০৯:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ

পিএসজি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড রিয়াল

পিএসজি ৪ : ০ রিয়াল মাদ্রিদ

দারুণ ছন্দে ছুটে চলা লুইস এনরিকের দলের কাছে পাত্তাই পেল না ইউরোপের সফলতম দলটি। রিয়াল মাদ্রিদকে উড়িয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে পিএসজি। ষষ্ঠ মিনিটেই জালে বল পাঠিয়ে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন ফাবিয়ান রুইস, পরে আরেকটি গোল করেন তিনি।

ক্লাব বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে পিএসজির বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার পর নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিলেন শাবি আলোন্সো। স্বাভাবিকভাবে এই হার খুব পোড়াচ্ছে তাকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ প্রত্যয়ী কণ্ঠে বললেন, আগামী মৌসুমে একেবারে নতুন করে শুরু করবে তার দল। শুরুর এই ধাক্কাটা আর কাটাতে পারেনি রিয়াল। পিএসজি তাদের ৪-০ গোলে হারিয়ে পৌঁছাল ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে। শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসি। পিএসজির হয়ে জোড়া গোল করেছেন ফাবিয়ান রুইস। একটি করে গোল করেছেন উসমান দেম্বেলে ও গনসালো রামোস লাল কার্ডের জন্য হাউসেন আর চোটের জন্য ছিলেন না ট্রেড আলেকজান্ডার-আরনল্ড। তাতেই এলোমেলো হয়ে যায় রিয়ালের রক্ষণ। কোচ জাবি আলোনসো আক্রমণে একসঙ্গে খেলান এমবাপ্পে-ভিনিসিয়ুস ও গনসালো গার্সিয়াকে। এটা কাজে তো আসেইনি, উল্টো এভাবে একাদশ গড়ার ট্যাকটিক্সকে স্প্যনিশ দৈনিক ‘এএস’ বলেছে ‘একসঙ্গে আত্মহত্যা’ করা! যানজটের জন্য দুই দল মাঠে এসেছিল ২০ মিনিট দেরিতে। তাই খেলা শুরু হয় ১০ মিনিট পর। প্রথম ৯ মিনিটে রিয়াল ২ গোল হজম করলে গ্যালারিতে নেমে আসে নীরবতা। কারণ বেশি সমর্থন ছিল রিয়ালেরই। প্রথম চার মিনিটেই দুটি দুর্দান্ত সেভ করেন থিবো কোর্তোয়া। কিন্তু পরের পাঁচ মিনিটে দুই গোল করে এগিয়ে যায় পিএসজি। ষষ্ঠ মিনিটে গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে দেন ফাবিয়ান রুইস।

সেন্টার ব্যাক রাউল আসেন্সিওর ভুলে বল কেড়ে নিয়ে এগিয়ে যান উসমান দেম্বেল। কোর্তোয়া তাকে কড়া ট্যাকল করলেও বলের নাগাল পাননি। রুইস খুঁজে নেন ফাঁকা জাল। নবম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দেম্বেলে। এবার নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে শট নিতে পারেননি রুডিগার। পেছন থেকে ছুটে গিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবধান ২-০ করেন দেম্বেলে। ২৪তম মিনিটে রিয়ালকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন রুইস। আশরাফ হাকিমির দারুণ পাস পেয়ে ফেদে ভালভের্দের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

বিরতির পর রিয়ালের খেলার কিছুটা উন্নতি হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না সেটা। ৬৮ শতাংশ বলের দখল রেখে পোস্টে ১৭টি শট নিয়ে পিএসজি লক্ষ্যে রাখে ৭টি। সেখানে পোস্টে ১১টি শট নিয়ে কেবল ২টি লক্ষ্যে রেখেছিল রিয়াল। পিএসজি ছাড়ার পর প্রথমবার নিজের সাবেক ক্লাবের মুখোমুখি হয়ে নিজের ছায়া ছিলেন এমবাপ্পে। নিস্প্রভ ছিলেন ভিনিসিয়ুসও।

দিজিরে দুয়ে বল জালে জড়ালেও অফসাইডের জন্য গোল পায়নি পিএসজি। জুড বেলিংহামের জায়গায় লুকা মদ্রিচকে নামান আলনসো। রিয়ালের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলা মদ্রিচও গড়তে পারেননি ব্যবধান। রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেন গনসালো রামোস। গোল উদযাপনে তিনি স্মরণ করেন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো পর্তুগালের সতীর্থ দিয়োগো জোতাকে।

ম্যাচের পর নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন আলোন্সো। ‘আমরা দুই গোল পিছিয়ে ছিলাম এবং নিজেদের অবস্থান খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বেদনাদায়ক পরাজয় এটা। আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, আমরা মান অনুযায়ী খেলতে পারিনি।’ তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কোনো পরিবর্তন আনেননি আলোন্সো। এই অর্ধের মাঝামাঝি কিছু পরিবর্তন আনেন তিনি।

‘আমাদের কিছু ভুল ছিল। কখনও কখনও নিজেদের ভুলগুলো দেখা ভালো, এতে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেওয়া যায়।’ ভীষণ হতাশার মৌসুমে ট্রফি শূন্যই থাকল রেয়াল। এই ম্যাচ দিয়ে রেয়াল মাদ্রিদ অধ্যায় শেষ হলো লুকা মদ্রিচ ও লুকাস ভাসকেসের। আরও নতুন খেলোয়াড় দলে টানার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়ে দলটির দায়িত্ব নেওয়া আলোন্সো।

‘বিরতির পর তরতাজা হয়ে আমরা শুরু করব। আমরা এমন একটি দল তৈরি করতে চাই, যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলবে, সবাই একসঙ্গে খেলবে আমরা এক ম্যাচ দূরে ছিলাম (ফাইনাল থেকে), এটা বেদনাদায়ক। দেখা যাক সামনে কী হয়।’

রিয়ালে এসে ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন মদ্রিচ। চারটি ঘরোয়া লিগের পাশাপাশি স্পেনের প্রায় সব ট্রফিই এক বার করে হাতে তুলেছেন। ট্রফির নিরিখে রিয়ালের সফলতম ফুটবলার তিনিই। ম্যাচের পর রিয়াল কোচ তথা মদ্রিচের প্রাক্তন সতীর্থ আলোন্সো বলেছেন, ‘খুব দুঃখজনক ভাবে সব শেষ হল। কিন্তু মদ্রিচ ফুটবলের কিংবদন্তি। রিয়াল মাদ্রিদ সারাজীবন ওকে মনে রাখবে।’ রিয়ালের অধ্যায় সমাপ্তির কথা জানিয়ে মদ্রিচ গণমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘মুহূর্তটা এসেই গেল। কোনও দিন চাইনি এই মুহূর্তটা আসুক। তবে এটাই ফুটবল। জীবনে সব কিছুর শুরু এবং শেষ আছে। ২০১২ সালে বিশ্বের সেরা দলের জার্সি পরার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল। দারুণ কিছু করতে চেয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি বাকি বছরগুলো এমন যাবে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলে ফুটবলার এবং মানুষ হিসাবে আমার জীবন বদলে গিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।’

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ

পিএসজি ঝড়ে লণ্ডভণ্ড রিয়াল

আপডেট সময় : ১২:৩৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

ক্লাব বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে পিএসজির বিপক্ষে বিধ্বস্ত হওয়ার পর নিজেদের ব্যর্থতা মেনে নিলেন শাবি আলোন্সো। স্বাভাবিকভাবে এই হার খুব পোড়াচ্ছে তাকে। তবে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ প্রত্যয়ী কণ্ঠে বললেন, আগামী মৌসুমে একেবারে নতুন করে শুরু করবে তার দল। শুরুর এই ধাক্কাটা আর কাটাতে পারেনি রিয়াল। পিএসজি তাদের ৪-০ গোলে হারিয়ে পৌঁছাল ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে। শিরোপার লড়াইয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী চেলসি। পিএসজির হয়ে জোড়া গোল করেছেন ফাবিয়ান রুইস। একটি করে গোল করেছেন উসমান দেম্বেলে ও গনসালো রামোস লাল কার্ডের জন্য হাউসেন আর চোটের জন্য ছিলেন না ট্রেড আলেকজান্ডার-আরনল্ড। তাতেই এলোমেলো হয়ে যায় রিয়ালের রক্ষণ। কোচ জাবি আলোনসো আক্রমণে একসঙ্গে খেলান এমবাপ্পে-ভিনিসিয়ুস ও গনসালো গার্সিয়াকে। এটা কাজে তো আসেইনি, উল্টো এভাবে একাদশ গড়ার ট্যাকটিক্সকে স্প্যনিশ দৈনিক ‘এএস’ বলেছে ‘একসঙ্গে আত্মহত্যা’ করা! যানজটের জন্য দুই দল মাঠে এসেছিল ২০ মিনিট দেরিতে। তাই খেলা শুরু হয় ১০ মিনিট পর। প্রথম ৯ মিনিটে রিয়াল ২ গোল হজম করলে গ্যালারিতে নেমে আসে নীরবতা। কারণ বেশি সমর্থন ছিল রিয়ালেরই। প্রথম চার মিনিটেই দুটি দুর্দান্ত সেভ করেন থিবো কোর্তোয়া। কিন্তু পরের পাঁচ মিনিটে দুই গোল করে এগিয়ে যায় পিএসজি। ষষ্ঠ মিনিটে গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে দেন ফাবিয়ান রুইস।

সেন্টার ব্যাক রাউল আসেন্সিওর ভুলে বল কেড়ে নিয়ে এগিয়ে যান উসমান দেম্বেল। কোর্তোয়া তাকে কড়া ট্যাকল করলেও বলের নাগাল পাননি। রুইস খুঁজে নেন ফাঁকা জাল। নবম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দেম্বেলে। এবার নিজেদের অর্ধে বল পেয়ে শট নিতে পারেননি রুডিগার। পেছন থেকে ছুটে গিয়ে বল নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ব্যবধান ২-০ করেন দেম্বেলে। ২৪তম মিনিটে রিয়ালকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন রুইস। আশরাফ হাকিমির দারুণ পাস পেয়ে ফেদে ভালভের্দের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন এই স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

বিরতির পর রিয়ালের খেলার কিছুটা উন্নতি হলেও ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না সেটা। ৬৮ শতাংশ বলের দখল রেখে পোস্টে ১৭টি শট নিয়ে পিএসজি লক্ষ্যে রাখে ৭টি। সেখানে পোস্টে ১১টি শট নিয়ে কেবল ২টি লক্ষ্যে রেখেছিল রিয়াল। পিএসজি ছাড়ার পর প্রথমবার নিজের সাবেক ক্লাবের মুখোমুখি হয়ে নিজের ছায়া ছিলেন এমবাপ্পে। নিস্প্রভ ছিলেন ভিনিসিয়ুসও।

দিজিরে দুয়ে বল জালে জড়ালেও অফসাইডের জন্য গোল পায়নি পিএসজি। জুড বেলিংহামের জায়গায় লুকা মদ্রিচকে নামান আলনসো। রিয়ালের জার্সিতে শেষ ম্যাচ খেলা মদ্রিচও গড়তে পারেননি ব্যবধান। রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকেন গনসালো রামোস। গোল উদযাপনে তিনি স্মরণ করেন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো পর্তুগালের সতীর্থ দিয়োগো জোতাকে।

ম্যাচের পর নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে নেন আলোন্সো। ‘আমরা দুই গোল পিছিয়ে ছিলাম এবং নিজেদের অবস্থান খুঁজে পাচ্ছিলাম না। বেদনাদায়ক পরাজয় এটা। আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, আমরা মান অনুযায়ী খেলতে পারিনি।’ তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কোনো পরিবর্তন আনেননি আলোন্সো। এই অর্ধের মাঝামাঝি কিছু পরিবর্তন আনেন তিনি।

‘আমাদের কিছু ভুল ছিল। কখনও কখনও নিজেদের ভুলগুলো দেখা ভালো, এতে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নেওয়া যায়।’ ভীষণ হতাশার মৌসুমে ট্রফি শূন্যই থাকল রেয়াল। এই ম্যাচ দিয়ে রেয়াল মাদ্রিদ অধ্যায় শেষ হলো লুকা মদ্রিচ ও লুকাস ভাসকেসের। আরও নতুন খেলোয়াড় দলে টানার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না ক্লাব বিশ্বকাপ দিয়ে দলটির দায়িত্ব নেওয়া আলোন্সো।

‘বিরতির পর তরতাজা হয়ে আমরা শুরু করব। আমরা এমন একটি দল তৈরি করতে চাই, যারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলবে, সবাই একসঙ্গে খেলবে আমরা এক ম্যাচ দূরে ছিলাম (ফাইনাল থেকে), এটা বেদনাদায়ক। দেখা যাক সামনে কী হয়।’

রিয়ালে এসে ছয়টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন মদ্রিচ। চারটি ঘরোয়া লিগের পাশাপাশি স্পেনের প্রায় সব ট্রফিই এক বার করে হাতে তুলেছেন। ট্রফির নিরিখে রিয়ালের সফলতম ফুটবলার তিনিই। ম্যাচের পর রিয়াল কোচ তথা মদ্রিচের প্রাক্তন সতীর্থ আলোন্সো বলেছেন, ‘খুব দুঃখজনক ভাবে সব শেষ হল। কিন্তু মদ্রিচ ফুটবলের কিংবদন্তি। রিয়াল মাদ্রিদ সারাজীবন ওকে মনে রাখবে।’ রিয়ালের অধ্যায় সমাপ্তির কথা জানিয়ে মদ্রিচ গণমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘মুহূর্তটা এসেই গেল। কোনও দিন চাইনি এই মুহূর্তটা আসুক। তবে এটাই ফুটবল। জীবনে সব কিছুর শুরু এবং শেষ আছে। ২০১২ সালে বিশ্বের সেরা দলের জার্সি পরার স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল। দারুণ কিছু করতে চেয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি বাকি বছরগুলো এমন যাবে। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলে ফুটবলার এবং মানুষ হিসাবে আমার জীবন বদলে গিয়েছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।’