০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনুশীলন করলেন ঋতুপর্ণারা

ইয়াংগুনে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই অনুশীলন করেছেন ঋতুপর্ণা-সাগরিকারা। ছবি : বাফুফে

এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমার পৌঁছেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। সি-গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ মিয়ানমার, বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান। ফিফা র‌্যাংকিং বিবেচনায় একমাত্র তুর্কমেনিস্তান বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে, বাকিদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহজ হবে না—সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রস্তুত লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

তবে প্রতিপক্ষদের সঙ্গে অতীতের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই বাংলাদেশের। বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে এটিই হতে যাচ্ছে বাংলার বাঘিনীদের প্রথম মুখোমুখি লড়াই। অন্যদিকে মিয়ানমারের বিপক্ষে ২০২০ সালের অলিম্পিক বাছাইপর্বে ইয়াঙ্গুনে ৫-০ গোলের লজ্জাজনক হারের স্মৃতি এখনও তাজা।

এবারের মিশনে আবারো সেই মিয়ানমার গেছে বাংলাদেশ, তবে কিছুটা ভিন্ন দল নিয়ে। অভিজ্ঞ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছাড়াও দলে নেই মাসুরা পারভীন, সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকার ও মাতসুশিমা সুমাইয়া। কিছু পুরনো ও নতুনদের নিয়ে শক্তির ভারসাম্য গড়ে তুলেছেন কোচ পিটার বাটলার।

২৫ জুন মিয়ানমারে পৌঁছেই বৃষ্টির মূখে পড়ে মনিকা-মারিয়ারা। প্রবল বৃষ্টির কারণে মাঠে গিয়ে অনুশীলন সম্ভব হয়নি। তবে হোটেল কক্ষে শুয়ে-বসে দিন পার না করে, জিমে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে নিজেদের ফিট রাখেন তারা। এই পেশাদার মানসিকতা দলের মধ্যকার ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

আজ বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি ছিল। কিন্তু এবার আর বৃষ্টিকে বাধা মনে করেনি বাংলাদেশ। ঠিকই মাঠে নেমে সম্পূর্ণ ঘাম ঝরানো অনুশীলন চালিয়ে গেছে তারা। ম্যাচের আগে নিজেদের যতটা সম্ভব প্রস্তুত করে নিতে চায় পুরো দল।

উল্লেখ্য, কাজী মো. সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে এক সময় আর্থিক সংকটের অজুহাতে নারী দলকে মিয়ানমারে পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফের)। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের সফর শুধু একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা নয়, বরং অনেকটা সম্মান পুনরুদ্ধারের মিশনও।

এখন দেখার পালা—এই নবীন ও নতুন কাঠামোর দল কিভাবে বাছাইপর্বের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে। মাঠে তাদের পারফরম্যান্সই বলে দেবে, নারীদের ফুটবলে বাংলাদেশ কতটা এগিয়ে গেছে। অবশ্য ঢাকা ছাড়ার আগে গণমাধ্যমে কোচ-অধিনায়ক উভয়েই আশাবাদ ব্যক্ত করে গেছেন, তারা মিয়ানামার যাচ্ছেন জয়ের লক্ষ্য নিয়েই।

বৃহস্পতিবার বাফুফের মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রেরিত কে অডিও বার্তায় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, ‘মিয়ানামার আসার পর প্রথম ট্রেনিং সেশন ছিল। সবাই মাঠে খুব মনোযোগ দিয়ে আমরা প্র্যাকটিস করেছি। কোচ আমাদেরকে যেভাবে দেখাচ্ছেন, সেভাবেই করছি। সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজেই অনুশীলন করেছি।’

জাতীয় দলের হয়ে সাত ম্যাচ খেলা দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার আফঈদা আরও বলেন, ‘বৃষ্টিতে প্র্যাকটিস করতে ভালোই লেগেছে। দেশেও বৃষ্টি পেয়েছিলাম। এখানেই তাই। আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে সুবিধাই হচ্ছে। তো, বৃষ্টি বেশ ভালোই লাগছে।’

দলের সহকারী কোচ মাহমুদা আক্তার অনন্যা বলেন, ‘কালকে (২৫ জুন) মায়ানামারে এসে সবাই ভালোভাবেই পৌঁছেছি। গতকাল ট্রেনিং করার কথা ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে ট্রেনিং হয়নি। জিমে গিয়ে আমরা কাজ করেছি। আজকে (বৃহস্পতিবার) প্রথমবারের মতো মাঠে এসে অনুশীলন করেছি। তবে আজকেও প্রচুর বৃষ্টি ছিল। তো, এই বৃষ্টির মধ্যেই আমরা ট্রেনিংয়ের সব এ্যাক্টিভিটিসগুলো মাঠে প্রপারলি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, দলের সবাই সুস্থ আছে, ভালো আছে।’

আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় বসছে ওমেন্স এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব। এতে অংশ নেবে ১২টি দল। এই ১২ দলের মধ্যে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান সরাসরি খেলবে। আর বাকি ৮টি দল আসবে বাছাইপর্ব থেকে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সেই অভিযানেই এবার গেছে মিয়ানমারে। বাছাইপর্বে ৩৪টি দেশকে ৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। ৬টি গ্রুপে ৪টি করে দল এবং ২টি গ্রুপে রয়েছে ৫টি করে দল। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এছাড়া বাছাইপর্বের সেরা দুটি রানার্স আপ দলও চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৯ জুন। প্রতিপক্ষ বাহরাইন। ২ জুলাই বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে মিয়ানমারের। এরপর শেষ ম্যাচে ৫ জুলাই বাংলাদেশ খেলবে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ আগে দুবার এশিয়ান কাপ বাছাই খেলেছে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের নয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ৯-০ গোলে। ইরানের কাছে ২-০ গোলে এবং ফিলিপাইনের কাছে ৪-০ গোলে হারে।

এরপর ২০২১ সালেও বাংলাদেশের ফুটবলে এতটুকু উন্নতি হয়নি। উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় জর্ডান, ইরানের কাছে হারে একই ব্যবধানে ৫-০ গোলে। শুধু হংকংকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল।

আরকে/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

সব রেকর্ড ভেঙে স্বর্ণের দামে নতুন ইতিহাস, ভরি ছাড়াল দুই লাখ ২৭ হাজার

বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনুশীলন করলেন ঋতুপর্ণারা

আপডেট সময় : ০৬:৫৬:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমার পৌঁছেছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। সি-গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ মিয়ানমার, বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান। ফিফা র‌্যাংকিং বিবেচনায় একমাত্র তুর্কমেনিস্তান বাংলাদেশের নিচে অবস্থান করছে, বাকিদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহজ হবে না—সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রস্তুত লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

তবে প্রতিপক্ষদের সঙ্গে অতীতের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই বাংলাদেশের। বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে এটিই হতে যাচ্ছে বাংলার বাঘিনীদের প্রথম মুখোমুখি লড়াই। অন্যদিকে মিয়ানমারের বিপক্ষে ২০২০ সালের অলিম্পিক বাছাইপর্বে ইয়াঙ্গুনে ৫-০ গোলের লজ্জাজনক হারের স্মৃতি এখনও তাজা।

এবারের মিশনে আবারো সেই মিয়ানমার গেছে বাংলাদেশ, তবে কিছুটা ভিন্ন দল নিয়ে। অভিজ্ঞ অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ছাড়াও দলে নেই মাসুরা পারভীন, সানজিদা আক্তার, কৃষ্ণা রানী সরকার ও মাতসুশিমা সুমাইয়া। কিছু পুরনো ও নতুনদের নিয়ে শক্তির ভারসাম্য গড়ে তুলেছেন কোচ পিটার বাটলার।

২৫ জুন মিয়ানমারে পৌঁছেই বৃষ্টির মূখে পড়ে মনিকা-মারিয়ারা। প্রবল বৃষ্টির কারণে মাঠে গিয়ে অনুশীলন সম্ভব হয়নি। তবে হোটেল কক্ষে শুয়ে-বসে দিন পার না করে, জিমে গিয়ে ঘাম ঝরিয়ে নিজেদের ফিট রাখেন তারা। এই পেশাদার মানসিকতা দলের মধ্যকার ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

আজ বৃহস্পতিবারও বৃষ্টি ছিল। কিন্তু এবার আর বৃষ্টিকে বাধা মনে করেনি বাংলাদেশ। ঠিকই মাঠে নেমে সম্পূর্ণ ঘাম ঝরানো অনুশীলন চালিয়ে গেছে তারা। ম্যাচের আগে নিজেদের যতটা সম্ভব প্রস্তুত করে নিতে চায় পুরো দল।

উল্লেখ্য, কাজী মো. সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে এক সময় আর্থিক সংকটের অজুহাতে নারী দলকে মিয়ানমারে পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফের)। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের সফর শুধু একটি ফুটবল প্রতিযোগিতা নয়, বরং অনেকটা সম্মান পুনরুদ্ধারের মিশনও।

এখন দেখার পালা—এই নবীন ও নতুন কাঠামোর দল কিভাবে বাছাইপর্বের কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে। মাঠে তাদের পারফরম্যান্সই বলে দেবে, নারীদের ফুটবলে বাংলাদেশ কতটা এগিয়ে গেছে। অবশ্য ঢাকা ছাড়ার আগে গণমাধ্যমে কোচ-অধিনায়ক উভয়েই আশাবাদ ব্যক্ত করে গেছেন, তারা মিয়ানামার যাচ্ছেন জয়ের লক্ষ্য নিয়েই।

বৃহস্পতিবার বাফুফের মাধ্যমে গণমাধ্যমে প্রেরিত কে অডিও বার্তায় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, ‘মিয়ানামার আসার পর প্রথম ট্রেনিং সেশন ছিল। সবাই মাঠে খুব মনোযোগ দিয়ে আমরা প্র্যাকটিস করেছি। কোচ আমাদেরকে যেভাবে দেখাচ্ছেন, সেভাবেই করছি। সবাই বেশ ফুরফুরে মেজাজেই অনুশীলন করেছি।’

জাতীয় দলের হয়ে সাত ম্যাচ খেলা দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডার আফঈদা আরও বলেন, ‘বৃষ্টিতে প্র্যাকটিস করতে ভালোই লেগেছে। দেশেও বৃষ্টি পেয়েছিলাম। এখানেই তাই। আস্তে আস্তে মানিয়ে নিতে সুবিধাই হচ্ছে। তো, বৃষ্টি বেশ ভালোই লাগছে।’

দলের সহকারী কোচ মাহমুদা আক্তার অনন্যা বলেন, ‘কালকে (২৫ জুন) মায়ানামারে এসে সবাই ভালোভাবেই পৌঁছেছি। গতকাল ট্রেনিং করার কথা ছিল। কিন্তু প্রচণ্ড বৃষ্টির কারণে ট্রেনিং হয়নি। জিমে গিয়ে আমরা কাজ করেছি। আজকে (বৃহস্পতিবার) প্রথমবারের মতো মাঠে এসে অনুশীলন করেছি। তবে আজকেও প্রচুর বৃষ্টি ছিল। তো, এই বৃষ্টির মধ্যেই আমরা ট্রেনিংয়ের সব এ্যাক্টিভিটিসগুলো মাঠে প্রপারলি করেছি। আলহামদুলিল্লাহ, দলের সবাই সুস্থ আছে, ভালো আছে।’

আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় বসছে ওমেন্স এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্ব। এতে অংশ নেবে ১২টি দল। এই ১২ দলের মধ্যে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান সরাসরি খেলবে। আর বাকি ৮টি দল আসবে বাছাইপর্ব থেকে। বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার সেই অভিযানেই এবার গেছে মিয়ানমারে। বাছাইপর্বে ৩৪টি দেশকে ৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। ৬টি গ্রুপে ৪টি করে দল এবং ২টি গ্রুপে রয়েছে ৫টি করে দল। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল সরাসরি চূড়ান্ত পর্বে খেলবে। এছাড়া বাছাইপর্বের সেরা দুটি রানার্স আপ দলও চূড়ান্ত পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।

বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ২৯ জুন। প্রতিপক্ষ বাহরাইন। ২ জুলাই বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে মিয়ানমারের। এরপর শেষ ম্যাচে ৫ জুলাই বাংলাদেশ খেলবে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশ আগে দুবার এশিয়ান কাপ বাছাই খেলেছে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের নয়। এর মধ্যে ২০১৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় থাইল্যান্ডের কাছে হেরেছিল ৯-০ গোলে। ইরানের কাছে ২-০ গোলে এবং ফিলিপাইনের কাছে ৪-০ গোলে হারে।

এরপর ২০২১ সালেও বাংলাদেশের ফুটবলে এতটুকু উন্নতি হয়নি। উজবেকিস্তানে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় জর্ডান, ইরানের কাছে হারে একই ব্যবধানে ৫-০ গোলে। শুধু হংকংকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল।

আরকে/সবা