০৭:২০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উইম্বলডনের মঞ্চে আমেরিকার মডেল

উইম্বলডনের সবুজ কোর্টে যখন তারকারা আলো ছড়াতে প্রস্তুত, ঠিক তখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন এক অনন্য নাম কারসন ব্র্যানস্টিন। ২৪ বছর বয়সী এই কানাডিয়ান টেনিস খেলোয়াড়ের গল্প ঠিক সাধারণ নয়। একদিকে কোর্টে র‌্যাকেট হাতে প্রতিপক্ষকে হারানোর লড়াই, অন্যদিকে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করছেন ফ্যাশন দুনিয়াতেও।

বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৯৭ নম্বরে থাকা ব্র্যানস্টিন মূল ড্রতে জায়গা করে নিয়েছেন যোগ্যতা অর্জন পর্ব পেরিয়ে। কিন্তু তার খেলোয়াড়ি অর্জনের চেয়ে তার মডেলিং পরিচয়ই যেন তাকে নিয়ে এসেছে শিরোনামে।

ক্লে টেনিস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্র্যানস্টিন বলেন, ‘আমি এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম টেনিস নয়, আমার শারীরিক গড়নের জন্য।’ তবে কোর্ট আর ক্যামেরার পেছনের দুনিয়ায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন মিলও। ‘দুই জগতেই মানুষ আপনাকে একটা অবজেক্ট হিসেবে দেখে। ভুলে যায় আপনি একজন মানুষ।’ এবারের উইম্বলডনে তার প্রথম প্রতিপক্ষই বিশ্বসেরা আরিনা সাবালেঙ্কা। অভিষেকেই এমন প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যেন রূপকথার মতোই, তবে আত্মবিশ্বাসে ভাটা নেই ব্র্যানস্টিনের কণ্ঠে,‘আমি আত্মবিশ্বাসী। যেকোনো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলতে পারি।’

ব্র্যানস্টিনের উইম্বলডনের পথটা সহজ ছিল না। বাছাইপর্বে হারিয়েছেন রোলাঁ গারোঁর সেমিফাইনালিস্ট লোইস বোয়েসোঁ-কে, এবং সবচেয়ে বড় জয় এসেছে বিয়ানকা আন্দ্রেস্কুর বিপক্ষে-২০১৯ ইউএস ওপেন জয়ী যিনি তার ছোটবেলার ডাবলস সঙ্গী ছিলেন।

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দু’জনে মিলে ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, সেই ম্যাচেই হারিয়েছিলেন বর্তমান তারকা ইগা সোয়ানতেককে। ব্র্যানস্টিনের ক্যারিয়ার মূলত গঠিত হয়েছে বারবার থেমে যাওয়ার গল্পে। চোটের কারণে দীর্ঘ সময় কোর্টের বাইরে ছিলেন। নিজেই বলেন, ‘পুরো মৌসুম শেষবার খেলেছিলাম ১৫ বছর বয়সে!’ এরপর থেকেই নিজের শরীর সম্পর্কে নিজেই সচেতন হয়ে গড়েছেন নতুন প্রস্তুতি। ‘আমি এখন আমার শরীর বুঝি, দ্রুতগামী, শক্তিশালী আর উচ্চতা অনুযায়ী চটপটে।’

কোর্টে তিনি আক্রমণাত্মক। শক্তিশালী সার্ভ ও আগ্রাসী খেলার ধরন তাকে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর করে তোলে। তবে তিনি বলেন, ‘ম্যাগাজিন কাভার নয়, আমি প্রমাণ করতে চাই আমার খেলা প্রতিযোগিতার উপযুক্ত।’

পার্থিব লড়াইয়ের গল্পে মডেল আর অ্যাথলেটের দ্বৈত পরিচয় নিয়ে এগিয়ে চলা কারসন ব্র্যানস্টিনের সামনে উইম্বলডনের এই অধ্যায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। সাবালেঙ্কার বিপক্ষে এই ম্যাচ শুধু তার ক্যারিয়ারের নয়, হয়তো টেনিস ইতিহাসেরও এক অনন্য গল্প হয়ে থাকবে। পেছনে ফ্যাশন দুনিয়ার ঝলমলে র‌্যাম্প, সামনে টেনিসের ক্লাসিক কোর্ট এই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এখন ব্র্যানস্টিন। র‌্যাকেট আর ক্যামেরা—দুয়ের লড়াইয়ে এবার কোর্টে কে জেতে, সেটাই দেখার পালা।

জনপ্রিয় সংবাদ

২০২৬ শিক্ষাবর্ষে স্কুলের ছুটিতে বড় পরিবর্তন, কমলো ১২ দিন

উইম্বলডনের মঞ্চে আমেরিকার মডেল

আপডেট সময় : ০১:০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

উইম্বলডনের সবুজ কোর্টে যখন তারকারা আলো ছড়াতে প্রস্তুত, ঠিক তখনই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন এক অনন্য নাম কারসন ব্র্যানস্টিন। ২৪ বছর বয়সী এই কানাডিয়ান টেনিস খেলোয়াড়ের গল্প ঠিক সাধারণ নয়। একদিকে কোর্টে র‌্যাকেট হাতে প্রতিপক্ষকে হারানোর লড়াই, অন্যদিকে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করছেন ফ্যাশন দুনিয়াতেও।

বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৯৭ নম্বরে থাকা ব্র্যানস্টিন মূল ড্রতে জায়গা করে নিয়েছেন যোগ্যতা অর্জন পর্ব পেরিয়ে। কিন্তু তার খেলোয়াড়ি অর্জনের চেয়ে তার মডেলিং পরিচয়ই যেন তাকে নিয়ে এসেছে শিরোনামে।

ক্লে টেনিস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্র্যানস্টিন বলেন, ‘আমি এজেন্সির সঙ্গে চুক্তি করেছিলাম টেনিস নয়, আমার শারীরিক গড়নের জন্য।’ তবে কোর্ট আর ক্যামেরার পেছনের দুনিয়ায় তিনি খুঁজে পেয়েছেন মিলও। ‘দুই জগতেই মানুষ আপনাকে একটা অবজেক্ট হিসেবে দেখে। ভুলে যায় আপনি একজন মানুষ।’ এবারের উইম্বলডনে তার প্রথম প্রতিপক্ষই বিশ্বসেরা আরিনা সাবালেঙ্কা। অভিষেকেই এমন প্রতিদ্বন্দ্বী পাওয়া যেন রূপকথার মতোই, তবে আত্মবিশ্বাসে ভাটা নেই ব্র্যানস্টিনের কণ্ঠে,‘আমি আত্মবিশ্বাসী। যেকোনো খেলোয়াড়ের বিপক্ষে খেলতে পারি।’

ব্র্যানস্টিনের উইম্বলডনের পথটা সহজ ছিল না। বাছাইপর্বে হারিয়েছেন রোলাঁ গারোঁর সেমিফাইনালিস্ট লোইস বোয়েসোঁ-কে, এবং সবচেয়ে বড় জয় এসেছে বিয়ানকা আন্দ্রেস্কুর বিপক্ষে-২০১৯ ইউএস ওপেন জয়ী যিনি তার ছোটবেলার ডাবলস সঙ্গী ছিলেন।

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে দু’জনে মিলে ডাবলস চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, সেই ম্যাচেই হারিয়েছিলেন বর্তমান তারকা ইগা সোয়ানতেককে। ব্র্যানস্টিনের ক্যারিয়ার মূলত গঠিত হয়েছে বারবার থেমে যাওয়ার গল্পে। চোটের কারণে দীর্ঘ সময় কোর্টের বাইরে ছিলেন। নিজেই বলেন, ‘পুরো মৌসুম শেষবার খেলেছিলাম ১৫ বছর বয়সে!’ এরপর থেকেই নিজের শরীর সম্পর্কে নিজেই সচেতন হয়ে গড়েছেন নতুন প্রস্তুতি। ‘আমি এখন আমার শরীর বুঝি, দ্রুতগামী, শক্তিশালী আর উচ্চতা অনুযায়ী চটপটে।’

কোর্টে তিনি আক্রমণাত্মক। শক্তিশালী সার্ভ ও আগ্রাসী খেলার ধরন তাকে প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ঙ্কর করে তোলে। তবে তিনি বলেন, ‘ম্যাগাজিন কাভার নয়, আমি প্রমাণ করতে চাই আমার খেলা প্রতিযোগিতার উপযুক্ত।’

পার্থিব লড়াইয়ের গল্পে মডেল আর অ্যাথলেটের দ্বৈত পরিচয় নিয়ে এগিয়ে চলা কারসন ব্র্যানস্টিনের সামনে উইম্বলডনের এই অধ্যায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। সাবালেঙ্কার বিপক্ষে এই ম্যাচ শুধু তার ক্যারিয়ারের নয়, হয়তো টেনিস ইতিহাসেরও এক অনন্য গল্প হয়ে থাকবে। পেছনে ফ্যাশন দুনিয়ার ঝলমলে র‌্যাম্প, সামনে টেনিসের ক্লাসিক কোর্ট এই দুইয়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে এখন ব্র্যানস্টিন। র‌্যাকেট আর ক্যামেরা—দুয়ের লড়াইয়ে এবার কোর্টে কে জেতে, সেটাই দেখার পালা।