০৪:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আফঈদাদের নিয়ে গর্বিত পিটার বাটলার

দুর্দান্ত এক জয়ের পর লাল সবুজের পতাকা হাতে বাংলাদেশ দলের ফুটবলার, কোচ ও কর্মকর্তারা। কাল ইয়াঙ্গুনে বেশ কিছু দর্শক এসেছিলেন বাংলাদেশের উৎসাহ দিতে। দিন শেষ এই দর্শকেরাও হাসিমুখে মাঠ ছেড়েছে। ছবি: বাফুফে

ফিফা র‌্যাঙ্কিং তাহলে নিছকই সংখ্যা। তা না হলে ৩৬ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ এভাবে ৭-০ গোলে হারিয়ে দেবে বাহরাইনকে। যেখানে বাহরাইনের র‌্যাঙ্কিং ৯২। বাংলাদেশের ১২৮। অথচ এমন শক্তিশালী দলকে বাংলাদেশ রীতিমতো বিধ্বস্ত করেছে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় দুই দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের নারী দলের স্বপ্ন ছিল এশিয়ান পর্যায়ের দেশগুলোর মুখোমুখি হওয়া। বাংলাদেশ আদৌ এশিয়ার দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে কিনা সেই পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন আফঈদা খন্দকাররা। সেই সুযোগটা পেয়ে তাই জ্বলে উঠল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

দিনের অন্য ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক মিয়ানমার। আগামী ২ জুলাই এই মিয়ানমারের সঙ্গেই খেলবে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত পর্বে ওঠার জন্য যে ম্যাচটিকে অলিখিত ফাইনালই বলা যায়।

বাংলাদেশ এবারের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলছে ‘সি’ গ্রুপে। এই গ্রুপের তিন দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১২৮তম) পেছনে কেবল তুর্কমেনিস্তান (১৪১তম)। বাহরাইনের (৯২তম) চেয়েও এগিয়ে স্বাগতিক মিয়ানমার (৫৫তম)। বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকেট। বাংলাদেশের জন্য তাই পথটা মসৃণ নয় মোটেও। তবে এই জয় নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ায় চূড়ান্ত পর্বে খেলার আত্মবিশ্বাস যোগাবে বাংলাদেশের।
মূলত এশিয়ান দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বাংলাদেশের লড়াইয়ের শুরুটা মে মাসে। ওই সময় জর্ডানে গিয়ে বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে খেলে ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের সঙ্গে। যেখানে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র। আর জর্ডানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ড্র করে। শক্তিশালী এই দুই দলের সঙ্গে ড্রয়ের আত্মবিশ্বাস যে এই ম্যাচে দারুণ ভাবে কাজে দিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

এর আগে বাংলাদেশ দুবার এশিয়ান কাপের বাছাই খেলেছে। ২০১৩ সালে ঢাকায় সব ম্যাচে হার। এরপর ২০২২ সালে বাংলাদেশ উজবেকিস্তানেও একইভাবে হেরেছিল। কিন্তু এবার বাংলাদেশ জয় দিয়ে শুরু করেছে। তুলনামূলক দুর্বল তুর্কমেনিস্তানকে হারাবে এটা ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের আসল লড়াই হবে মিয়ানমারের সঙ্গে। এই ম্যাচে যদি বাংলাদেশ জিতে যায় তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় আগামী বছর চূড়ান্ত পর্বে।

বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার শুরুটা কিন্তু অনেক আগে থেকেই। যদিও এই বাংলাদেশ দলে নেই অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুন, সানজিদা খাতুন, মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণা রানী সরকার। কিন্তু তাদের ছাড়াই পিটার বাটলারের অধীনে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দল এখন চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারেন। ম্যাচের পর সেই কথাগুলোই বলেছেন তহুরা খাতুন, “আমাদের দলের সবাই শতভাগ দিয়ে খেলেছে। আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক রকম খেলেছি। আল্লাহর রহমতে জিতেছি।”

ইয়াঙ্গুনের মাঠে কিছু দর্শক বাংলাদেশের ফুটবলারদের উৎসাহ যুগিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, “ যেখানে যাই সেখানেই আমরা এমন দর্শক পাই। উনাদের সমর্থন আমাদের মানসিকভাবে শক্ত করে।”

দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, “প্রথম ম্যাচ জেতার লক্ষ্য ছিল। সেটা করেছি। গোল ব্যবধান বাড়ানোর চিন্তা ছিল সেটাও করেছি। এখন আমাদের পরের ম্যাচে নজর। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কোচ যেভাবে বলবে সেভাবে খেলে জিততে চাই।”

কোচ পিটার বাটলার স্বাভাবিকভাবেই খুশি এই জয়ে। ম্যাচের পর তিনি বলেন, “আমরা পরিকল্পনা মতো খেলেছি। ভালো প্রস্তুতি ছিল। কঠোর অনুশীলন করেছি। আমাদের পাইপলাইন ভালো ছিল। যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেভাবে মেয়েরা খেলেছে এবং সে কারণে জয় পেয়েছি। বাহরাইন সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে খেলে এখানে এসেছিল। এদের সঙ্গে খেলাটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা জিততে পেরে খুশি।”

এবার মিয়ানমারের সঙ্গেও জিততে চান বৃটিশ কোচ, “এখানে দর্শকদের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকবে মিয়ানমারের সঙ্গে খেলা। কিন্তু আমরা চাই এই ম্যাচেও জয় পেতে। ”

বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের চেয়ে নারী ফুটবল সব সময়ই ভালো খেলে। আগেও এই কথা বলেছেন কোচ। আবারও বললেন, “এখন মনে হচ্ছে সত্যি পুরুষ ফুটবলের চেয়ে আরেকটু উপরে উঠল মেয়েদের ফুটবল। দর্শকদের ক্রেজ সবাই দেখেছে পুরুষদের নিয়ে। কিন্তু মেয়েরাও যে দুর্দান্ত খেলে সেটা ওরা আবারও প্রমাণ করেছে। ওদের নিয়ে আমি সত্যি গর্বিত।”

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে সামান্তা শারমিনের নতুন বার্তা

আফঈদাদের নিয়ে গর্বিত পিটার বাটলার

আপডেট সময় : ০১:০৩:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫

ফিফা র‌্যাঙ্কিং তাহলে নিছকই সংখ্যা। তা না হলে ৩৬ ধাপ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ এভাবে ৭-০ গোলে হারিয়ে দেবে বাহরাইনকে। যেখানে বাহরাইনের র‌্যাঙ্কিং ৯২। বাংলাদেশের ১২৮। অথচ এমন শক্তিশালী দলকে বাংলাদেশ রীতিমতো বিধ্বস্ত করেছে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে।
দক্ষিণ এশিয়ায় দুই দুবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাংলাদেশের নারী দলের স্বপ্ন ছিল এশিয়ান পর্যায়ের দেশগুলোর মুখোমুখি হওয়া। বাংলাদেশ আদৌ এশিয়ার দলগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে কিনা সেই পরীক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন আফঈদা খন্দকাররা। সেই সুযোগটা পেয়ে তাই জ্বলে উঠল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল।

দিনের অন্য ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে ৮-০ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিক মিয়ানমার। আগামী ২ জুলাই এই মিয়ানমারের সঙ্গেই খেলবে বাংলাদেশ। চূড়ান্ত পর্বে ওঠার জন্য যে ম্যাচটিকে অলিখিত ফাইনালই বলা যায়।

বাংলাদেশ এবারের এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে খেলছে ‘সি’ গ্রুপে। এই গ্রুপের তিন দলের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের (১২৮তম) পেছনে কেবল তুর্কমেনিস্তান (১৪১তম)। বাহরাইনের (৯২তম) চেয়েও এগিয়ে স্বাগতিক মিয়ানমার (৫৫তম)। বাছাইয়ের আট গ্রুপের সেরা আট দল পাবে মূল পর্বে খেলার টিকেট। বাংলাদেশের জন্য তাই পথটা মসৃণ নয় মোটেও। তবে এই জয় নিশ্চিত অস্ট্রেলিয়ায় চূড়ান্ত পর্বে খেলার আত্মবিশ্বাস যোগাবে বাংলাদেশের।
মূলত এশিয়ান দলগুলোর সঙ্গে চোখে চোখ রেখে বাংলাদেশের লড়াইয়ের শুরুটা মে মাসে। ওই সময় জর্ডানে গিয়ে বাংলাদেশ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে খেলে ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের সঙ্গে। যেখানে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে করে গোলশূন্য ড্র। আর জর্ডানের সঙ্গে পিছিয়ে পড়েও ২-২ গোলে ড্র করে। শক্তিশালী এই দুই দলের সঙ্গে ড্রয়ের আত্মবিশ্বাস যে এই ম্যাচে দারুণ ভাবে কাজে দিয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

এর আগে বাংলাদেশ দুবার এশিয়ান কাপের বাছাই খেলেছে। ২০১৩ সালে ঢাকায় সব ম্যাচে হার। এরপর ২০২২ সালে বাংলাদেশ উজবেকিস্তানেও একইভাবে হেরেছিল। কিন্তু এবার বাংলাদেশ জয় দিয়ে শুরু করেছে। তুলনামূলক দুর্বল তুর্কমেনিস্তানকে হারাবে এটা ধরে নেওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশের আসল লড়াই হবে মিয়ানমারের সঙ্গে। এই ম্যাচে যদি বাংলাদেশ জিতে যায় তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ায় আগামী বছর চূড়ান্ত পর্বে।

বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার শুরুটা কিন্তু অনেক আগে থেকেই। যদিও এই বাংলাদেশ দলে নেই অভিজ্ঞ সাবিনা খাতুন, সানজিদা খাতুন, মাসুরা পারভীন, কৃষ্ণা রানী সরকার। কিন্তু তাদের ছাড়াই পিটার বাটলারের অধীনে দুর্দান্ত খেলেছে বাংলাদেশ।

বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দল এখন চূড়ান্ত পর্বে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেই পারেন। ম্যাচের পর সেই কথাগুলোই বলেছেন তহুরা খাতুন, “আমাদের দলের সবাই শতভাগ দিয়ে খেলেছে। আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক রকম খেলেছি। আল্লাহর রহমতে জিতেছি।”

ইয়াঙ্গুনের মাঠে কিছু দর্শক বাংলাদেশের ফুটবলারদের উৎসাহ যুগিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি বলেন, “ যেখানে যাই সেখানেই আমরা এমন দর্শক পাই। উনাদের সমর্থন আমাদের মানসিকভাবে শক্ত করে।”

দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, “প্রথম ম্যাচ জেতার লক্ষ্য ছিল। সেটা করেছি। গোল ব্যবধান বাড়ানোর চিন্তা ছিল সেটাও করেছি। এখন আমাদের পরের ম্যাচে নজর। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গেও কোচ যেভাবে বলবে সেভাবে খেলে জিততে চাই।”

কোচ পিটার বাটলার স্বাভাবিকভাবেই খুশি এই জয়ে। ম্যাচের পর তিনি বলেন, “আমরা পরিকল্পনা মতো খেলেছি। ভালো প্রস্তুতি ছিল। কঠোর অনুশীলন করেছি। আমাদের পাইপলাইন ভালো ছিল। যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে সেভাবে মেয়েরা খেলেছে এবং সে কারণে জয় পেয়েছি। বাহরাইন সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে খেলে এখানে এসেছিল। এদের সঙ্গে খেলাটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা জিততে পেরে খুশি।”

এবার মিয়ানমারের সঙ্গেও জিততে চান বৃটিশ কোচ, “এখানে দর্শকদের সামনে চ্যালেঞ্জ থাকবে মিয়ানমারের সঙ্গে খেলা। কিন্তু আমরা চাই এই ম্যাচেও জয় পেতে। ”

বাংলাদেশের পুরুষ ফুটবলের চেয়ে নারী ফুটবল সব সময়ই ভালো খেলে। আগেও এই কথা বলেছেন কোচ। আবারও বললেন, “এখন মনে হচ্ছে সত্যি পুরুষ ফুটবলের চেয়ে আরেকটু উপরে উঠল মেয়েদের ফুটবল। দর্শকদের ক্রেজ সবাই দেখেছে পুরুষদের নিয়ে। কিন্তু মেয়েরাও যে দুর্দান্ত খেলে সেটা ওরা আবারও প্রমাণ করেছে। ওদের নিয়ে আমি সত্যি গর্বিত।”