চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির তৌহিদুল আনোয়ার হাই স্কুলে যষ্ট থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পূর্ণ বিনা বেতনে পড়ানো হয়, নেয়া হয়না ভর্তি ফ্রি। পাশাপাশি দূরবর্তী, আধিবাসী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিনামূল্যে দেয়া হয় বাইসাইকেল। ব্যতিক্রমী উদ্যোগের এ স্কুলটি উপজেলার হারুয়ালছড়ি ও সুয়াবিল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী জনপদ বারমাসিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত। বারসাসিয়া, পাটিয়ালছড়ি, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, সুয়াবিল, আজিমপুর সহ শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়া দারিদ্রপীড়িত জনপদে শিক্ষার মশাল জ্বলাতে ২০২০ সালে মানবিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা- আহমেদ সামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৭৩ শতক নিজস্ব জায়গার ওপর এ স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে।
নানা প্রজাতির ফুল গাছে সাজানো-গোছানো ৪ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের স্কুলটি দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। আহমেদ সামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শিল্পপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন, সদস্য আহমেদ শরীফ উদ্দিন আজম, মোহাম্মদ সূজা উদ্দিন, ফাতেমা খাতুন, হালিমা খাতুন, মোর্শেদা রানা ও মুনতাসীর শাহনূর তাঁদের পরিবারের সদস্য মরহুম আহমেদ তৌহিদুল আনোয়ারের নামে হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
স্কুলে রয়েছে ৪ হাজার বই সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার, সততা স্টোর, আর্ট গ্যালারী, এবাদখানা, শহীদ মিনার, বিস্তৃত খেলার মাঠ, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত শৌচাগার, ছাত্র আবাসিক, ৫ শতাধিক ধারণ ক্ষমতার অডিটোরিয়াম, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের জন্য পৃথক কোয়ার্টার। এখানে গতানুগতিক ধারার বাহিরে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি মাদক, বাল্যবিবাহ, শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এলাকাকে সচেতন করতে করা হয় বাইসাইকেল র্যালী। এছাড়াও বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য বালী খেলা, পৌষ মেলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়। বিশেষ করে স্কুলের দূরবর্তী, মেধাবী ও আধিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য চালু করা হয়েছে বিনামূল্যে বাইসাইকেল বিতরণ প্রকল্প। তৃতীয় বারের মত সর্বমোট ৯৬টি বাইসাইকেল হস্তান্তর করা হয়েছে স্কুলের পক্ষ থেকে। শতভাগ পাশের হার এ বছরও ধরে রাখতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের রাখা হয়েছে স্কুলের নিজস্ব আবাসিকে। ১৭ জন শিক্ষিক-শিক্ষিকা দ্বারা ৬৫০ জন শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হয়। রয়েছে ৫ জন কর্মচারী। স্কুলটি একাডেমিক পাঠদানের অনুমতি পেলেও এখনো মেলেনি এমপিওভুক্তির স্বীকৃতি। বর্তমানে আহমেদ সামসুল আনোয়ার ফাউন্ডেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন-ভাতা সহ শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাঠদান করানো হচ্ছে।
সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী নূপুর বালা ত্রিপুরা সবুজ বাংলাকে বলেন, ৯ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতিদিন স্কুলে আসি। স্কুলে কোন বেতন নেয় না, পাশাপাশি আমাদেরকে বাইসাইকেল দিয়ে যাতায়াতে সুবিধা করে দিয়েছেন, অন্য কোন স্কুলে এ সুবিধা নেই।
অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র বাবু সজীব ত্রিপুরা সবুজ বাংলাকে বলেন, এ বিদ্যালয়টি আমাদের জন্য আর্শিবাদ। আশপাশে আর কোন উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী প্রাইমারী শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাইনি। তৌহিদুল আনোয়ার হাই স্কুল আমাদেরকে বিনামূল্যে পড়ানোর পাশাপাশি বাইসাইকেল উপহার সহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে থাকে।
কেশব দেব সবুজ বাংলাকে বলেন, অন্ধকারাচ্ছন্ন বারমাসিয়া জনপদে তৌহিদুল আনোয়ার হাই স্কুল একটি মাইল ফলক বলা যায়। শিক্ষা বিস্তারে এ বিদ্যালয় অসামান্য অবদান রাখছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরষ্কৃত হয়েছে। পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছাত্রছাত্রীদের মনোনিবেশ করানো হয়।
প্রধান শিক্ষক কাউছার বেগম বলেন, স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের সদস্যদের সৃজনশীল মনোভাব এবং স্বার্থহীন সহযোগিতায় স্কুলটি অল্প সময়ে সুনাম-সুখ্যাতি অর্জন করেছে। শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করতে বিনামূল্যে পাঠদান ও বাইসাইকেল বিতরণ সহ গণমুখী নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিন দফায় ৯৬টি বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে, ভবিষ্যতে পরিমাণ আরো বাড়ানো হবে।


























