০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঙালির লড়াকু চেতনা ও সংগ্রামী মনোভাব জাগরণে কবি নজরুল ছিলেন প্রতিভু : ইবি ভিসি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন আমাদের জাতীয় কবি কবি নজরুল তার সাহিত্যের ভাববস্তুতে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছিলেন। যেখানে প্রপঞ্চ হিসেবে আত্মশক্তি’ ছিল ভিত্তিভূমি। তিনি সবসময়ই মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলেন এবং বাঙালী বারবার নজরুল দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই ২৪’শও ছিল নজরুল দ্বারা উদ্দীপিত।

বুধবার (২১ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে ও বাংলা বিভাগের সহযোগিতায় এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি৷

তিনি বলেন, বাঙালীর যে হাজার বছরের যে পরাধীনতা সেখান থেকে মুক্তির কথা বলেছেন বহু কবি,সাহিত্যিক। শুনিয়েছেন জাগরণের গান। সাম্যের কবি,মানবতার কবি,বিদ্রোহী কবি,প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তাদের অগ্রগন্য। ঘুম ভাঙ্গার গান তিনিই প্রথম শুনিয়েছিলেন।

বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনজুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার।

ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যেসব মূল্যবোধ আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, তার সবকিছুই নজরুল-সাহিত্য বা নজরুলের মূল্যবোধের মধ্যে বিদ্যমান। তাই তাকে আমরা জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলাম। তবে স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসে আজ যদি হিসাব করি, কতটা পৌঁছাতে পারলাম সেই মূল্যবোধের কাছে, অনেকটা হতাশা হতে হবে বৈকি। তিনি সবাইকে নজরুল চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক, কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, নজরুর চিন্তায়ও যেমন ছিলেন তার কর্মেও তেমনটি প্রতিফলন ঘটেছে। তার যে সর্বমানবিকতা বোধ অর্থাৎ নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান সবার ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সত্তার সম্মিলনে যে ‘অভেদসুন্দর’ সাম্য সৃষ্টির কথা বলেছিলেন সেটা বিশ^ সাহিত্যে খুবই গৌরবের। তাইতো তিনি চিরসুন্দর সাম্যবাদী কবি, সাম্যবাদের কবি।

তিনি বলেন, কাজী নজরুল বাঙালির স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কতগুলো সূচক বক্তব্য দিয়েছেন। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, বাঙালি যেদিন এক হয়ে বলতে পারবে বাঙালির বাংলা, সেদিন সে অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালি একাই সেদিন ভারত স্বাধীন করবে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের কী করতে হবে, এই প্রবন্ধের শেষ দিকে নজরুল তার উপায় বাতলেছেন। তার মত হলো, বাঙালিকে তার বীরসত্তার প্রকাশ ঘটাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে মানবিক বৈষম্য দূর করা দরকার। এখানে নানা বিষয়ে নানা মত-পথ থাক, মানবিক বৈষম্য দুর করতে কবি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, রাজনীতিক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সবার এক জায়গায় আসতে হবে। সেই পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে আমরা আবার ভুল পথে হাঁটব। আর এটা হলে তা হবে দেশের নতুন বিপ্লবের আকঙ্খার মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় কবিকে যথাযথ মর্যাদা তখনই আমরা দিতে পারবো যখন তার স্বপ্ন পূরণ হবে, তার আকঙ্খা বাস্তবায়িত হবে। তিনি নজরুলের উপর পঠন-পাঠন ও গবেষণা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনে নজরুলকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে।

ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আদর্শিকভাবে নজরুলকে হৃদয়ঙ্গম করা ও বাস্তবজীবনে কর্মে রুপান্তরিত করার উপর গুরুত্বদেন। তিনি বলেন, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে কবি নজরুল মানুষের যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন সেটা প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিরাজমান।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

বাঙালির লড়াকু চেতনা ও সংগ্রামী মনোভাব জাগরণে কবি নজরুল ছিলেন প্রতিভু : ইবি ভিসি

আপডেট সময় : ০৪:২৪:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেছেন আমাদের জাতীয় কবি কবি নজরুল তার সাহিত্যের ভাববস্তুতে সাম্য, মানুষের মুক্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মতো মূল্যবোধ সৃষ্টি করেছিলেন। যেখানে প্রপঞ্চ হিসেবে আত্মশক্তি’ ছিল ভিত্তিভূমি। তিনি সবসময়ই মানুষকে জাগাতে চেয়েছিলেন এবং বাঙালী বারবার নজরুল দ্বারা উজ্জীবিত হয়েছে। তিনি বলেন, জুলাই ২৪’শও ছিল নজরুল দ্বারা উদ্দীপিত।

বুধবার (২১ মে) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে ও বাংলা বিভাগের সহযোগিতায় এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি৷

তিনি বলেন, বাঙালীর যে হাজার বছরের যে পরাধীনতা সেখান থেকে মুক্তির কথা বলেছেন বহু কবি,সাহিত্যিক। শুনিয়েছেন জাগরণের গান। সাম্যের কবি,মানবতার কবি,বিদ্রোহী কবি,প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন তাদের অগ্রগন্য। ঘুম ভাঙ্গার গান তিনিই প্রথম শুনিয়েছিলেন।

বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনজুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার।

ভাইস চ্যান্সেলর বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা যেসব মূল্যবোধ আকাঙ্ক্ষা করেছিলাম, তার সবকিছুই নজরুল-সাহিত্য বা নজরুলের মূল্যবোধের মধ্যে বিদ্যমান। তাই তাকে আমরা জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলাম। তবে স্বাধীনতার অর্ধশতক পেরিয়ে এসে আজ যদি হিসাব করি, কতটা পৌঁছাতে পারলাম সেই মূল্যবোধের কাছে, অনেকটা হতাশা হতে হবে বৈকি। তিনি সবাইকে নজরুল চেতনায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের মূখ্য আলোচক, কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, নজরুর চিন্তায়ও যেমন ছিলেন তার কর্মেও তেমনটি প্রতিফলন ঘটেছে। তার যে সর্বমানবিকতা বোধ অর্থাৎ নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান সবার ব্যক্তিক ও সামষ্টিক সত্তার সম্মিলনে যে ‘অভেদসুন্দর’ সাম্য সৃষ্টির কথা বলেছিলেন সেটা বিশ^ সাহিত্যে খুবই গৌরবের। তাইতো তিনি চিরসুন্দর সাম্যবাদী কবি, সাম্যবাদের কবি।

তিনি বলেন, কাজী নজরুল বাঙালির স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কতগুলো সূচক বক্তব্য দিয়েছেন। ‘বাঙালির বাংলা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, বাঙালি যেদিন এক হয়ে বলতে পারবে বাঙালির বাংলা, সেদিন সে অসাধ্য সাধন করবে। বাঙালি একাই সেদিন ভারত স্বাধীন করবে। স্বাধীনতার জন্য আমাদের কী করতে হবে, এই প্রবন্ধের শেষ দিকে নজরুল তার উপায় বাতলেছেন। তার মত হলো, বাঙালিকে তার বীরসত্তার প্রকাশ ঘটাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দেশ থেকে মানবিক বৈষম্য দূর করা দরকার। এখানে নানা বিষয়ে নানা মত-পথ থাক, মানবিক বৈষম্য দুর করতে কবি, বুদ্ধিজীবী, সুশীল, রাজনীতিক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মীসহ সবার এক জায়গায় আসতে হবে। সেই পরিবেশ বজায় রাখতে না পারলে আমরা আবার ভুল পথে হাঁটব। আর এটা হলে তা হবে দেশের নতুন বিপ্লবের আকঙ্খার মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধাচরণ।

প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর তার বক্তব্যে বলেন, জাতীয় কবিকে যথাযথ মর্যাদা তখনই আমরা দিতে পারবো যখন তার স্বপ্ন পূরণ হবে, তার আকঙ্খা বাস্তবায়িত হবে। তিনি নজরুলের উপর পঠন-পাঠন ও গবেষণা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। তিনি বলেন, আমাদের জীবনে নজরুলকে আরও প্রাসঙ্গিক করে তুলতে হবে।

ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আদর্শিকভাবে নজরুলকে হৃদয়ঙ্গম করা ও বাস্তবজীবনে কর্মে রুপান্তরিত করার উপর গুরুত্বদেন। তিনি বলেন, দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে কবি নজরুল মানুষের যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন সেটা প্রতিষ্ঠার সময় বাংলাদেশে এখন পুরোপুরি বিরাজমান।