পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক সংগঠন, ক্লাব, পিকনিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা এখন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শুধু শিক্ষার্থীরাই নন, নামাজের সময় উচ্চ শব্দে গান বাজানোর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মসজিদের মুসল্লিদেরও ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মুসল্লিরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলসংলগ্ন কবি বন্দে আলী মিঞা মুক্তমঞ্চে প্রতিদিনই কোনো না কোনো অনুষ্ঠান লেগেই থাকে। বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত দশটা পর্যন্ত উচ্চশব্দে গান-বাজনার ধুম লেগে থাকে, যার মধ্যে অনেক সময় অশ্লীল গানের আধিক্যও থাকে। এতে করে হলে থাকা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং ঘুম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কেউ কেউ এমনকি তীব্র মাথাব্যথা ও অসুস্থতার শিকার হচ্ছেন।
বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কার্যকর সমাধান পাননি। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দাবি করেছেন।
হলের থাকা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন,”আমাদের হলের পাশে মুক্তমঞ্চে প্রায় প্রতিদিনই বিকেল থেকে উচ্চ শব্দে গান-বাজনা শুরু হয়, যা গভীর পর্যন্ত চলতে থাকে। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় এটি আমাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় এমন হয়, পড়ার টেবিলে বসে থাকলেও শব্দের কারণে মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। মাথার ব্যাথা শুরু হয়। সারাদিন ক্লাস করে যখন হলে ফিরে একটু বিশ্রাম নিতে চাই, তখনও এই শব্দ দূষণ সহ্য করতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু গান বাজানো হয়, যেগুলো খুবই অশোভন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের সঙ্গে এসব মানানসই নয়। বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। বরং দিন দিন শব্দের মাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।”
কম্পিউটার এন্ড সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী রতন আহমেদ বলেন, “আমার ঘুম খুব সংবেদনশীল। সামান্য শব্দ হলেও আমি ঘুম থেকে জেগে যাই। অথচ হলে প্রতিদিনই উচ্চ শব্দে গান বাজানো হয়, যা ঘুমে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটায়। রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে পরদিন ক্লাসে মনোযোগ দিতে কষ্ট হয়। প্রায়ই ক্লাসে গিয়ে মাথা ঝিম ঝিম করে, কোনো কিছু ঠিকমতো বুঝতে পারি না। শব্দ দূষণের কারণে মাঝে মাঝে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। মাথা ধরে আসে, কোনো কিছুতেই মনোযোগ দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পরিবেশ যদি শিক্ষার অনুকূলে না থাকে, তাহলে আমরা কোথায় পড়াশোনা করব?”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কামরুজ্জামান খান বলেন, ১২০ ডেসিবেলের উপরে শব্দ হলে সেটা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর । আর হলের পাশে মুক্তমঞ্চ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা থেকে ঘুম সব কিছুতেই অসুবিধা হয়। আর এত জোরে গান বাজানো আমার কাছে কখনো যৌক্তিক মনে হয় না।
তিনি আরও বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা ফোন দিয়ে অভিযোগ করে। বিশেষ করে হলের নামাজের সময়েও এসব চলে। প্রোগ্রামের পরিচালনায় ও বিভাগের শিক্ষার্থীদের আমি বলে দেয় একটা নিদিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে এসব করতে। তারপরও আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি আশা করি খুব দ্রুত সমাধান করতে পারব।


























