০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থী থেকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সীমা

সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি প্রতিনিধি

 

বাংলাদেশের সনামধন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের বিভাগের মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কিছুটাপিছিয়ে ছিল উত্তর জনপদের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আক্ষেপ ছিলো মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে। যদিও আগে বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মত বেরোবির শিক্ষার্থী হিসেবে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন সীমা আক্তার। তিনি ইতিহাস ও প্রত্নতত্ন বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ।

নব নিযুক্ত প্রভাষক সীমা আক্তারের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবিগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদীঘি দাড়ারপাড় গ্রামে। তিনি ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন।কালীগঞ্জ এমপি গার্লস হাই স্কুল ও কালীগঞ্জ কলেজ থেকে। তারপর ২০১৪ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বেরোবি থেকে ২০১৭ সালে অনার্স এবং ২০১৮ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ।

বিশ্ববিদযালয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো নিয়োগ পাওয়া ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও একই বিভাগে নিয়োগ পাওয়া নব নিযুক্ত প্রভাষক সীমা আক্তার বলেন, ‘বেরোবিতে যোগদানের আগে কোথাও কোন জব করিনি। সব ধরনের চাকরির প্রস্তুতিই নিয়েছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন ছিলো ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন আদর্শ শিক্ষক হবো। আলহামদুলিল্লাহ আমি সেটি পেরেছি। এই অনুভূতিকে কয়েকটি বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ যে সম্মানের জায়গা আমাকে দিয়েছেন তা শুকরিয়া আদায় করে শেষ হবে না। তবে একটা বিষয় আমার বার বার মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার নিকট একনিষ্ঠভাবে দোয়া। অদম্য ইচ্ছে আর কঠোর পরিশ্রম এ তিনটির আনুপাতিক হার যদি সমান হয় তবে ইনশাআল্লাহ যে কোন সৎ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে । তিনি আরো বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুদের অনুসরণ করে আধুনিক পদ্ধতিতে যথাযথভাবে গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে বিভাগে শিক্ষার গুণগত মান ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের শিক্ষক হিসেবে পেয়ে আনন্দিত ঐ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুন্না বিশ্বাস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে এখানে শিক্ষক হিসেবে এসেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন আমরা কোনো অংশেই অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে নেই। নিঃসন্দেহে তাদের এই সফলতা সকল শিক্ষার্থীদেরই আত্মবিশ্বাস বৃষ্টি বৃদ্ধি কীবে। এছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকে। তারা সবচেয়ে ভালো জানেন কোন জায়গাগুলোতে সংকট রয়েছে। তাই তারা সহজে সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে অন্যান্য বিভাগেও এভাবে যোগ্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।’

শিক্ষার্থীকে সহকর্মী পেয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থী যখন আমার সহকর্মী এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের এবং গৌরবের বিষয়। আমরা যাদের শিক্ষা দিয়েছি তারা যখন আমাদের সামনে আসে দাঁড়ায় তখন মনে হয় আমাদের শিক্ষকতা সার্থক।এছাড়াও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেছে। এভাবে তারা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা যেন তাদের জ্ঞানের দুতি ছাড়িয়ে দেয় সব জায়গায় সেই প্রত্যাশা সর্বদা।’

জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষার্থী থেকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক সীমা

আপডেট সময় : ১০:১৫:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ অক্টোবর ২০২৩

সিদ্দিকুর রহমান, বেরোবি প্রতিনিধি

 

বাংলাদেশের সনামধন্য প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের বিভাগের মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কিছুটাপিছিয়ে ছিল উত্তর জনপদের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি)। এটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আক্ষেপ ছিলো মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের মাঝে। যদিও আগে বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষার্থী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মত বেরোবির শিক্ষার্থী হিসেবে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন সীমা আক্তার। তিনি ইতিহাস ও প্রত্নতত্ন বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী ।

নব নিযুক্ত প্রভাষক সীমা আক্তারের বাড়ি পঞ্চগড় জেলার দেবিগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদীঘি দাড়ারপাড় গ্রামে। তিনি ২০১০ সালে এসএসসি এবং ২০১২ সালে এইচএসসি পাস করেন।কালীগঞ্জ এমপি গার্লস হাই স্কুল ও কালীগঞ্জ কলেজ থেকে। তারপর ২০১৪ সালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। বেরোবি থেকে ২০১৭ সালে অনার্স এবং ২০১৮ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ।

বিশ্ববিদযালয়ের ইতিহাসে দ্বিতীয় বারের মতো নিয়োগ পাওয়া ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও একই বিভাগে নিয়োগ পাওয়া নব নিযুক্ত প্রভাষক সীমা আক্তার বলেন, ‘বেরোবিতে যোগদানের আগে কোথাও কোন জব করিনি। সব ধরনের চাকরির প্রস্তুতিই নিয়েছিলাম। কিন্তু স্বপ্ন ছিলো ইনশাআল্লাহ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন আদর্শ শিক্ষক হবো। আলহামদুলিল্লাহ আমি সেটি পেরেছি। এই অনুভূতিকে কয়েকটি বাক্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ যে সম্মানের জায়গা আমাকে দিয়েছেন তা শুকরিয়া আদায় করে শেষ হবে না। তবে একটা বিষয় আমার বার বার মনে হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার নিকট একনিষ্ঠভাবে দোয়া। অদম্য ইচ্ছে আর কঠোর পরিশ্রম এ তিনটির আনুপাতিক হার যদি সমান হয় তবে ইনশাআল্লাহ যে কোন সৎ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে । তিনি আরো বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুদের অনুসরণ করে আধুনিক পদ্ধতিতে যথাযথভাবে গবেষণালব্ধ জ্ঞান বিতরণের মাধ্যমে বিভাগে শিক্ষার গুণগত মান ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাথীদের শিক্ষক হিসেবে পেয়ে আনন্দিত ঐ বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মুন্না বিশ্বাস বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করে এখানে শিক্ষক হিসেবে এসেছেন। তারা প্রমাণ করেছেন আমরা কোনো অংশেই অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে নেই। নিঃসন্দেহে তাদের এই সফলতা সকল শিক্ষার্থীদেরই আত্মবিশ্বাস বৃষ্টি বৃদ্ধি কীবে। এছাড়া নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা বেশি থাকে। তারা সবচেয়ে ভালো জানেন কোন জায়গাগুলোতে সংকট রয়েছে। তাই তারা সহজে সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। আমরা প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতে অন্যান্য বিভাগেও এভাবে যোগ্য শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।’

শিক্ষার্থীকে সহকর্মী পেয়ে ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমার শিক্ষার্থী যখন আমার সহকর্মী এটা আমাদের জন্য খুবই আনন্দের এবং গৌরবের বিষয়। আমরা যাদের শিক্ষা দিয়েছি তারা যখন আমাদের সামনে আসে দাঁড়ায় তখন মনে হয় আমাদের শিক্ষকতা সার্থক।এছাড়াও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেছে। এভাবে তারা তাদের মেধার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তারা যেন তাদের জ্ঞানের দুতি ছাড়িয়ে দেয় সব জায়গায় সেই প্রত্যাশা সর্বদা।’