০৩:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অর্থনীতিতে নতুন ধাক্কা ফের বাড়ল মূল্যস্ফীতি

  • নভেম্বরে বেড়ে ৮.২৯ শতাংশ
  • খাদ্যপণ্যে গ্রামীণ মূল্যস্ফীতি ৭.২৭ শতাংশ
  • শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি ৮.৩৯ শতাংশ
  • কৃষি খাতে মজুরি বৃদ্ধি ৮.১৪ শতাংশ

মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিছু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায়। সিন্ডিকেট কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরাসরি কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে বাজারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে- এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, সভাপতি, ক্যাব

 

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.২৯ শতাংশে। আগের মাস অক্টোবর ২০২৫-এ এই হার ছিল ৮.১৭ শতাংশ। তবে এক বছর আগের নভেম্বরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কমেছে; তখন এটি ছিল ১১.৩৮ শতাংশ।
নভেম্বর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭.৩৬ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৯.০৮ শতাংশ। অক্টোবর মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৭.০৮ শতাংশ ও ৯.১৩ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.২৬ শতাংশ, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮.১৬ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে গ্রামীণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭.২৭ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে ৯.২৪ শতাংশ। শহর এলাকায় একই সময়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৩৯ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৮.৩৩ শতাংশ। শহরে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ৭.৬১ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৮.৯১ শতাংশে পৌঁছেছে। গত এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে মুভিং অ্যাভারেজ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৯৬ শতাংশ। এর আগের একই সময়ে (ডিসেম্বর ২০২৩-নভেম্বর ২০২৪) এই হার ছিল বেশি, ১০.২২ শতাংশ।
বিবিএস জানিয়েছে, দেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাট-বাজার থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে নভেম্বর ২০২৫ মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রস্তুত করা হয়েছে। নভেম্বর ২০২৫ মাসে দেশের জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মজুরি বৃদ্ধির হার (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) হয়েছে ৮.০৪ শতাংশ। অক্টোবর ২০২৫ এ এই হার ছিল ৮.০১ শতাংশ, আর নভেম্বর ২০২৪ এ ছিল ৮.১০ শতাংশ। খাতভিত্তিক হিসাবে কৃষি খাতে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে ৮.১৪ শতাংশ, শিল্প খাতে ৭.৮৬ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৮.২২ শতাংশ। অক্টোবর মাসে এই তিন খাতে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৮.১৭, ৭.৭৭ ও ৮.১৯ শতাংশ। বিবিএসের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইং দেশের সব ৬৪ জেলা থেকে সংগৃহীত মজুরি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ২০২১-২২ ভিত্তি সূচক (১০০) অনুযায়ী এই মজুরি হার সূচক নির্ধারণ করেছে। ফলে নভেম্বর ২০২৫ মাসে জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হার পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮.০৪ শতাংশ নিরূপিত হয়েছে।
আবার মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সামান্য ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে তা অসহনীয় নয়। বর্ষার কারণে গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকে। সিন্ডিকেট বা সরবরাহ চেইনে হাতবদল কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরাসরি কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে বাজারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে সরবরাহ চেইনে এক হাত থেকে অন্য হাতে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় দাম বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা আছে, তা রোধ করা সম্ভব হবে। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর এবং এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। টানা তিন মাস কমার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ফের বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। এপ্রিল থেকে আবারও কমার ধারায় ফেরে মূল্যস্ফীতি। জুলাইয়ে তা খানিকটা বাড়ার পর আগস্টে তা আবারও কমেছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসে সে ধারায় আবার ছেদ পড়ল। বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত বলছে, সেপ্টেম্বরে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল খাদ্যপণ্যের চেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪০ শতাংশে উঠেছে। আগের মাস আগস্টে এ হার ছিল ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। অবশ্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই খাতেরই মূল্যস্ফীতি আরও বেশি ছিল। তখন গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।

জনপ্রিয় সংবাদ

অর্থনীতিতে নতুন ধাক্কা ফের বাড়ল মূল্যস্ফীতি

আপডেট সময় : ০৭:১৯:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • নভেম্বরে বেড়ে ৮.২৯ শতাংশ
  • খাদ্যপণ্যে গ্রামীণ মূল্যস্ফীতি ৭.২৭ শতাংশ
  • শহর এলাকায় মূল্যস্ফীতি ৮.৩৯ শতাংশ
  • কৃষি খাতে মজুরি বৃদ্ধি ৮.১৪ শতাংশ

মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। কিছু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায়। সিন্ডিকেট কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরাসরি কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে বাজারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে- এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, সভাপতি, ক্যাব

 

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি সামান্য বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.২৯ শতাংশে। আগের মাস অক্টোবর ২০২৫-এ এই হার ছিল ৮.১৭ শতাংশ। তবে এক বছর আগের নভেম্বরের তুলনায় মূল্যস্ফীতি কমেছে; তখন এটি ছিল ১১.৩৮ শতাংশ।
নভেম্বর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭.৩৬ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৯.০৮ শতাংশ। অক্টোবর মাসে এই হার ছিল যথাক্রমে ৭.০৮ শতাংশ ও ৯.১৩ শতাংশ। গ্রামীণ এলাকায় চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.২৬ শতাংশ, যা অক্টোবর মাসে ছিল ৮.১৬ শতাংশ। খাদ্যপণ্যে গ্রামীণ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭.২৭ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত পণ্যে ৯.২৪ শতাংশ। শহর এলাকায় একই সময়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৩৯ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৮.৩৩ শতাংশ। শহরে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ৭.৬১ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে ৮.৯১ শতাংশে পৌঁছেছে। গত এক বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে মুভিং অ্যাভারেজ মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৯৬ শতাংশ। এর আগের একই সময়ে (ডিসেম্বর ২০২৩-নভেম্বর ২০২৪) এই হার ছিল বেশি, ১০.২২ শতাংশ।
বিবিএস জানিয়েছে, দেশের ৬৪টি জেলার ১৫৪টি হাট-বাজার থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে নভেম্বর ২০২৫ মাসের ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রস্তুত করা হয়েছে। নভেম্বর ২০২৫ মাসে দেশের জাতীয় পর্যায়ে সাধারণ মজুরি বৃদ্ধির হার (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) হয়েছে ৮.০৪ শতাংশ। অক্টোবর ২০২৫ এ এই হার ছিল ৮.০১ শতাংশ, আর নভেম্বর ২০২৪ এ ছিল ৮.১০ শতাংশ। খাতভিত্তিক হিসাবে কৃষি খাতে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে ৮.১৪ শতাংশ, শিল্প খাতে ৭.৮৬ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৮.২২ শতাংশ। অক্টোবর মাসে এই তিন খাতে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ৮.১৭, ৭.৭৭ ও ৮.১৯ শতাংশ। বিবিএসের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং উইং দেশের সব ৬৪ জেলা থেকে সংগৃহীত মজুরি সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ২০২১-২২ ভিত্তি সূচক (১০০) অনুযায়ী এই মজুরি হার সূচক নির্ধারণ করেছে। ফলে নভেম্বর ২০২৫ মাসে জাতীয় পর্যায়ে মজুরি বৃদ্ধির হার পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮.০৪ শতাংশ নিরূপিত হয়েছে।
আবার মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, সামান্য ব্যবধানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তবে তা অসহনীয় নয়। বর্ষার কারণে গত মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এ ছাড়া কিছু ব্যবসায়ী পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার অপেক্ষায় থাকে। সিন্ডিকেট বা সরবরাহ চেইনে হাতবদল কমাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সরাসরি কৃষকের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে বাজারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে সরবরাহ চেইনে এক হাত থেকে অন্য হাতে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় দাম বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা আছে, তা রোধ করা সম্ভব হবে। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত খাতে সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আগের মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর এবং এ বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। টানা তিন মাস কমার পর চলতি বছরের মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ফের বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি। এপ্রিল থেকে আবারও কমার ধারায় ফেরে মূল্যস্ফীতি। জুলাইয়ে তা খানিকটা বাড়ার পর আগস্টে তা আবারও কমেছিল। কিন্তু সেপ্টেম্বরে এসে সে ধারায় আবার ছেদ পড়ল। বিবিএসের তথ্য-উপাত্ত বলছে, সেপ্টেম্বরে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, যা আগের মাস আগস্টে ছিল ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল খাদ্যপণ্যের চেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বরে গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৪০ শতাংশে উঠেছে। আগের মাস আগস্টে এ হার ছিল ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। অবশ্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে দুই খাতেরই মূল্যস্ফীতি আরও বেশি ছিল। তখন গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও খাদ্যবহির্ভূত খাতে ছিল ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ।