সোমবার। আষাঢ়ের দুপুর। আকাশটা মেঘলা। তবে ক্ষণে ক্ষণেই মেঘের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রোদ। ফলে অনুভূত হচ্ছে ভ্যাপসা গরম। তবে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামের ঠিক পাশেই অবস্থিত নিচতলায় একটি জিমনেশিয়ামের ভেতরে ঢুকেই স্বস্তির পরশ পাওয়া গেল। কেননা একাধিক এয়ার কন্ডিশনার চলছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে ১৪-১৫ কিশোর-কিশোরীর প্রশিক্ষণ। আর তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যস্ত শাহরিয়া সুলতানা সূচি, যার আছেন অনেক পরিচয়।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ১০টি খেলার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে অনুর্ধ-১৬ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। যা গত ১৫ জুন থেকে শুরু। ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে। সংশ্লিষ্ট খেলার খেলোয়াড়রা সেই খেলার ফেডারেশনের অধীনে এই সময়টায় ক্যাম্পে থাকবেন।
এই কর্মসূচির লক্ষ্য হলো লক্ষ্য হলো তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের চিহ্নিত করা এবং তাদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে খেলার উন্নতি করা। এনএসসি যে খেলাগুলোর মাধ্যমে ট্যালেন্ট হান্ট করছে, সেগুলো হলো : জুডো, হ্যান্ডবল, ভলিবল, বাস্কেটবল, কাবাডি, ভারোত্তোলন, সাইক্লিং, জিমন্যাস্টিক্স, দাবা ও ক্রিকেট। এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামের অধীনে সারা দেশে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এই প্রতিযোগিতাগুলির মাধ্যমে এনএসসি তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করবে এবং তাদের উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা প্রদান করবে।
যাদের কথা একটু আগেই বলা হয়েছে, তারা সবাই ভারোত্তালক। সবুজ বাংলাকে ৪ বছরের ক্যারিয়ারে জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১৩ স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাবেক ভারোত্তোলক সূচি জানান, ‘১৬ থেকে ১৪ জনকে চূড়ান্তভাবে বাছাই করেছি (৫ মেয়ে ও ৯ ছেলে)।’
এশিয়ান মাস্টার্স ভারোত্তোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সূচি আরও জানান, এখান থেকে (প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অতীতে অনেক ভালোমানের খেলোয়াড় বের হয়েছে।’
নড়াইল, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, মেহেরপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এদের পাওয়া গেছে বলে জানান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ভারোত্তোলক কোচ সূচি। আট দিনের মতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর কেমন দেখলেন ভারোত্তোলকদের? ‘আমরা ওদেরকে বেসিক ট্রেনিংটাই দিয়েছি, পারফরম্যান্স ট্রেনিংটা নয়। বেসিক ট্রেনিংয়ে এরা বেশ ভালো করেছে। এদের মধ্যে সম্ভাবনাময় অনেকেই আছে, যাদের পরিচর্যা করা হলে, দীর্ঘমেয়াদী ট্রেনিং করানো হলে এরা অনেক ভালো করবে। ন্যাশনাল এবং ইন্টারন্যাশনাল পর্যায়ে পদক জিতবে।’ জানান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সহকারী পরিচালক (ক্রীড়া) এবং ভারোত্তোলনে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সাবেক জাতীয় ভারোত্তোলোক ও কোচ সূচি।
সূচি আরও যোগ করেন, ‘বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় কিন্তু ট্যলেন্ট হান্ট থেকে বের হওয়া খেলোয়াড়রা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো রেজাল্ট করেছিল। তবে তখন আমরা জেলায় জেলায় গিয়ে ট্রেনিং করিয়েছিলাম। এমনও হয়েছে একটা জেলা থেকেই আমরা অনেক ছেলেমেয়ে পেয়েছিলাম।’
তবে জিমনেশিয়ামের বদ্ধ-স্যাঁতসেতে পরিবেশ এবং জায়গার স্বল্পতা নিয়ে আক্ষেপ করলেন সূচি, ‘আসলে এখানে আমাদের খুবই ছোট জায়গা। একসঙ্গে বেশি প্লেয়ারদের ট্রেনিং করানো যায় না। ওদের ট্রেনিং করানোর কারণে ন্যাশনাল প্লেয়ারদের ট্রেনিং করানো সম্ভব হচ্ছে না। এই সমস্যার কথা এনএসসি এবং ফেডারেশন অবগত। শুনেছি খুব শিগগীরই আমাদের জন্য জায়গা বরাদ্ধ দেয়া হবে ময়মনসিংহের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে।’
দশ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে এই ১৪ ভারোত্তোলকের পরবর্তী করণীয় ধাপ কী হবে? ‘এই বেসিক ট্রেনিংটা শেষ হলে ওরা যে যার জেলায় ক্লাবের চলে যাবে। সেখানকার কোচদের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়া অব্যাহত রাখবে। তারপর এনএসসি থেকে ফেডারেশনকে চিঠি দেবে, যারা বেস্ট, তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের আওতায় আনার জন্য।’
কথা হয় সূচির মেয়ে শাম্মী সুলতানার সঙ্গেও, যিনি ১৪ ভারোত্তোলকের একজন। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অন্যদের চেয়ে বা অন্যদের চেয়ে তার পার্থক্য হলো এই খেলাতে তিনি মোটামুটি সফল ও প্রতিষ্ঠিত। জাতীয় পর্যায়ে খেলে এ পর্যন্ত জিতেছেন আটটি স্বর্ণ, দুটি রৌপ্য এবং সমসংখ্যক ব্রোঞ্জপদক।
এমন উল্লেখযোগ্য সাফল্যের পরেও শাম্মীকে কেন এনএসসির এই বয়সভিত্তিক ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামে যুক্ত হতে হলো? শাম্মীর যুক্তি, ‘শেখার কোন শেষ নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে আমার আরও শেখা উচিত, জানা উচিত। একই জিনিষ বারবার করলে ওই জিনিষটা রেগুলোর ট্রেনিংয়ের ওপর এফেক্ট ফেলে। কিছু জায়গায় আমার যে একটু একটু ভুল আছে, সেগুলো কারেক্ট করতে পারবো। এজন্যই এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামে ট্রায়াল দিয়েছি এবং টিকেছি।’
ভারোত্তোলন নিয়ে শাম্মীর ভবিষ্যত লক্ষ্য, ‘আগামীতে আমি অলিম্পিকে গোল্ড মেডেল জিততে চাই। যদিও জানি এটা অনেক কঠিন এবং দূরের পথ। তবে তার আগে জাতীয় পর্যায়ে সেরা হয়ে তারপর এসএ গেমসে সোনা অর্জন করতে চাই। এভাবেই পারফরম্যান্স লেভেল হাই করে একের পর এক লেভেল ক্রস করতে চাই।’
শাম্মী এ পর্যন্ত কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ইয়ুথ কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপে (২০২৩ সালে) এবং কাতারে এশিয়ান ইয়ুথ এ্যান্ড জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপে। কাতারে অল্পের জন্য ব্রোঞ্জ জিততে পারেননি, চতুর্থ হয়েছিলেন। কাজাখস্তানে আগামী ৪-১০ জুলাই পর্যন্ত এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবেন।
আরকে/সবা
শিরোনাম
জাতীয় ভারোত্তোলক কোচ শাহরিয়া সুলতানা সূচি
‘দীর্ঘমেয়াদী ট্রেনিংয়ে এরা অনেক ভালো করবে’
দীর্ঘমেয়াদী-উন্নত প্রশিক্ষণ পেলে একসময় জিয়ারুল ইসলাম বা মাবিয়া আক্তার সীমান্তর মতো খ্যাতিমান ভারোত্তোলক হতে পারবে এই কিশোর-কিশোরীরা। ছবি : সবুজ বাংলা
জনপ্রিয় সংবাদ
























