০১:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এনএসসির অনুর্ধ-১৬ ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ

চাকার ঘূর্ণনে গড়া স্বপ্নের মানচিত্র

  • রুমেল খান
  • আপডেট সময় : ১০:০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
  • 297

পল্টন ময়দানে অনুশীলন শেষে অনুর্ধ-১৬ সাইক্লিস্টরা। ছবি : সবুজ বাংলা

ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান। সাধারণত এই মাঠে ফুটবল-ক্রিকেট খেলাই বেশি হয়। মাঝেমধ্যে রাগবি, কাবাডিও হয়। তবে পড়ন্ত বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। একঝাঁক ছেলেমেয়ে অনবরত রেসিং সাইকেল চালিয়ে গোটা মাঠ চক্কর দিচ্ছে। তাদের প্রয়োজনীয় দিক-নিদের্শা দিচ্ছেন এক ব্যক্তি, সহজেই তাকে কোচ বলে বোঝা যায়। সাইক্লিংয়ের দৃশ্যটি কৌতুহলী হয়ে দেখছেন আশেপাশের কিছু মানুষ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ১০টি খেলার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে দশ খেলায় অনুর্ধ-১৬ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে দশ দিনের জন্য। এই খেলাগুলোর একটি হচ্ছে সাইক্লিং।
পল্টন মাঠে কথা হয় সাইদুর রহমানের সঙ্গে। ১৯৯৫ সাল থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সাইক্লিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন। অবসরে গেছেন গত এপ্রিলে। এখন কাজ করছেন এনএসসি কর্তৃক বাছাইকৃত কিছু প্রতিভাবান সাইক্লিস্টদের নিয়ে। সবুজ বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগেও করেছি। তখন কাজের পদ্ধতি একটু ভিন্ন ছিল। সে সময় জেলায় জেলায় গিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিতাম। তারপর কোয়ান্টিটি থেকে কোয়ালিটি কিছুটা সংগ্রহ করে সেন্ট্রালি করতাম। তাতে করে পোটেনশিয়ালটা আরও ভাল হতো। আর এখন সব জেলা থেকে একসঙ্গে খেলোয়াড় নিয়ে আসা হচ্ছে সেন্ট্রালে (ঢাকায়)। তারপর সেখান থেকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
ঢাকায় আসার পর সব সাইক্লিস্ট থেকে বাছাইয়ের পর টিকে গেছে ১৬ জন (১১ ছেলে, ৫ মেয়ে)। এরা একেকজন একেক জেলার। তারা ঢাকায় বেসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও জেলা ফিরে যাবে। ‘সেখানে আরও প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালো করবে। তবে এনএসসি যদি কার্যক্রমটা আগের মতো জেলায় করতে পারে, তাহলে বেশি ভালো হবে।’ জানান সাইদুর।
অতীতে যারা ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে বাছাই হয়েছিল, পরবর্তীতে তারা সবাই জাতীয় প্রতিযোগিতায় রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক জিতেছে বলে জানান সাইদুর। তাদের বেশিরভাগকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চাকরি দিয়েছিল। এছাড়া বিজিবি, আনসার, জেলেও অনেকে চাকরি পেয়েছিল শুধুমাত্র ভাল খেলার সুবাদে।
সাইদুর আরও যোগ করেন, ‘রেসিং সাইকেলের দাম এমনিতেই বেশি (সর্বনিন্ম মূল্য ৭০ হাজার টাকা), তার ওপর খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। তাছাড়া বাছাইকৃত সাইক্লিস্টদের সবাইকে পর্যাপ্ত সাইকেলও দিতে পারে না বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন। ফলে অনেকে প্রতিভা ঝরে পড়ে। তবে যারা নিজেদের স্বচ্ছল পরিবার বা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য পায়, তারাই উঠে আসে।’
একটা উদাহরণ দেন সাইদুর, ‘২০২০ বাংলাদেশ গেমসে হোসেন ফয়সাল নামের একটা ছেলে পাঁচটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে প্রতিটিতেই রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিল। সে উঠে এসেছিল এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে। পরে সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে নেয়। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছেলেমেয়ে ন্যাশনালে খেলতে আসে ট্যালেন্ট হান্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।’
এখন সাইদুর যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাদের ফয়সালের মতো অবস্থানে যেতে কেমন সময় লাগবে? ‘ওরা প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করলে ২/৩ বছরের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে সাফল্য পাবে। তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ আসে। মেয়েদের মধ্যে সূবর্ণা ও গীতা রানীর উদাহরণ দিতে পারি।’
সাইক্লিংয়ের আসল সমস্যার কথাও জানান সাইদুর, ‘এই খেলার প্রধান সমস্যা পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। তেমনি সাইকেল ও মাঠের অভাবও আছে। পল্টনের মাঠে এবং মাঝেমধ্যে টার্ফে যেভাবে ওদের অনুশীলন করাচ্ছি, আসলে ইন্টারন্যাশনালি তো এভাবে খেলা হয় না। হয় কংক্রিট উডেনফ্লোরে, ভেলোড্রামে। আমাদের এখানে যা নেই। ফলে আমাদের সাইক্লিস্টরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়।’
তবে এর সমাধানও আছে বলে জানান সাইদুর, ‘আমাদের দেশে অনেক জায়গায় উন্নতমানের রাস্তা আছে। তবে গাড়ির ড্রাইভাররা সচেতন নয়। ফলে এ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়ে বসে। তাই রোডে প্র্যাকটিস করাটা অনেক রিস্কি। হয়তো একদিন এই সমস্যার সমাধান হবে। তখন হয়তো আমরা থাকবো না!’
সবশেষে সাইদুর বলেন, ‘যাদের এবার ট্রেনিং করাচ্ছি, তাদের মধ্যে প্রতিভাবান একাধিক সাইক্লিস্টকে পেয়েছি। তারা যদি আরেক দফা ভালো ট্রেনিং পায়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ওরা সবাই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।’
আরকে/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

এনএসসির অনুর্ধ-১৬ ক্রীড়া প্রতিভা অন্বেষণ

চাকার ঘূর্ণনে গড়া স্বপ্নের মানচিত্র

আপডেট সময় : ১০:০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫

ঐতিহাসিক পল্টন ময়দান। সাধারণত এই মাঠে ফুটবল-ক্রিকেট খেলাই বেশি হয়। মাঝেমধ্যে রাগবি, কাবাডিও হয়। তবে পড়ন্ত বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা গেল ভিন্ন দৃশ্য। একঝাঁক ছেলেমেয়ে অনবরত রেসিং সাইকেল চালিয়ে গোটা মাঠ চক্কর দিচ্ছে। তাদের প্রয়োজনীয় দিক-নিদের্শা দিচ্ছেন এক ব্যক্তি, সহজেই তাকে কোচ বলে বোঝা যায়। সাইক্লিংয়ের দৃশ্যটি কৌতুহলী হয়ে দেখছেন আশেপাশের কিছু মানুষ।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ১০টি খেলার জন্য তৃণমূল পর্যায়ে দশ খেলায় অনুর্ধ-১৬ প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে দশ দিনের জন্য। এই খেলাগুলোর একটি হচ্ছে সাইক্লিং।
পল্টন মাঠে কথা হয় সাইদুর রহমানের সঙ্গে। ১৯৯৫ সাল থেকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে সাইক্লিং কোচ হিসেবে কাজ করছেন। অবসরে গেছেন গত এপ্রিলে। এখন কাজ করছেন এনএসসি কর্তৃক বাছাইকৃত কিছু প্রতিভাবান সাইক্লিস্টদের নিয়ে। সবুজ বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আগেও করেছি। তখন কাজের পদ্ধতি একটু ভিন্ন ছিল। সে সময় জেলায় জেলায় গিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দিতাম। তারপর কোয়ান্টিটি থেকে কোয়ালিটি কিছুটা সংগ্রহ করে সেন্ট্রালি করতাম। তাতে করে পোটেনশিয়ালটা আরও ভাল হতো। আর এখন সব জেলা থেকে একসঙ্গে খেলোয়াড় নিয়ে আসা হচ্ছে সেন্ট্রালে (ঢাকায়)। তারপর সেখান থেকে বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’
ঢাকায় আসার পর সব সাইক্লিস্ট থেকে বাছাইয়ের পর টিকে গেছে ১৬ জন (১১ ছেলে, ৫ মেয়ে)। এরা একেকজন একেক জেলার। তারা ঢাকায় বেসিক প্রশিক্ষণ নিয়ে আবারও জেলা ফিরে যাবে। ‘সেখানে আরও প্রশিক্ষণ পেলে আরও ভালো করবে। তবে এনএসসি যদি কার্যক্রমটা আগের মতো জেলায় করতে পারে, তাহলে বেশি ভালো হবে।’ জানান সাইদুর।
অতীতে যারা ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে বাছাই হয়েছিল, পরবর্তীতে তারা সবাই জাতীয় প্রতিযোগিতায় রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক জিতেছে বলে জানান সাইদুর। তাদের বেশিরভাগকেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চাকরি দিয়েছিল। এছাড়া বিজিবি, আনসার, জেলেও অনেকে চাকরি পেয়েছিল শুধুমাত্র ভাল খেলার সুবাদে।
সাইদুর আরও যোগ করেন, ‘রেসিং সাইকেলের দাম এমনিতেই বেশি (সর্বনিন্ম মূল্য ৭০ হাজার টাকা), তার ওপর খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই আসে দরিদ্র পরিবার থেকে। তাছাড়া বাছাইকৃত সাইক্লিস্টদের সবাইকে পর্যাপ্ত সাইকেলও দিতে পারে না বাংলাদেশ সাইক্লিং ফেডারেশন। ফলে অনেকে প্রতিভা ঝরে পড়ে। তবে যারা নিজেদের স্বচ্ছল পরিবার বা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য পায়, তারাই উঠে আসে।’
একটা উদাহরণ দেন সাইদুর, ‘২০২০ বাংলাদেশ গেমসে হোসেন ফয়সাল নামের একটা ছেলে পাঁচটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে প্রতিটিতেই রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিল। সে উঠে এসেছিল এই ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম থেকে। পরে সেনাবাহিনী তাকে নিয়ে নেয়। ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ছেলেমেয়ে ন্যাশনালে খেলতে আসে ট্যালেন্ট হান্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।’
এখন সাইদুর যাদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, তাদের ফয়সালের মতো অবস্থানে যেতে কেমন সময় লাগবে? ‘ওরা প্র্যাকটিসটা কন্টিনিউ করলে ২/৩ বছরের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে সাফল্য পাবে। তখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সুযোগ আসে। মেয়েদের মধ্যে সূবর্ণা ও গীতা রানীর উদাহরণ দিতে পারি।’
সাইক্লিংয়ের আসল সমস্যার কথাও জানান সাইদুর, ‘এই খেলার প্রধান সমস্যা পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। তেমনি সাইকেল ও মাঠের অভাবও আছে। পল্টনের মাঠে এবং মাঝেমধ্যে টার্ফে যেভাবে ওদের অনুশীলন করাচ্ছি, আসলে ইন্টারন্যাশনালি তো এভাবে খেলা হয় না। হয় কংক্রিট উডেনফ্লোরে, ভেলোড্রামে। আমাদের এখানে যা নেই। ফলে আমাদের সাইক্লিস্টরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়।’
তবে এর সমাধানও আছে বলে জানান সাইদুর, ‘আমাদের দেশে অনেক জায়গায় উন্নতমানের রাস্তা আছে। তবে গাড়ির ড্রাইভাররা সচেতন নয়। ফলে এ্যাক্সিডেন্ট ঘটিয়ে বসে। তাই রোডে প্র্যাকটিস করাটা অনেক রিস্কি। হয়তো একদিন এই সমস্যার সমাধান হবে। তখন হয়তো আমরা থাকবো না!’
সবশেষে সাইদুর বলেন, ‘যাদের এবার ট্রেনিং করাচ্ছি, তাদের মধ্যে প্রতিভাবান একাধিক সাইক্লিস্টকে পেয়েছি। তারা যদি আরেক দফা ভালো ট্রেনিং পায়, তাহলে নিশ্চিতভাবেই ওরা সবাই সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে।’
আরকে/সবা