পবিত্র ঈদুল আজহার বাকী আর মাত্র নয় দিন। ঈদের দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসলেও চট্টগ্রামের মসলার বাজার অন্য সময়ের চেয়ে নিম্নমুখী। মুসলমানদের এই উৎসব এলেই সাধারণত বাড়ে আদা, রসুন, পেঁয়াজের চাহিদা। প্রতিবছর এমন সময়ে মসলাজাতীয় এই তিন পণ্যের দাম বাড়লেও এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। পাইকারি বাজারে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের বাজার এখন নিম্নমুখী। তবে এর প্রভাব পড়েনি খুচরা বাজারে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিশ্ববাজারে বুকিং রেট কম ও সরবরাহ বাড়ার কারণে এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ২ টাকা, চায়না রসুনে ২০ টাকা ও চায়না আদা ১৫, চায়না দারুচিনিতে ৫ টাকা, ইন্ডিয়ান জিরায় ও ইন্দোনেশিয়ান লবঙ্গে ১০ টাকা করে কমেছে।বর্তমানে খাতুনগঞ্জে ভারতীয় কোনো পেঁয়াজ নেই। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশটি থেকে কোনো পেঁয়াজও আসছে না। তাই পুরো বাজারে রয়েছে দেশি পেঁয়াজ। এবার পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় গত একমাস ধরে পেঁয়াজের বাজার চড়া হয়নি। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৮ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি চায়না রসুন ১৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়। তাছাড়া একই সময়ের ব্যবধানে কেজিতে ১৫ টাকা কমে চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকায়।
অন্যদিকে পাইকারি বাজারটিতে বর্তমানে প্রতি কেজি কেরালা আদা ও দেশি রসুন ১০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইন্ডিয়ান জিরা ৫৭৫ টাকা, চায়না দারুচিনি ৩৬৫ টাকা, ইন্দোনেশিয়ান লবঙ্গ ১২শ ২৫ থেকে ৩০ টাকা ও আফগানি কিসমিস ৫২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ইলিয়াস মার্কেটের মসলা আমদানিকারক মেসার্স হাজী জসিম ট্রেডার্সের ম্যানেজার আশিকুর রহমান জিহান বলেন, ‘কোরবানির ঈদে প্রতিবছর মসলা জাতীয় পণ্যের চাহিদা বাড়ে। স্বাভাবিকভাবে চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে। কিন্তু এবছর এসব পণ্যের দাম নিম্নমুখী। তেমন বেচা-বিক্রি নেই। ঈদ উপলক্ষ্যে আশানুরূপ ব্যবসা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বেকায়দায় রয়েছে। বাজারে প্রচুর পণ্য মজুদ আছে।’উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্র চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জুলাই মাসে ৯ হাজার ৬৮৭ টন, আগস্টে ৮ হাজার ৭৪৯ টন, সেপ্টেম্বরে ১২ হাজার ২৩৮ টন, অক্টোবরে ১২ হাজার ৪৭৫ টন, নভেম্বরে ১২ হাজার ৪১১ টন, ডিসেম্বরে ১৮ হাজার ৬১৪ টন, জানুয়ারিতে ১০ হাজার ৪৯৩ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৪ হাজার ৬৯৮ টন এবং মার্চ ও এপ্রিল মিলে ১০ হাজার ৪৯৩ টন রসুন আমদানি হয়েছে।অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে চলতি অর্থবছরে জুলাই মাসে ৪ হাজার ৯২৩ টন, আগস্টে ৬ হাজার ৭৬৪ টন, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ৩৬ টন, অক্টোবরে ৮৬০ টন, নভেম্বরে ৪৪৪ টন, ডিসেম্বরে ৩৮৪ টন, জানুয়ারিতে ৩১৪ টন, ফেব্রুয়ারিতে ৩২৯ টন এবং মার্চ ও এপ্রিল মিলে ২ হাজার ৯৬৫ টন আদা আমদানি হয়েছে। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘দেশি পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। প্রতিদিন ট্রাকে ট্রাকে পেঁয়াজ আসছে। পুরো বাজার দেশি পেঁয়াজে সয়লাব। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও আদা, রসুনের আমদানি ভালো। বাজারে কোনো সংকট নেই। সব মিলিয়ে সরবরাহ বাড়ায় এবার এই তিন পণ্যের দাম নিম্নমুখী। আশা করছি, এসব পণ্যের দাম বাড়বে না। সে হিসেবে আমাদের এখানে বেচাবিক্রি বাড়েনি।’
এমআর/সব


























