আছে। প্রতিবেশী রুয়ান্ডা-সমর্থিত এই এম২৩ বিদ্রোহীরা চলতি মাসে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের দ্বন্দ্বমুখর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে একের পর এক জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। কয়েকদিন আগেই তারা নর্থ কিভুর রাজধানী গোমাতে হামলা শুরু করে। গত রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই এম২৩ যোদ্ধারা শহরের কেন্দ্র থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দূরে প্রান্তস্থিত মুনিগিও পেরিয়ে যায় বলে তিনটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে। গোমা এখন আমাদের হাতে, বলেছেন বিদ্রোহী জোট কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সের কর্নেই নাঙ্গা।
বিদ্রোহীরা এর আগে শহরটিতে প্রবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারি বাহিনীকে গত রোববার রাতের মধ্যে নিরস্ত্র হয়ে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল। নাঙ্গা জানান, মধ্যস্থতার পর সেনা কর্মকর্তাদেরকে নৌকায় গোমা থেকে বুকাভু যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছিল বিদ্রোহীরা। আমরা অস্ত্র নামিয়ে রাখতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছিলাম। ওই সময় এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে, তাই এখন আমরা বলছি তারা তাদের সামরিক সরঞ্জাম জাতিসংঘ মিশনে জমা দিতে পারবে, রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন এম২৩-র মুখপাত্র উইলি এঙ্গোমা। রাত ৩টার আগে আগে আত্মসমর্পণকারী সরকারি সেনাদের শহরের মাঠগুলোতে জড়ো করা হবে, বলেছেন তিনি। বিদ্রোহীদের আরেক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, কিভু হ্রদে নৌচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শহরটির অনেক বাসিন্দা রাত নামার পর বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন গুলির শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন তবে এ গোলাগুলি কীসের কিংবা যুদ্ধ এখনও চলছে কিনা তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। লোডশেডিংয়ের কারণে গোমার বেশিরভাগ অংশ এমনিতেই অন্ধকারে ডুবে আছে। পরিস্থিতি নিয়ে রোববারই বৈঠক করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ভয়াবহ মানবিক সংকটও দেখা দেবে বলেও আশঙ্কা করছে তারা। বিদ্রোহীদের এই অগ্রগতিতে রুয়ান্ডার পৃষ্ঠপোষকতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। কিগালি (রুয়ান্ডার রাজধানী) অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করছে, তারা আর এম২৩-কে সহায়তা দিচ্ছে না। জাতিসংঘে রুয়ান্ডার রাষ্ট্রদূত এর্নেস্ট রোয়ামুচিও বলেছেন, তার দেশ কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে ক্রমশ খারাপ হওয়া পরিস্থিতির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতির জন্য গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সরকারই মূলত দায়ী, বলেছেন তিনি। দেশটির সরকার যদি শান্তির বিষয়ে তাদের সত্যিকারের অঙ্গীকার দেখাতে পারতো, তাহলে হয়তো এখনকার এই সংকট এড়ানো যেত, বলেছেন রোয়ামুচিও। রুয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালের গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট পরপর দুটি আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিম ইউরোপের প্রায় সমান আয়তনের দেশ কঙ্গোর পূর্বদিককার সীমান্তবর্তী অঞ্চল এখনও নানান বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণাধীন বারুদে ঠাসা এলাকা হিসেবে রয়েই গেছে। তুতসি নেতৃত্বাধীন একের পর এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থানের পর এখন ওই এলাকায় সবচেয়ে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে এম২৩-কে। প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত এই গোষ্ঠীটি বলছে, তারা কঙ্গোর তুতসিদের সুরক্ষায় কাজ করছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সরকারের ভাষ্য, এই বিদ্রোহীরা রুয়ান্ডাকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে। কিগালি শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কঙ্গো এরই মধ্যে রুয়ান্ডার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে রুয়ান্ডার স্নাইপাররাই নর্থ কিভুর সামরিক গভর্নরকে হত্যা করেছে বলে শনিবার দাবিও করেছে তারা। শেষ দুই দিনে ওই এলাকায় জাতিসংঘের তিন শান্তিরক্ষীও মারা পড়েছে। এদের একজন উরুগুয়ের, বাকি দু’জন দক্ষিণ আফ্রিকার।

জনপ্রিয় সংবাদ

বিদ্রোহীদের দখলে গোমা শহর

আপডেট সময় : ০৯:২৩:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

মধ্য আফ্রিকার খনিজসমৃদ্ধ দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর, নর্থ কিভু প্রদেশের রাজধানী গোমা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি করেছে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের একটি জোট। সরকারি সেনাদের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ভোরের আগে রাত ৩টার মধ্যে আত্মসমর্পণেও নির্দেশ দিয়েছে তারা। পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী এই জোটের ত্বরিত অগ্রগতির কারণে এরই মধ্যে ওই এলাকার লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, একইসঙ্গে অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। এ দাবি প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও কিনশাসা সরকারের মুখপাত্র এবং সেনাবাহিনীর কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়াও পায়নি তারা। কিনশাসা গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। দেশটির পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুমুল সক্রিয় বিদ্রোহী জোট কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সে সশস্ত্র মার্চ ২৩ মুভমেন্টও (এম২৩) আছে। প্রতিবেশী রুয়ান্ডা-সমর্থিত এই এম২৩ বিদ্রোহীরা চলতি মাসে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের দ্বন্দ্বমুখর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে একের পর এক জায়গা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। কয়েকদিন আগেই তারা নর্থ কিভুর রাজধানী গোমাতে হামলা শুরু করে। গত রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই এম২৩ যোদ্ধারা শহরের কেন্দ্র থেকে ৯ কিলোমিটারের মতো দূরে প্রান্তস্থিত মুনিগিও পেরিয়ে যায় বলে তিনটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে। গোমা এখন আমাদের হাতে, বলেছেন বিদ্রোহী জোট কঙ্গো রিভার অ্যালায়েন্সের কর্নেই নাঙ্গা।
বিদ্রোহীরা এর আগে শহরটিতে প্রবেশের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারি বাহিনীকে গত রোববার রাতের মধ্যে নিরস্ত্র হয়ে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছিল। নাঙ্গা জানান, মধ্যস্থতার পর সেনা কর্মকর্তাদেরকে নৌকায় গোমা থেকে বুকাভু যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছিল বিদ্রোহীরা। আমরা অস্ত্র নামিয়ে রাখতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দিয়েছিলাম। ওই সময় এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে, তাই এখন আমরা বলছি তারা তাদের সামরিক সরঞ্জাম জাতিসংঘ মিশনে জমা দিতে পারবে, রয়টার্সকে এমনটাই বলেছেন এম২৩-র মুখপাত্র উইলি এঙ্গোমা। রাত ৩টার আগে আগে আত্মসমর্পণকারী সরকারি সেনাদের শহরের মাঠগুলোতে জড়ো করা হবে, বলেছেন তিনি। বিদ্রোহীদের আরেক মুখপাত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, কিভু হ্রদে নৌচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। শহরটির অনেক বাসিন্দা রাত নামার পর বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্ন গুলির শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন তবে এ গোলাগুলি কীসের কিংবা যুদ্ধ এখনও চলছে কিনা তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। লোডশেডিংয়ের কারণে গোমার বেশিরভাগ অংশ এমনিতেই অন্ধকারে ডুবে আছে। পরিস্থিতি নিয়ে রোববারই বৈঠক করেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং তাতে ভয়াবহ মানবিক সংকটও দেখা দেবে বলেও আশঙ্কা করছে তারা। বিদ্রোহীদের এই অগ্রগতিতে রুয়ান্ডার পৃষ্ঠপোষকতার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। কিগালি (রুয়ান্ডার রাজধানী) অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি করছে, তারা আর এম২৩-কে সহায়তা দিচ্ছে না। জাতিসংঘে রুয়ান্ডার রাষ্ট্রদূত এর্নেস্ট রোয়ামুচিও বলেছেন, তার দেশ কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে ক্রমশ খারাপ হওয়া পরিস্থিতির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তবে এ পরিস্থিতির জন্য গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সরকারই মূলত দায়ী, বলেছেন তিনি। দেশটির সরকার যদি শান্তির বিষয়ে তাদের সত্যিকারের অঙ্গীকার দেখাতে পারতো, তাহলে হয়তো এখনকার এই সংকট এড়ানো যেত, বলেছেন রোয়ামুচিও। রুয়ান্ডায় ১৯৯৪ সালের গণহত্যার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট পরপর দুটি আঞ্চলিক যুদ্ধের প্রভাবে পশ্চিম ইউরোপের প্রায় সমান আয়তনের দেশ কঙ্গোর পূর্বদিককার সীমান্তবর্তী অঞ্চল এখনও নানান বিদ্রোহী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণাধীন বারুদে ঠাসা এলাকা হিসেবে রয়েই গেছে। তুতসি নেতৃত্বাধীন একের পর এক বিদ্রোহী গোষ্ঠীর উত্থানের পর এখন ওই এলাকায় সবচেয়ে সক্রিয় দেখা যাচ্ছে এম২৩-কে। প্রশিক্ষিত ও আধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত এই গোষ্ঠীটি বলছে, তারা কঙ্গোর তুতসিদের সুরক্ষায় কাজ করছে। অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সরকারের ভাষ্য, এই বিদ্রোহীরা রুয়ান্ডাকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছে। কিগালি শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। কঙ্গো এরই মধ্যে রুয়ান্ডার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে রুয়ান্ডার স্নাইপাররাই নর্থ কিভুর সামরিক গভর্নরকে হত্যা করেছে বলে শনিবার দাবিও করেছে তারা। শেষ দুই দিনে ওই এলাকায় জাতিসংঘের তিন শান্তিরক্ষীও মারা পড়েছে। এদের একজন উরুগুয়ের, বাকি দু’জন দক্ষিণ আফ্রিকার।