০২:১৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইভিএমে ৩১৭২ কোটি টাকা ‘গচ্চা’

অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনায় ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগে যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক সে বিষয়ে বক্তব্য নিতে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দায়িত্বে থাকা ছয় কর্মকর্তাকে তলব করেছে সংস্থাটি। আগামী বুধবার তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। গত রোববার দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২৬ জুন নির্বাচন কমিশন-ইসি সচিবকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের তলব করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান মো. রাকিবুল হায়াত। দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে তারা হলেন- ইসি সচিবালয়ের উপপ্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী, সহকারী প্রধান মো. মাহফুজুল হক, আইডিয়া প্রকল্পের আইটি সিস্টেম কনসালটেন্ট এএইচএম আব্দুর রহিম খান, উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ হোসেন, সিস্টেম অ্যানালিস্ট ফারজানা আখতার, তৎকালীন সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং তার সহযোগীরা ‘সমীক্ষা ছাড়াই’ প্রকল্প গ্রহণ করে। দরপত্র ছাড়া এবং বাজার মূল্যের চেয়ে ১০ গুণ বেশি দামে দেড় লাখ ‘নিম্নমানের’ ইভিএম কেনায় রাষ্ট্রের প্রায় ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকার আর্থিক ‘ক্ষতি’ হয়েছে।
তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনে। এর মধ্য এক লাখ ৫০০টি ব্যবহারের ‘অনুপযোগী’ বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৬১৮টি ইভিএম রয়েছে ইসিতে। প্রায় ৮৬ হাজার রয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ)। ১০ আঞ্চলিক কার্যালয়ে রয়েছে প্রায় ৬২ হাজার ইভিএম। জানুয়ারিতে দুদকের এক অভিযানে ১ হাজার ৫৯৯টি ইভিএমের কোনো হদিস না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ইভিএমগুলো ‘অযত্ন-অবহেলায়’ পড়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টির মধ্যে দৈব চয়নের ভিত্তিতে কয়েকটি ইভিএমের ‘কার্যক্ষমতা’ যাচাই করে ত্রুটি দেখা গেছে, যা নিম্নমানের ইভিএম কেনার ইঙ্গিত দেয়। দুদক টিমের সঙ্গে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও ইভিএমগুলো মানসম্মত নয় বলে মত দেন।
এক যুগ আগে বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহারের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। আওয়ামী লীগ সরকার ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও তার ঘোর বিরোধী ছিল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য ছিল, যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির সুযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই বছরের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদসহ একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নেয় ইসি। ইভিএমের কার্যক্রম দেখে ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫ মে মতবিনিময়ের পর ভোটে যন্ত্রগুলো ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জাফর ইকবাল ও কায়কোবাদ। সেই কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা করে। তবে দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাবে সরকার সায় না দেওয়ায় ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে যন্ত্র তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তী সময়ে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূল্যের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত দিয়ে উন্নতমানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে মেশিনপ্রতি ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায় দেড় লাখের মতো ইভিএম ক্রয় করে। কিন্তু পাঁচ বছর পার না হতেই ৯০ ভাগ ইভিএম অকেজো হয়ে পড়ে। ইভিএমকেন্দ্রিক লুটপাট থেকে পিছিয়ে থাকতে চায়নি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পদত্যাগ করা কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনও। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শুরুতে দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নেয় তারা। সেজন্য নির্বাচন সামনে রেখে অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য তারা ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দেয় সরকারের কাছে। তবে ওই সময় চরম অর্থনৈতিক সংকট থাকায় সরকার সেটি নাকচ করে দিতে বাধ্য হয়। তবে বড় প্রকল্প বাতিল হয়ে গেলেও বসে থাকেনি কমিশন। ফলে হাতে থাকা পুরোনো ইভিএমগুলো সচল রাখতে আবারো ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেয় আউয়াল কমিশন। ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরও ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে চরম হতাশ হয় সংস্থাটি। আর ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করে সব আসনেই ব্যালটে ভোট নেয়া হয়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ইভিএমগুলো বর্তমানে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

সানজিদা তন্বীর বিয়ের খবর জানালেন ফেসবুকে নিজের হৃদয়গ্রাহী পোস্টে

ইভিএমে ৩১৭২ কোটি টাকা ‘গচ্চা’

আপডেট সময় : ০৭:৩০:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনায় ‘দুর্নীতি ও অনিয়মের’ অভিযোগে যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক সে বিষয়ে বক্তব্য নিতে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দায়িত্বে থাকা ছয় কর্মকর্তাকে তলব করেছে সংস্থাটি। আগামী বুধবার তাদের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। গত রোববার দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম এ তথ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২৬ জুন নির্বাচন কমিশন-ইসি সচিবকে চিঠি পাঠিয়ে তাদের তলব করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান মো. রাকিবুল হায়াত। দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, যাদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে তারা হলেন- ইসি সচিবালয়ের উপপ্রধান মো. সাইফুল হক চৌধুরী, সহকারী প্রধান মো. মাহফুজুল হক, আইডিয়া প্রকল্পের আইটি সিস্টেম কনসালটেন্ট এএইচএম আব্দুর রহিম খান, উপসচিব (চলতি দায়িত্ব) ফরহাদ হোসেন, সিস্টেম অ্যানালিস্ট ফারজানা আখতার, তৎকালীন সিনিয়র মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন। দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এবং তার সহযোগীরা ‘সমীক্ষা ছাড়াই’ প্রকল্প গ্রহণ করে। দরপত্র ছাড়া এবং বাজার মূল্যের চেয়ে ১০ গুণ বেশি দামে দেড় লাখ ‘নিম্নমানের’ ইভিএম কেনায় রাষ্ট্রের প্রায় ৩ হাজার ১৭২ কোটি টাকার আর্থিক ‘ক্ষতি’ হয়েছে।
তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ২০১৮ সালে এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম কেনে। এর মধ্য এক লাখ ৫০০টি ব্যবহারের ‘অনুপযোগী’ বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ৬১৮টি ইভিএম রয়েছে ইসিতে। প্রায় ৮৬ হাজার রয়েছে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ)। ১০ আঞ্চলিক কার্যালয়ে রয়েছে প্রায় ৬২ হাজার ইভিএম। জানুয়ারিতে দুদকের এক অভিযানে ১ হাজার ৫৯৯টি ইভিএমের কোনো হদিস না পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ইভিএমগুলো ‘অযত্ন-অবহেলায়’ পড়ে রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে থাকা ৬১৮টির মধ্যে দৈব চয়নের ভিত্তিতে কয়েকটি ইভিএমের ‘কার্যক্ষমতা’ যাচাই করে ত্রুটি দেখা গেছে, যা নিম্নমানের ইভিএম কেনার ইঙ্গিত দেয়। দুদক টিমের সঙ্গে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরাও ইভিএমগুলো মানসম্মত নয় বলে মত দেন।
এক যুগ আগে বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহারের শুরু থেকেই রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। আওয়ামী লীগ সরকার ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও তার ঘোর বিরোধী ছিল বিএনপি। দলটির নেতাদের ভাষ্য ছিল, যন্ত্রের মাধ্যমে ভোটগ্রহণে ব্যাপক কারচুপির সুযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিভিন্ন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হলেও ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। ওই বছরের মে মাসে অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এ কায়কোবাদসহ একদল প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞকে ইভিএম দেখিয়ে ভোটগ্রহণে তা ব্যবহারের সম্মতি নেয় ইসি। ইভিএমের কার্যক্রম দেখে ইসির সঙ্গে ২০২২ সালের ২৫ মে মতবিনিময়ের পর ভোটে যন্ত্রগুলো ব্যবহারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন জাফর ইকবাল ও কায়কোবাদ। সেই কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অন্তত দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা করে। তবে দুই লাখ নতুন ইভিএম কেনার প্রস্তাবে সরকার সায় না দেওয়ায় ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।
ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দেশের ভোট ব্যবস্থায় ইভিএমের ব্যবহার শুরু করে। সে সময় তারা বুয়েট থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে যন্ত্র তৈরি করে নেয়। ওই কমিশনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশনও ভোট যন্ত্রটি ব্যবহার করে। তবে ২০১৫ সালে রাজশাহী সিটি নির্বাচনে একটি মেশিন অচল হয়ে পড়ায় তা আর ব্যবহার উপযোগী করতে পারেনি রকিব কমিশন। পরবর্তী সময়ে তারা বুয়েটের তৈরি স্বল্প মূল্যের ওই মেশিনগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত দিয়ে উন্নতমানের ইভিএম তৈরির পরিকল্পনা রেখে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে কেএম নূরুল হুদার কমিশন এসে বুয়েটের তৈরি ইভিএমের চেয়ে প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে মেশিন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কাছ থেকে মেশিনপ্রতি ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায় দেড় লাখের মতো ইভিএম ক্রয় করে। কিন্তু পাঁচ বছর পার না হতেই ৯০ ভাগ ইভিএম অকেজো হয়ে পড়ে। ইভিএমকেন্দ্রিক লুটপাট থেকে পিছিয়ে থাকতে চায়নি ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পদত্যাগ করা কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনও। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে শুরুতে দেড়শ আসনে ইভিএমে ভোট করার পরিকল্পনা নেয় তারা। সেজন্য নির্বাচন সামনে রেখে অকেজো মেশিন মেরামত, সংরক্ষণ প্রভৃতির জন্য তারা ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব দেয় সরকারের কাছে। তবে ওই সময় চরম অর্থনৈতিক সংকট থাকায় সরকার সেটি নাকচ করে দিতে বাধ্য হয়। তবে বড় প্রকল্প বাতিল হয়ে গেলেও বসে থাকেনি কমিশন। ফলে হাতে থাকা পুরোনো ইভিএমগুলো সচল রাখতে আবারো ১ হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার চাহিদাপত্র দেয় আউয়াল কমিশন। ইভিএম মেরামতের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি চালাচালি এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের পরও ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে চরম হতাশ হয় সংস্থাটি। আর ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে কোনো আসনেই ইভিএমে ভোট গ্রহণ না করে সব আসনেই ব্যালটে ভোট নেয়া হয়। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকা ইভিএমগুলো বর্তমানে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।