১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সতীর্থদের দল ছাড়ার হুমকি লাউতারোর

আল হিলালের বিপক্ষে হেরে গার্দিওলার আক্ষেপ

ম্যানচেস্টার সিটি ৩ : ৪ আল হিলাল, ইন্টার মিলান ০ : ২ ফ্লুমিনেন্স

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটিকে হারানোর পর আল হিলাল ক্লাবের বাধভাঙা উদযাপন।

বল নিয়ন্ত্রণে রাখা, গোলে ও লক্ষ্যে শট- সবকিছুতে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু সেই তুলনায় গোলমুখে যথেষ্ট কার্যকর হতে পারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। আল হিলালের বিপক্ষে বিস্ময়কর হারে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর ইংলিশ দলটির কোচ পেপ গার্দিওলার একটাই আফসোস- প্রথমার্ধে সুযোগগুলো যদি কাজে লাগানো যেত!

ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ সময় সকালে শেষ ষোলোর রোমাঞ্চে ঠাসা ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো লড়াইয়ে সিটিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে বড় চমক দেখায় সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ভালো করে আগের সংস্করণে ক্লাব বিশ্বকাপের ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়ন সিটি। নবম মিনিটে বের্নার্দো সিলভার গোলে এগিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতা ফেরান মার্কোস লেওনার্দো। একটু পর ম্যালকমের গোলে এগিয়েও যায় আল হিলাল। তিন মিনিট পরই অবশ্য সিটিকে সমতায় ফেরান আর্লিং হালান্ড। ৯০ মিনিটে আর গোল হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো লড়াইয়ে ৯৪ মিনিটে আল হিলাল আবার এগিয়ে যায় কালিদু কুলিবালির গোলে। ১০৪ মিনিটে স্কোরলাইন ৩-৩ করেন ফিল ফোডেন। কিন্তু ১১২ মিনিটে লেওনার্দোর দ্বিতীয় গোলে অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আল হিলাল।

গোটা ম্যাচে ৬৯ শতাংশ সময় বল নিজেদের কাছে রেখে গোলের জন্য ৩০টি শট নিয়ে ১৪টি লক্ষ্যে রাখতে পারে সিটি, কিন্তু কাজে লাগাতে পারে স্রেফ ৩টি। আল হিলাল ১৭টি শট নিয়ে ৬টি লক্ষ্যে রাখতে পারে, তাতেই বাজিমাত করে সিমোনে ইনজাগির দল। ম্যাচজুড়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সে বারবার সিটিকে হতাশ করেন আল হিলালের গোলকিপার ইয়াসিন বোনু। ম্যাচ শেষে গার্দিওলা অকপটে স্বীকার করে নিলেন, যথেষ্ট কার্যকর হতে পারেনি তাদের আক্রমণভাগ। ‘দিন শেষে আমাদের গোল করতে হবে ও কার্যকর হতে হবে। ওরা প্রথমার্ধে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, আমরা করেছি; কিন্তু ফিনিশিংয়ে ব্যর্থ হয়েছি। আমার মনে হয়েছিল, আমরা পরের ধাপে যাব।’

নতুন আঙ্গিকে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই জয়ের পথে মোট ১৩ গোল করেছিল সিটি। বিপরীতে তারা গোল হজম করেছিল কেবল ২টি। পুরোনো ক্লাব বিশ্বকাপে সিটির আগে বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্বে একবার ও বার্সেলোনার হয়ে দুবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পান গার্দিওলা। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্টে কোচ হিসেবে নিজের আগের ১১ ম্যাচের সবকটিতে জিতেছিলেন তিনি, যেখানে গোল হজম করেছিলেন মাত্র ৪টি। সেখানে এবার ১২০ মিনিটেই হজম করতে হলো ৪ গোল। টুর্নামেন্টে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল গার্দিওলার। বিদায় নেওয়ায় এখন বিশ্রাম নিয়ে নতুন মৌসুম শুরুর দিকে মনোযোগ দিতে চান এই স্প্যানিয়ার্ড। ‘আরও এগিয়ে যেতে পারলে ভালো লাগত, প্রতি চার বছরে একবার এখানে থাকা সহজ নয়। দলের সবার মধ্যে এখনও সেই অনুভূতি কাজ করছে যে, দল ভালো করছে। কিন্তু আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। এখন সময় বিশ্রাম নেওয়ার, মনকে সতেজ করার ও পরের মৌসুমের জন্য ফিরে আসার।’

হতাশার মৌসুমে একটি শিরোপা জয়ের শেষ সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল ইন্টার মিলানের। অধিনায়ক লাউতারো মার্তিনেসের হতাশ হওয়ারই কথা। তবে হতাশার চেয়েও তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ ফুটে উঠল বেশি। একহাত নিলেন তিনি সতীর্থদের। দলের প্রতি তার পরিষ্কার বার্তা, লড়াইয়ের মানসিকতা না থাকলে ক্লাব ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো।

ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেসির কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ২-০ গোলে হেরে যায় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার্স আপ দল ইন্টার মিলান। এই মৌসুমে একসময় একটির পর একটি শিরোপার হাতছানি ছিল ইন্টারের সামনে। কিন্তু ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে তারা হেরে যায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের কাছে। লিগে লড়াইয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত রানার্স আপ হয় তারা। পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বিধ্বস্ত হয় পিএসজির কাছে। এবার ক্লাব বিশ্বকাপে দৌড় থেমে গেল কোয়ার্টার-ফাইনালের আগেই। ম্যাচের পর দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্ষোভ উপরে দিলেন মার্তিনেস। ‘আমি লড়াই করতে চাই বড় শিরোপার জন্য। যে কেউ ইন্টারে থাকতে চাইলে লড়াই করতে হবে। যার লড়াইয়ের বা এখানে থাকার ইচ্ছে নেই, সে বিদায় নিতে পারে। আমরা এমন ফুটবলারদের চাই, যারা এখানে থাকতে চায়। মূল্যবান একটি জার্সি গায়ে চাপাচ্ছি আমরা। আমাদের মানসিকতাও থাকতে হবে শীর্ষ মানের। লড়াই করো, অথবা দয়া করে ক্লাব ছেড়ে যাও।’ শূন্য প্রাপ্তির মৌসুম শেষে আগামী মৌসুমে তাকিয়ে দলের ভেতর সত্যিকারের তাড়না দেখতে চান অধিনায়ক। ‘লম্বা ও ক্লান্তিকর একটি সেশন ছিল। আমরা খালি হাতে শেষ করলাম। এটিই সবার প্রতি সাধারণ বার্তা, আমরা কিছুই জিতিনি। মান ধরে রাখতে ও শিরোপার লড়াইয়ে থাকতে, আমাদের ভেতর তাড়না থাকতে হবে-সমর্থকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি, যারা এখানে এসে কাছ থেকে আমাদেরকে সমর্থন করেছেন। আমি দলের অধিনায়ক, আমার চাওয়া, সবকিছুই যেন সেরা অবস্থায় থাকে।’

জনপ্রিয় সংবাদ

সতীর্থদের দল ছাড়ার হুমকি লাউতারোর

আল হিলালের বিপক্ষে হেরে গার্দিওলার আক্ষেপ

আপডেট সময় : ১০:৩৫:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

বল নিয়ন্ত্রণে রাখা, গোলে ও লক্ষ্যে শট- সবকিছুতে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু সেই তুলনায় গোলমুখে যথেষ্ট কার্যকর হতে পারেনি ম্যানচেস্টার সিটি। আল হিলালের বিপক্ষে বিস্ময়কর হারে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর ইংলিশ দলটির কোচ পেপ গার্দিওলার একটাই আফসোস- প্রথমার্ধে সুযোগগুলো যদি কাজে লাগানো যেত!

ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ সময় সকালে শেষ ষোলোর রোমাঞ্চে ঠাসা ম্যাচে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো লড়াইয়ে সিটিকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে বড় চমক দেখায় সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলাল। ম্যাচের শুরুটা অবশ্য ভালো করে আগের সংস্করণে ক্লাব বিশ্বকাপের ২০২৩ সালের চ্যাম্পিয়ন সিটি। নবম মিনিটে বের্নার্দো সিলভার গোলে এগিয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সমতা ফেরান মার্কোস লেওনার্দো। একটু পর ম্যালকমের গোলে এগিয়েও যায় আল হিলাল। তিন মিনিট পরই অবশ্য সিটিকে সমতায় ফেরান আর্লিং হালান্ড। ৯০ মিনিটে আর গোল হয়নি। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো লড়াইয়ে ৯৪ মিনিটে আল হিলাল আবার এগিয়ে যায় কালিদু কুলিবালির গোলে। ১০৪ মিনিটে স্কোরলাইন ৩-৩ করেন ফিল ফোডেন। কিন্তু ১১২ মিনিটে লেওনার্দোর দ্বিতীয় গোলে অবিশ্বাস্য জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আল হিলাল।

গোটা ম্যাচে ৬৯ শতাংশ সময় বল নিজেদের কাছে রেখে গোলের জন্য ৩০টি শট নিয়ে ১৪টি লক্ষ্যে রাখতে পারে সিটি, কিন্তু কাজে লাগাতে পারে স্রেফ ৩টি। আল হিলাল ১৭টি শট নিয়ে ৬টি লক্ষ্যে রাখতে পারে, তাতেই বাজিমাত করে সিমোনে ইনজাগির দল। ম্যাচজুড়ে অসাধারণ পারফরম্যান্সে বারবার সিটিকে হতাশ করেন আল হিলালের গোলকিপার ইয়াসিন বোনু। ম্যাচ শেষে গার্দিওলা অকপটে স্বীকার করে নিলেন, যথেষ্ট কার্যকর হতে পারেনি তাদের আক্রমণভাগ। ‘দিন শেষে আমাদের গোল করতে হবে ও কার্যকর হতে হবে। ওরা প্রথমার্ধে খুব বেশি সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, আমরা করেছি; কিন্তু ফিনিশিংয়ে ব্যর্থ হয়েছি। আমার মনে হয়েছিল, আমরা পরের ধাপে যাব।’

নতুন আঙ্গিকে এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই জয়ের পথে মোট ১৩ গোল করেছিল সিটি। বিপরীতে তারা গোল হজম করেছিল কেবল ২টি। পুরোনো ক্লাব বিশ্বকাপে সিটির আগে বায়ার্ন মিউনিখের দায়িত্বে একবার ও বার্সেলোনার হয়ে দুবার শিরোপা জয়ের স্বাদ পান গার্দিওলা। সব মিলিয়ে এই টুর্নামেন্টে কোচ হিসেবে নিজের আগের ১১ ম্যাচের সবকটিতে জিতেছিলেন তিনি, যেখানে গোল হজম করেছিলেন মাত্র ৪টি। সেখানে এবার ১২০ মিনিটেই হজম করতে হলো ৪ গোল। টুর্নামেন্টে আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য ছিল গার্দিওলার। বিদায় নেওয়ায় এখন বিশ্রাম নিয়ে নতুন মৌসুম শুরুর দিকে মনোযোগ দিতে চান এই স্প্যানিয়ার্ড। ‘আরও এগিয়ে যেতে পারলে ভালো লাগত, প্রতি চার বছরে একবার এখানে থাকা সহজ নয়। দলের সবার মধ্যে এখনও সেই অনুভূতি কাজ করছে যে, দল ভালো করছে। কিন্তু আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। এখন সময় বিশ্রাম নেওয়ার, মনকে সতেজ করার ও পরের মৌসুমের জন্য ফিরে আসার।’

হতাশার মৌসুমে একটি শিরোপা জয়ের শেষ সম্ভাবনাও শেষ হয়ে গেল ইন্টার মিলানের। অধিনায়ক লাউতারো মার্তিনেসের হতাশ হওয়ারই কথা। তবে হতাশার চেয়েও তার প্রতিক্রিয়ায় ক্ষোভ ফুটে উঠল বেশি। একহাত নিলেন তিনি সতীর্থদের। দলের প্রতি তার পরিষ্কার বার্তা, লড়াইয়ের মানসিকতা না থাকলে ক্লাব ছেড়ে চলে যাওয়াই ভালো।

ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লুমিনেসির কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে ২-০ গোলে হেরে যায় উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রানার্স আপ দল ইন্টার মিলান। এই মৌসুমে একসময় একটির পর একটি শিরোপার হাতছানি ছিল ইন্টারের সামনে। কিন্তু ইতালিয়ান কাপের ফাইনালে তারা হেরে যায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের কাছে। লিগে লড়াইয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত রানার্স আপ হয় তারা। পরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে বিধ্বস্ত হয় পিএসজির কাছে। এবার ক্লাব বিশ্বকাপে দৌড় থেমে গেল কোয়ার্টার-ফাইনালের আগেই। ম্যাচের পর দলের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্ষোভ উপরে দিলেন মার্তিনেস। ‘আমি লড়াই করতে চাই বড় শিরোপার জন্য। যে কেউ ইন্টারে থাকতে চাইলে লড়াই করতে হবে। যার লড়াইয়ের বা এখানে থাকার ইচ্ছে নেই, সে বিদায় নিতে পারে। আমরা এমন ফুটবলারদের চাই, যারা এখানে থাকতে চায়। মূল্যবান একটি জার্সি গায়ে চাপাচ্ছি আমরা। আমাদের মানসিকতাও থাকতে হবে শীর্ষ মানের। লড়াই করো, অথবা দয়া করে ক্লাব ছেড়ে যাও।’ শূন্য প্রাপ্তির মৌসুম শেষে আগামী মৌসুমে তাকিয়ে দলের ভেতর সত্যিকারের তাড়না দেখতে চান অধিনায়ক। ‘লম্বা ও ক্লান্তিকর একটি সেশন ছিল। আমরা খালি হাতে শেষ করলাম। এটিই সবার প্রতি সাধারণ বার্তা, আমরা কিছুই জিতিনি। মান ধরে রাখতে ও শিরোপার লড়াইয়ে থাকতে, আমাদের ভেতর তাড়না থাকতে হবে-সমর্থকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি, যারা এখানে এসে কাছ থেকে আমাদেরকে সমর্থন করেছেন। আমি দলের অধিনায়ক, আমার চাওয়া, সবকিছুই যেন সেরা অবস্থায় থাকে।’