০১:২৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প

গগনবিদারী কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি, নিহত বেড়ে ৬২২

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে রাতের নিঃশব্দ অন্ধকার চিরে নেমে এসেছিল এক ভয়াবহ দুর্যোগ। রোববার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আঘাত হানে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প, যা মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে বহু গ্রাম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬২২ জন, আহত হয়েছেন আরও ১০০০ জনের বেশি মানুষ।

 

মৃত্যুর এই মিছিল আর আহতদের আর্তনাদে আজ আফগানিস্তানের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। চারদিকে শুধু ধ্বংস, কান্না আর নিস্তব্ধতা। ভোরের আলো ফোটার আগেই কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলার মাজার উপত্যকা যেন পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। পাহাড়ঘেরা এই অঞ্চলের বহু ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। ঘুমন্ত শিশু, নারী ও বৃদ্ধ—সবাই চিরনিদ্রায় চলে যান এক নির্মম আকস্মিকতায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার। এর পরপরই আঘাত হানে আরও অন্তত তিনটি পরাঘাত, যার মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২-এর মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

 

আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক আরটিএ জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকে আছেন। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মীরা প্রতিটি ধসে পড়া ঘরের নিচে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছেন—আছে কি কোনো জীবনের নিঃশ্বাস?

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি প্রদেশে প্রাণহানি ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় তিনি বলেন, “জীবন রক্ষায় সব ধরনের সম্পদ কাজে লাগানো হচ্ছে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কেন্দ্রীয় ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলো থেকে সহায়ক দল পাঠানো হয়েছে।”

 

তবে প্রতিকূল ভৌগোলিক অবস্থান, সরু পাহাড়ি পথ এবং মৌলিক অবকাঠামোর অভাবে দ্রুত উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ একত্রে হাতে হাতে কাজ করছেন, মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি জীবিত কাউকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষীণ আশা নিয়ে।

এই ঘটনায় গোটা আফগানিস্তানে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একটি রাত বদলে দিয়েছে হাজারো মানুষের জীবনের গতিপথ। বেঁচে যাওয়াদের চোখে এখন শুধুই শূন্যতা, হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

এই মুহূর্তে, আফগানিস্তান শুধু মানবিক সহানুভূতির নয়, বিশ্বসম্প্রদায়ের কার্যকর সহায়তার অপেক্ষায়।

এমআর/সবা

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে তারেক রহমান

আফগানিস্তানে ভয়াবহ ভূমিকম্প

গগনবিদারী কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি, নিহত বেড়ে ৬২২

আপডেট সময় : ১২:৫৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে রাতের নিঃশব্দ অন্ধকার চিরে নেমে এসেছিল এক ভয়াবহ দুর্যোগ। রোববার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আঘাত হানে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প, যা মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে বহু গ্রাম। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬২২ জন, আহত হয়েছেন আরও ১০০০ জনের বেশি মানুষ।

 

মৃত্যুর এই মিছিল আর আহতদের আর্তনাদে আজ আফগানিস্তানের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। চারদিকে শুধু ধ্বংস, কান্না আর নিস্তব্ধতা। ভোরের আলো ফোটার আগেই কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলার মাজার উপত্যকা যেন পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়। পাহাড়ঘেরা এই অঞ্চলের বহু ঘরবাড়ি ধসে পড়ে। ঘুমন্ত শিশু, নারী ও বৃদ্ধ—সবাই চিরনিদ্রায় চলে যান এক নির্মম আকস্মিকতায়।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার। এর পরপরই আঘাত হানে আরও অন্তত তিনটি পরাঘাত, যার মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২-এর মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

 

আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক আরটিএ জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকে আছেন। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত কর্মীরা প্রতিটি ধসে পড়া ঘরের নিচে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছেন—আছে কি কোনো জীবনের নিঃশ্বাস?

তালেবান সরকারের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি প্রদেশে প্রাণহানি ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বার্তায় তিনি বলেন, “জীবন রক্ষায় সব ধরনের সম্পদ কাজে লাগানো হচ্ছে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কেন্দ্রীয় ও পার্শ্ববর্তী প্রদেশগুলো থেকে সহায়ক দল পাঠানো হয়েছে।”

 

তবে প্রতিকূল ভৌগোলিক অবস্থান, সরু পাহাড়ি পথ এবং মৌলিক অবকাঠামোর অভাবে দ্রুত উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ একত্রে হাতে হাতে কাজ করছেন, মৃতদেহ উদ্ধারের পাশাপাশি জীবিত কাউকে খুঁজে পাওয়ার ক্ষীণ আশা নিয়ে।

এই ঘটনায় গোটা আফগানিস্তানে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একটি রাত বদলে দিয়েছে হাজারো মানুষের জীবনের গতিপথ। বেঁচে যাওয়াদের চোখে এখন শুধুই শূন্যতা, হারিয়ে যাওয়া প্রিয়জন আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা।

এই মুহূর্তে, আফগানিস্তান শুধু মানবিক সহানুভূতির নয়, বিশ্বসম্প্রদায়ের কার্যকর সহায়তার অপেক্ষায়।

এমআর/সবা