০৭:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বয়স্কদের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়য়ায় আক্রান্তের প্রবণতা কম

ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু তরুণদের

চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেছে ৪১ জন

তরুণরা যেহেতু ভাইরাসের সব ধরনে এখনো আক্রান্ত হয়ে ওঠেনি, ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে- ড. মাহবুব সিদ্দিকি, অনুপ্রাণ বিশেষজ্ঞ

দেশের তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আবার মৃত্যু বেশি চল্লিশোর্ধ্বদের। দেশের তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আবার মৃত্যু বেশি চল্লিশোর্ধ্বদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মোবিলিটি বেশি থাকার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ছে। অন্যদিকে বয়স্কদের বেশির ভাগের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণে আক্রান্তের প্রবণতা কম।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে দেশে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৪১ জন। গত একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬২ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪০ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আটজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪০ জন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ছয়জন করে ও সিলেটে তিনজন রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ছাড়পত্র পেয়েছে ৮ হাজার ৩৮০ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৮৪ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ১ শতাংশ নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০। বয়স বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এ বয়সীদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ জন। বয়স বিবেচনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যানে তৃতীয় অবস্থানে শিশুরা। শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী আক্রান্তদের সংখ্যা ২ হাজার ৯। এছাড়া ৪৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১ হাজার ২২৭, ৬১ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ৪৩৯, ৭৬ থেকে ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৭২ জন আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনুপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুব সিদ্দিকি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে আসছি ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। একবার এক ধরনে আক্রান্ত হলে ওই ধরনের অ্যান্ডিবডি শরীরে তৈরি হয়ে যায়। যাদের বয়স বেশি তারা কোনো না কোনো সময় তিন বা চারটি ধরনেই আক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের প্রবণতা কম দেখতে পাই। অন্যদিকে তরুণরা যেহেতু ভাইরাসের সব ধরনে এখনো আক্রান্ত হয়ে ওঠেনি, ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আক্রান্ত তরুণরা বেশি হলেও মৃত্যুর দিক থেকে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৪১ জন। এদের মধ্যে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন, ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৩ জন, শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ৬ জন, ৬১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৫ জন এবং ৮০ ও তদূর্ধ্ব দুজন মারা গেছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমরা পরিসংখ্যানে দেখছি তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী মানুষজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এটা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য চিন্তার বিষয়। যাদের মোবিলিটি বেশি তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটার সহজ হিসাব হলো একজন কর্মক্ষম মানুষ কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে অফিসসহ বিভিন্ন এলাকায় যায়। যে কারণে তাদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি। তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া মানে শুধু যে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, কর্মঘণ্টা ও কর্মস্পৃহাও নষ্ট হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে। সে বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।

জনপ্রিয় সংবাদ

বয়স্কদের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়য়ায় আক্রান্তের প্রবণতা কম

ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু তরুণদের

আপডেট সময় : ০৭:০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

তরুণরা যেহেতু ভাইরাসের সব ধরনে এখনো আক্রান্ত হয়ে ওঠেনি, ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে- ড. মাহবুব সিদ্দিকি, অনুপ্রাণ বিশেষজ্ঞ

দেশের তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আবার মৃত্যু বেশি চল্লিশোর্ধ্বদের। দেশের তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের হার বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তদের এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। আবার মৃত্যু বেশি চল্লিশোর্ধ্বদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মোবিলিটি বেশি থাকার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বাড়ছে। অন্যদিকে বয়স্কদের বেশির ভাগের শরীরে ডেঙ্গুর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে যাওয়ার কারণে আক্রান্তের প্রবণতা কম।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত একদিনে দেশে একজন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৪১ জন। গত একদিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৬২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ২৬২ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৪১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪০ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৮ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আটজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৪০ জন, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ছয়জন করে ও সিলেটে তিনজন রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে ছাড়পত্র পেয়েছে ৮ হাজার ৩৮০ জন। আর চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৯ হাজার ৪৮৪ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ দশমিক ৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ দশমিক ১ শতাংশ নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ১৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০। বয়স বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা। এ বয়সীদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৩৬ জন। বয়স বিবেচনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের পরিসংখ্যানে তৃতীয় অবস্থানে শিশুরা। শূন্য থেকে ১৫ বছর বয়সী আক্রান্তদের সংখ্যা ২ হাজার ৯। এছাড়া ৪৬ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১ হাজার ২২৭, ৬১ থেকে ৭৫ বছর বয়সী ৪৩৯, ৭৬ থেকে ৮০ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী ৭২ জন আক্রান্তের তথ্য পাওয়া গেছে। তরুণদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের প্রবণতা বেশি হওয়ার কারণ সম্পর্কে অনুপ্রাণ বিশেষজ্ঞ ড. মাহবুব সিদ্দিকি বলেন, ‘আমরা সব সময় বলে আসছি ডেঙ্গুর চারটি ধরন রয়েছে। একবার এক ধরনে আক্রান্ত হলে ওই ধরনের অ্যান্ডিবডি শরীরে তৈরি হয়ে যায়। যাদের বয়স বেশি তারা কোনো না কোনো সময় তিন বা চারটি ধরনেই আক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে তাদের মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের প্রবণতা কম দেখতে পাই। অন্যদিকে তরুণরা যেহেতু ভাইরাসের সব ধরনে এখনো আক্রান্ত হয়ে ওঠেনি, ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তরুণরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আক্রান্ত তরুণরা বেশি হলেও মৃত্যুর দিক থেকে বেশি মৃত্যু হচ্ছে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ৪১ জন। এদের মধ্যে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন, ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৩ জন, শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ৬ জন, ৬১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৫ জন এবং ৮০ ও তদূর্ধ্ব দুজন মারা গেছেন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, আমরা পরিসংখ্যানে দেখছি তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী মানুষজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। এটা আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য চিন্তার বিষয়। যাদের মোবিলিটি বেশি তারাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটার সহজ হিসাব হলো একজন কর্মক্ষম মানুষ কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে অফিসসহ বিভিন্ন এলাকায় যায়। যে কারণে তাদের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সুযোগ থাকে বেশি। তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া মানে শুধু যে চিকিৎসা ব্যয় বাবদ অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে তা নয়, কর্মঘণ্টা ও কর্মস্পৃহাও নষ্ট হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুবরণ করেছে। সে বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়।