* একত্রিত হয়ে নাগরিক সেবা দিবে নগরের সব সেবা প্রতিষ্ঠান
* সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ের দায়িত্ব যাবে নগর সরকারের হাতে
* সরকার প্রধানকে সভাপতি করে গঠিত হবে জাতীয় নগর কাউন্সিল
‘নগর সরকারে সবগুলো সার্ভিস যদি এক জায়গায় আনা যায়, সেটার সমন্বয়টা ভালো হবে। সেজন্যই নগর সরকারের ধারণাটা এসেছে। পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও এটা আছে’
-এ এইচ এম কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব, নগর উন্নয়ন অনুবিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সব ধরনের নাগরিক সেবা নগর কর্তৃপক্ষের অধীনে নিয়ে নগর সরকার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবনা আনা হচ্ছে। এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। জাতীয় নগর নীতিমালার আওতাভুক্ত এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে রাজউক, ওয়াসা, পিডিবি, ডেসা, ডেসকো, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থার কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব যৌক্তিকভাবে সিটি করপোরেশনের মেয়রদের থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হবে সিটি গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের হাতে। এতে বহুল সমালোচনার শিকার ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ক্ষমতাহীনতার বিষয়টি দূর হতে যাচ্ছে। সমন্বয় ও নাগরিক সেবার গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সরকার প্রধানকে সভাপতি করে জাতীয় নগর উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করার প্রস্তাবনাও রাখা হচ্ছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো থেকে ধারণা নিয়েই ‘জাতীয় নগর নীতি, ২০২৫’ এর খসড়া প্রস্তুত করেছে সরকার। যা আগামী মে মাসের মধ্যে চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নিয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার।
জানা গেছে, কয়েক দশক ধরে দফায় দফায় জাতীয় নগর নীতির খসড়া করা হলেও বিএনপি, আওয়ামী লীগ কেউই খসড়াটি অনুমোদন দেয়নি, আগ্রহীও হয়নি কোনো সরকারই। নগর নীতির খসড়া প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে ২০০৬ সালে। ২০১১ সালে নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিনদিনের সেমিনারে খসড়াটা অনুমোদিত হয়। ২০১৪ ও ২০১৬ সালে খসড়াটা রিভিশন হয়। ২০২৪ সালে বিগত সরকারের আমলে সেটা আবার রিভিশন হয়। তবে সেটি অনুমোদনের উদ্যোগ বিগত সরকার নিতে পারেনি। গত ২৮ জানুয়ারি আবার বড় আকারে পরামর্শ সভা করার পর তা নিয়ে খসড়া প্রস্তুত করার পর এখন সবার মতামত বিবেচনায় নিয়ে খসড়াটি উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। তারপর এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে ভেটিংয়ের জন্য।
খসড়া নীতিমালা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জনসংখ্যা ও আর্থিক সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের নগরগুলো মেগাসিটি যেখানে জনসংখ্যা এক কোটি বা বেশি, মহানগর/মেট্রোপলিটন সিটি যেখানে জনসংখ্যা ৫ লাখ থেকে এক কোটি, মাঝারি শহর/জেলা শহর যেখানে জনসংখ্যা ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ, উপজেলা শহর, ছোট শহর/উপজেলা কেন্দ্রে যেখানে জনসংখ্যা ২০ থেকে ৫০ হাজার হিসেবে বিন্যাস করা হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের জন্য নগরায়ণ ব্যবস্থার কাঠামোবদ্ধ ক্রমবিন্যাস ও বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে আঞ্চলিক ভারসাম্যপূর্ণ পরিকল্পিত নগরায়ণ করা হবে। নগর ভূমি ব্যবস্থাপনা, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থাপনা, নগর ও পল্লি এলাকার আন্তঃযোগাযোগ ও সমন্বিত উন্নয়ন, সবার জন্য নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা এবং নগর ব্যবস্থাপনা কৌশল ও পরিচালনায় জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে জলবায়ুসহিষ্ণু নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে খসড়া নীতিতে। নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান ও খাদ্যনিরাপত্তাসহ অন্য নিত্য পরিষেবা যেমন- পানি, স্যানিটেশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবহন ব্যবস্থাপনার যথাযথ প্রতিপালন করা হবে। নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকালে জনঅংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, লৈঙ্গিক ভারসাম্যতা নিশ্চিত করা, নগর সংক্রান্ত গবেষণা উৎসাহিত করা, তথ্যভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের আয়োজন এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হবে।
খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারপ্রধানকে সভাপতি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, মেয়র ও কাউন্সিলরদের স্বীকৃত সংগঠনের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার প্রধানদের সমন্বয়ে জাতীয় নগর উন্নয়ন কাউন্সিল গঠন করা হবে। এ কাউন্সিল নগরায়ণ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা দেবে। কাউন্সিলকে সহায়তার জন্য একটি নগর উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে বলেও খসড়া নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নগর উন্নয়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামান বলেন, নগর সরকার আমরা অনেক দিন ধরে চাচ্ছি। সবগুলো সার্ভিস যদি একটি জায়গায় আনা যায়, সেটার সমন্বয়টা ভালো হয়। সেজন্যই নগর সরকারের ধারণাটা এসেছে। পৃথিবীর অন্য অনেক দেশেও এটা আছে।
























