কলম্বো টেস্টে শ্রীলঙ্কার চেয়ে এখনও ৯৬ রানে পিছিয়ে আছে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। তাদের হাতে রয়েছে মাত্র ৪ উইকেট। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে টিকে আছেন কেবল লিটন দাস। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানোর লড়াইয়ে তার সঙ্গী লেজের দিকের খেলোয়াড়রা। গতকাল তৃতীয় দিনে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস থামে ৪৫৮ রানে। ফলে তারা পায় ২১১ রানের বড় লিড। সেটাই এখন ইনিংস ব্যবধানে জয়ের জন্য পর্যাপ্ত মনে হচ্ছে। কারণ, দিনের খেলা শেষ হওয়ার আগে বাংলাদেশ ১১৫ রান তুলতে হারিয়ে ফেলেছে ৬ উইকেট।
টেস্ট ক্রিকেটে ১৫৫তম ম্যাচ খেলতে নামা বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে ৪৭তম ইনিংস ব্যবধানে হার। আগের ৪৬টির মধ্যে আটটি এসেছে শ্রীলঙ্কার বিপরীতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সমান সংখ্যক ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। সর্বোচ্চ নয়বার তাদেরকে এই তেতো অভিজ্ঞতা দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তানের কাছে ছয়বার ও ভারতের কাছে পাঁচবার ইনিংস ব্যবধানে পরাস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ তিনবার করে ইনিংস ব্যবধানে জিতেছে তাদের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়েও একবার ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশকে। আগের দিনের ২ উইকেটে ২৯০ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় সেশনে অলআউট হওয়ার আগে বাকি ৮ উইকেট খুইয়ে আরও ১৬৮ রান যোগ করে তারা।
বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১৩১ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে তাইজুলের এটি ইনিংসে ১৭তম ৫ উইকেট। ১৯ বার ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে তার উপরে আছেন একমাত্র সাকিব আল হাসান। তবে একটি রেকর্ডে সাকিবকে ছুঁয়ে ফেলেছেন তিনি। এই সংস্করণে দেশের বাইরে সর্বোচ্চ পাঁচবার করে ৫ উইকেট এখন তাদের দুজনের।
১৪৬ রানে অপরাজিত থাকা পাথুম নিশাঙ্কাকে বেশিদূর এগোতে দেননি তাইজুল। ১৫৮ রানে তিনি ক্যাচ দেন এনামুল হক বিজয়ের হাতে। এরপর লঙ্কানদের রান সাড়ে চারশ ছাড়ায় কুসল মেন্ডিসের কল্যাণে। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে রানআউট হওয়ার আগে ৮৪ রান করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ২৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া সফরকারীরা দ্বিতীয় ইনিংসেও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায়। আউট হওয়া ছয় ব্যাটসম্যানের কেউই ত্রিশের ঘরে যেতে পারেননি। লিটন অপরাজিত আছেন ৩৯ বলে ১৩ রানে। তার ইনিংসে নেই কোনো বাউন্ডারি। চা বিরতির আগে বিপর্যয়ের শুরুটা ওপেনার বিজয়কে দিয়ে। চলমান দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নিজের সর্বোচ্চ ১৯ রান করেন তিনি। পেসার আসিতা ফার্নান্দোকে পুল করার চেষ্টায় টাইমিংয়ে গড়বড় করে ধরা পড়েন শর্ট লেগে।
তৃতীয় সেশনে দেখা মেলে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিল। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম হন কট বিহাইন্ড। বাঁহাতি স্পিনার প্রভাত জয়সুরিয়ার ডেলিভারিতে ড্রাইভ করতে গিয়ে তার ইনিংস থামে ১২ রানে। মমিনুল হক টিকতে পারেননি। রান ১৫ রান করে আউট হন তিনি। তাকে স্লিপে ক্যাচ বানানোর পর লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা অফ স্পিনে সাজঘরে পাঠান নাজমুল হোসেন শান্তকে। বাংলাদেশ অধিনায়ক এলবিডব্লিউ হন ১৯ রানে। রিভিউ নিলেও কাজ হয়নি। এর আগে ব্যক্তিগত ১০ রানে বেঁচে গিয়েছিলেন শান্ত। প্রভাতের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গেলে ক্যাচ যায় উইকেটের পেছনে। বদলি উইকেটরক্ষক লাহিরু উদারা বল জমাতে ব্যর্থ হন গ্লাভসে। তবে জীবন পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি শান্ত। থিতু হওয়া মুশফিকুর রহিম আউট হন প্রভাতের দারুণ ডেলিভারিতে। টার্ন করে তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে বল উপড়ে ফেলে অফ স্টাম্প। মুশফিকের সংগ্রত ২৬ রান। দিনের শেষ বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন মেহেদী হাসান মিরাজ। রিভিউ নিয়ে তাকে ফেরান স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকে। গলে সিরিজের প্রথম টেস্ট ড্র হয়েছিল।
অবিশ্বাস্য কিছু না ঘটলে আজ চতুর্থ দিনে কলম্বো টেস্ট জিতে সিরিজ নিজেদের করে নেওয়ার পথে রয়েছে শ্রীলঙ্কা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ইনিংস: ২৪৭ ও ৩৮.৪ ওভারে ১১৫/৬ (সাদমান ১২, এনামুল ১৯, মুমিনুল ১৫, এনামুল ১৯, মুশফিক ২৬, লিটন ১৩*, মিরাজ ১১; আসিথা ৮-১-২২-১, ভিশ্ব ৬-৩-১৬-০, জায়াসুরিয়া ১৪-২-৪৬-২, ধানাঞ্জায়া ৪-১-১৩-২, দিনুশা ৩-১-৭-০, থারিন্ডু ২.৪-০-১০-১
শ্রীলঙ্কা ইনিংস: ১১৬.৫ ওভারে ৪৫৮ (আগের দিন ২৯০/২) (নিসাঙ্কা ১৫৮, জায়াসুরিয়া ১০, ধানাঞ্জায়া ৭, কামিন্দু ৩৩, কুসাল ৮৪, দিনুশা ১১, থারিন্ডু ১০, ভিশ্ব ২*, আসিথা ০; ইবাদত ১৪-০-৫৫-০, তাইজুল ৪২.৫-৪-১৩১-৫, নাহিদ ২০-১-৯৪-১, মিরাজ ২০-১-৭৫-০, নাঈম ১৮-৪-৮৭-৩, মুমিনুল ২-০-৮-০)।
(তৃতীয় দিন শেষে)

























